সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে ৫.৫ কিলোমিটার, এক্সক্লুসিভ জোনে থাকবে প্রবেশ মূল্য
ভূঁইয়া নজরুল »
উন্মুক্ত সৈকত। যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা পড়ে আছে। বিক্ষিপ্তভাবে গড়ে উঠেছে হকার ও দোকান। সৈকতে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের গাড়ি পার্ক করার কোনো জায়গা নেই। সৈকতে নামা দর্শনার্থীদের জন্য নেই কোনো চেঞ্জ রুম। সৈকত এলাকায় নেই হোটেল ও মোটেল। রাতের সৈকত দেখার জন্য কারো কোনো সুযোগ নেই।
এতোসব ‘নেই’ দিয়ে কি একটি পর্যটন স্পট বিকশিত হয়? নিশ্চয়ই উত্তর হবে ‘না’। এই ‘না’ থেকে মুক্ত করে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় একটি আধুনিক সমুদ্র সৈকত ও পর্যটন স্পট গড়ে তোলার প্রকল্প নিয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)।
আধুনিক এই পর্যটন স্পট নিয়ে ইতোমধ্যে বিতর্ক শুরু হয়ে গেছে। প্রাকৃতিক এই সমুদ্র সৈকতে প্রবেশ মূল্য নির্ধারণের কারণে। কিন্তু প্রবেশ মূল্যের কথাটি ভুল বলে আখ্যায়িত করেছেন সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস। তিনি বলেন, ‘একটি উন্মুক্ত সৈকতকে প্রবেশমূল্য দিয়ে সাধারণের প্রবেশ বন্ধ করতে পারি না। পতেঙ্গা নেভাল এর ওয়েস্ট পয়েন্ট থেকে ইপিজেডের দিকে সাত কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকা নিয়ে একটি প্রকল্প নিয়েছি। সেই প্রকল্পে দুটি জোন থাকবে। একটি অংশ হলো এক্সক্লুসিভ জোন ও অপরটি হলো উন্মুক্ত জোন। এক্সক্লুসিভ জোনকে দুটি ভাগে (এ ও বি) ভাগ করা হয়েছে। এই এক্সক্লুসিভ জোনে প্রবেশ মূল্য রাখা হয়েছে।’
কোথায় কোন জোন?
পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত থেকে ইপিজেডের দিকে আসতে প্রথম ৭০০ মিটার রাখা হয়েছে এক্সক্লুসিভ জোন-‘এ’। পরবর্তী পাঁচ দশমিক পাঁচ কিলোমিটার থাকবে উন্মুক্ত। পাঁচ দশমিক পাঁচ কিলোমিটার প্রান্ত যেখানে শেষ হবে (খেজুর তলা) সেখান থেকে মাইট্টা খাল পর্যন্ত ৮০০ মিটার অংশকে এক্সক্লুসিভ জোন-‘বি’ রাখা হয়েছে। তাহলে দুই এক্সক্লুসিভ জোন মিলে ১৫০০ মিটার ( দেড় কিলোমিটার) এলাকায় থাকছে প্রবেশ মূল্য।
প্রবেশ মূল্য থাকছে কোথায়?
এক্সক্লুসিভ জোনে প্রবেশ মূল্য রাখা হয়েছে জানিয়ে সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ‘এক্সক্লুসিভ জোনসহ পুরো সাত কিলোমিটার সমুদ্র এলাকায় বিচ রক্ষণাবেক্ষণ, বিদ্যুৎ বিল, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করবে একটি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠান জোন-এ ও জোন-বি অংশে বিভিন্ন ধরনের রাইড, ক্যাবল কার, টয় ট্রেনসহ পর্যটনবান্ধব বিভিন্ন রাইড সংযুক্ত করবে। এই এক্সক্লুসিভ জোনে প্রবেশের জন্য একটি প্রবেশ মূল্য নির্ধারণ করা থাকবে।’
এই টাকা দিয়ে কি করা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যে বিনিয়োগকারী এখানে বিনিয়োগ করবে তার বিনিয়োগের অর্থ উঠিয়ে আনতে হবে। একইসাথে সাত কিলোমিটার এলাকা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অর্থ খরচ হবে। এসব অর্থ উঠে আসবে প্রবেশ মূল্য থেকে।
তাহলে কি প্রবেশ মূল্য ছাড়া কেউ সৈকতে যেতে পারবে না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অবশ্যই পারবে। দুই এক্সক্লুসিভ জোনের মধ্যবর্তী পাঁচ দশমিক পাঁচ কিলোমিটার এলাকা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এখানে প্রবেশ করতে কোনো টাকা লাগবে না। একইসাথে বিচে নামার জন্য একাধিক পৃথক সিঁড়িও থাকবে এই জোনের মধ্যে। তবে কোনো রাইড থাকবে না।’
তাহলে এক্সক্লুসিভ জোন দুটি পৃথক পৃথক স্থানে। এক্ষেত্রে কি দুই দফায় টিকেট নিতে হবে? এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘জোন-এ ও জোন-বি দুই প্রান্ত দিয়েই প্রবেশের সুযোগ থাকবে। তবে টিকেট সংগ্রহ করবে যেকোনো এক প্রান্ত দিয়ে। আর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে যাওয়ার জন্য ক্যাবল কার বা টয় ট্রেন সার্ভিস থাকবে।’
থাকবে শপিংমল ও পার্কিং জোন
পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এলাকা টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও আউটার রিং রোডের সংযোগ স্থলে। তাই এখানে প্রতিদিন হাজারো মানুষের সমাগম হবে। এসব দর্শনার্থীদের শপিংয়ের জন্য একটি শপিংমল করা হবে। সেখানে বর্তমান দোকানদারগুলোকে পুনর্বাসন করা হবে। এছাড়া চেঞ্জ রুম, ওয়াশরুম এবং পার্কিং স্পেস রাখা হবে। এবিষয়ে সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ‘প্রায় ২০ হাজার গাড়ির পার্কিং করার ব্যবস্থা করছি। এতে পুরো এলাকা যানজট থেকে মুক্ত থাকবে।’
পতেঙ্গা থেকে ইপিজেডের আগ পর্যন্ত পর্যটনভিত্তিক স্থাপনা
শুধু সৈকত আধুনিকায়ন করলে হবে না সেই সাথে পুরো এলাকা পর্যটনবান্ধব হতে হবে উল্লেখ করে সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ‘বিচ উন্নয়ন প্রকল্প নেয়ার পাশাপাশি কান্ট্রি সাইডে পর্যটনভিত্তিক স্থাপনা (হোটেল, মোটেল, শপিংমল প্রভৃতি) নির্মাণে অনুমোদন দিবো। এতে পুরো এলাকাটি একটি পর্যটন স্পট হিসেবে বিকশিত হবে।’
সিডিএ’র এই পরিকল্পনার সাথে সহমত পোষণ করে রিয়েল এস্টেট কোম্পানি ফিনলে প্রপার্টিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম আই খসরু বলেন, বিশ্বের সব দেশে সমুদ্রের পাড়ে পর্যটনভিত্তিক স্থাপনা গড়ে উঠে। বঙ্গোপসাগরের তীরে আউটার রিং রোডের পাশে এ ধরনের স্থাপনার অনুমোদন দেয়া হলে পর্যটন শিল্পের প্রসার ঘটবে।
তবে কান্ট্রি সাইডে পর্যটনভিত্তিক স্থাপনা নির্মাণে সমন্বিত পরিকল্পনা থাকতে হবে বলে উল্লেখ করেছেন চিটাগাং চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক ও সিপিডিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী ইফতেখার হোসেন বলেন, ‘পর্যটনভিত্তিক স্থাপনা নির্মাণসহ পুরো এলাকা নিয়ে প্ল্যান করতে হবে। আর তবেই পরিকল্পিত উন্নয়ন করা সম্ভব হবে।’
উল্লেখ্য, আউটার রিং রোডের পতেঙ্গার নেভাল থেকে সাগরিকা পর্যন্ত প্রায় ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ পুরো এলাকাটি হবে এক বিশাল পর্যটন স্পট। এরমধ্যে সাত কিলোমিটার এলাকা নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েছে সিডিএ। ইতিমধ্যে এই অংশে গ্যালারি ও ওয়াকওয়ে করে দেয়ার পর দর্শনার্থীদের ভিড় বেড়েছে।