সুপ্রভাত ডেস্ক »
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে দেশব্যাপী সংঘাত-সহিংসতার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করতে জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০২৪’–এর উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা জাতিসংঘের কাছেও আবেদন করেছি। আন্তর্জাতিকভাবেও বিভিন্ন সংস্থা রয়েছে দেশে-বিদেশে, তাদের কাছেও আমরা সহযোগিতা চাই যে, এই ঘটনার যথাযথ সুষ্ঠু তদন্ত হোক এবং যারা এতে দোষী, তাদের সাজার ব্যবস্থা হোক। কারণ, আমি জানি এতে আমার কোনো ঘাটতি ছিল না।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে প্রাণহানির ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই ঘটনার তদন্তে আমরা ইতোমধ্যেই বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছি। কারণ, দাবির অপেক্ষা আমি রাখিনি। তার আগেই বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি করে দিয়েছি। আগে একজন বিচারপতি দিয়ে তদন্ত কমিটি করে দিয়েছিলাম। এখন আরও দুজন লোকবল বৃদ্ধি করে তাদের তদন্তের পরিধি আরও বাড়ানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সরকারপ্রধান বলেন, যারা আলোচনায় বসেছিল (আন্দোলনকারী), তাদের সঙ্গে বারবার আলোচনা করেছি এবং তাদের দাবি মেনে নিয়েছি। দাবি মানব কী, যেটা আমিই বাতিল করে দিয়েছি। এটা তো আমারই (কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন) ইস্যু করা। আপিল করা হয় আপিল বিভাগে এবং সেখানে হাইকোর্টের রায় (কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন বাতিল) স্থগিত করে দিয়ে আপিল বিভাগ পূর্ণাঙ্গ শুনানির তারিখ নির্দিষ্ট করে দেয়। কাজেই কোটা না থাকায় আমার জারি করা প্রজ্ঞাপনটাই আবার কার্যকর হয়। পরে আপিল বিভাগ থেকে সেটার রায়ও দিয়ে দেওয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এই আন্দোলনের নামে যেসব ঘটনা ঘটেছে, ধ্বংসাত্মক কাজ করা হয়েছে, তাতে অনেকগুলো তাজা প্রাণ ঝরে গেছে।
তিনি বলেন, ‘জানি না অপরাধটা কী ছিল আমার? যে ইস্যুটা নেই, সেটা নিয়ে আন্দোলনের নামে এই ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ করে দেশের অর্জনকে নষ্ট করা, আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করাতে কে কী অর্জন করল, সেটাই আমার প্রশ্ন?’
দেশবাসীর উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটা ঘটনা ঘটিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করে দেশকে পেছনে টেনে নেওয়ার এই চক্রান্তে যারা জড়িত, সেটা আপনাদের খুঁজে বের করা উচিত। একাত্তরে যারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর ছিল, তাদের চক্রান্ত বারবার আমাদের দেশকে পিছিয়ে নিয়ে গেছে। এটা হচ্ছে সবথেকে কষ্টের, সবচেয়ে দুঃখের।
জাতির পিতার কন্যা বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে বলেন, আমি যেহেতু স্বজন হারিয়েছি। স্বজন হারাবার বেদনা আমি বুঝি। তাই যারা আপনজন হারিয়েছেন, তাঁদের প্রতি আমার সহমর্মিতা জানাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ধ্বংস করেছে। স্থাপনা যে ধ্বংস করেছে, সেগুলো তো পুনর্গঠন করা যাবে কিন্তু যে প্রাণগুলো ঝরে গেল, সেগুলো তো আমরা আর ফিরে পাব না।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ৭টি ক্যাটাগরিতে ২২ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ‘জাতীয় মৎস্য পদক-২০২৪’ প্রদান করেন। পুরস্কার হিসেবে ৬টি স্বর্ণ, ৮টি রৌপ্য ও ৮টি ব্রোঞ্জপদক, সম্মাননা স্মারক এবং পুরস্কারের অর্থ দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে জেলেদের মধ্যে স্মার্ট আইডি কার্ডও বিতরণ করেন।
২২ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি মৎস্য চাষে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য প্রধানমন্ত্রীকেও অনুষ্ঠানে স্বর্ণপদক দেওয়া হয়। এ সময় দেশের মৎস্য খাতের উন্নয়নের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র অনুষ্ঠানে প্রদর্শন করা হয়।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মো. আবদুর রহমান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার স্বাগত বক্তব্য দেন। পুরস্কার প্রদান পর্বটি সঞ্চালনা করেন মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ আলমগীর।