নিজস্ব প্রতিবেদক »
নগরের পতেঙ্গা থেকে আনোয়ারা প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরত্ব। এ দূরত্বে মাত্র তিন মিনিটে পৌঁছানো সম্ভব। এ দূরত্ব কমিয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। টানেল উদ্বোধন উপলক্ষে প্রস্তুতির অংশ হিসাবে গতকাল বৃহস্পতিবার আনুমানিক সকাল ১১টায় গাড়িবহর নিয়ে পরিদর্শনে যায় প্রধানমন্ত্রী দপ্তরের প্রশাসন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত এই টানেলটি উদ্বোধন হবে আগামীকাল ২৮ অক্টোবর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওইদিন সকাল ১০টায় পতেঙ্গা প্রান্তে কাঁচে খোদাই করা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল উদ্বোধন করে টানেলে প্রবেশ করবেন। টানেল পরিদর্শন ও উদ্বোধন শেষে আনোয়ার প্রান্তে আরেকটি বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালের মোড়ক উন্মোচন করে কোরিয়ান ইপিজেডের মাঠে অনুষ্ঠেয় জনসভায় যোগ দেবেন।
বঙ্গোপসাগর ঘেঁষে বঙ্গবন্ধু টানেলের চট্টগ্রাম নগরের প্রান্ত থেকে সরাসরি বেরিয়ে মুহূর্তেই যানবাহন চলে যাবে রিং রোড, কাঠঘর, আন্ডারপাস, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও বিমানবন্দরসহ ৫টি পয়েন্টে। এজন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে ইউলুপ ও ইউটার্নের। পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে গাড়ি পার্কিংয়ের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করেছে সংশ্লিষ্টরা। ৬০ কিলোমিটার গতিতে টানেলটি পার হতে সময় লেগেছে তিন মিনিট। দুই প্রান্তেই বসানো হয়েছে স্ক্যানার। স্ক্যানারের মধ্য দিয়েই যানবাহন টানেলের দুটি টিউবে প্রবেশ করে অন্যদিকে বেরিয়ে যাবে। টিউবে প্রবেশ ও বেরিয়ে আসাটা অনেকটা নামতে নামতে ওঠার মতো মনে হলেও তা যাত্রীদের বোঝার সুযোগ নেই। টানেলের ভেতরে আনুমানিক ৭০০ থেকে ৭৫০ মিটার দূরত্বে রাখা হয়েছে তিনটি বাইপাস রোড।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশিদ বলেন, ‘টানেলের সব রকমের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। এখন শুধু উদ্বোধনের অপেক্ষা। এই টানেল শুধু দুই কর্ণফুলী নদীর পাড়কে সংযুক্ত করেনি, ওয়ান সিটি টু টাউনের যে কনসেপ্ট সেটাও বাস্তবায়িত হয়েছে। এই টানেলের মাধ্যমে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সড়ক নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হবে, যা শিল্প উন্নয়ন ও বিনিয়োগে ব্যবসায়ীদের আগ্রহ সৃষ্টি করবে।’
নিরাপত্তা নিয়ে তিনি বলেন, ‘টানেল সুরক্ষায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তাবলয় গড়ে তোলা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি থাকবেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্য সদস্যরাও। টানেলে ১০০টির বেশি অত্যাধুনিক ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। স্থানীয় পুলিশ যেমনি থাকবে তেমনি কোস্ট গার্ড থাকবে এবং ট্যুরিস্ট পুলিশও আশপাশে থাকবে। ফলে নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েই এটি ব্যবস্থাপনা করবে সেতু বিভাগ।’
দুর্ঘটনায় টানেলের ক্ষয়ক্ষতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এখানে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে ৫ মিনিটের মধ্যে উদ্ধার করা সম্ভব হবে। তবে কোন দুর্ঘটনার কারণে তাদের ভেতরের কোন আস্তরণের ক্ষতি হবে না। কারণ এখানে প্রতিটি ম্যাটেরিয়াল যথেষ্ট উন্নত মানের এবং সবই দেশের বাইরে থেকে আনা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনের রাষ্ট্রপতি সি চিন পিং। ২০১৯ সালে ২৪ ফেব্রুয়ারি নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৪ বছর ৭ মাসে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে শেষ হয়েছে বিশাল নির্মাণযজ্ঞ। নদীর তলদেশে মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। পাশাপাশি সংযুক্ত করা হয়েছে দুটি টিউব। টানেলের বাইরে অ্যাপ্রোচ সড়ক থাকছে প্রায় সাড়ে ৫ কিলোমিটার।