আরো পাঁচ কেন্দ্র খোলার উদ্যোগ #
করোনার সামাজিক সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এখন আরা বাসা থেকে নমুনা সংগ্রহ সম্ভব নয়: স্বাস্থ্য কর্মকর্তা #
ভূঁইয়া নজরুল :
করোনার লক্ষণ নিয়ে মারা যাওয়ার পর সংগ্রহ করা হচ্ছে নমুনা। আবার কোথাও দফায় দফায় ফোন করলেও কেউ নমুনা নিতে আসে না। কিংবা নমুনা দিতে গেলে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এধরনের অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে নমুনা নিয়ে। এনিয়ে খোদ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের ৩৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি নমুনা দেয়ার পর রিপোর্ট পাওয়ার আগেই মারা গেছেন। তিনি যথাসময়ে নমুনাও দিতে পারেননি। অপরদিকে চট্টগ্রামের সংবাদকর্মী সাইফুল ইসলাম শিল্পী করোনায় আক্রান্ত হওয়ার তিন দিন পরও তার পরিবারের সদস্যদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়নি। পরবর্তীতে সংবাদকর্মীদের তদবিরে শুক্রবার নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যায় পরিবারের সদস্যদের।
নমুনা নিয়ে এই দুর্ভোগের কথা স্বীকার করেছেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বীও। তিনি বলেন, লোকজনকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা এসে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় নমুনা দিতে। অপরদিকে শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজনকে আসতে হয় নমুনা দিতে। এটা সত্যি কষ্টকর।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আবদুর রব জানান, ‘আমাদের বহিঃবিভাগে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। তবে এজন্য অনেক মানুষের দীর্ঘ লাইন থাকে। এছাড়া আমাদের হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদেরও আমরা নমুনা সংগ্রহ করে থাকি।’
কিন্তু এই দুর্ভোগ তো আগে এতো ছিল না। হটলাইনে ফোন করলে ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি থেকে লোকজন এসে নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যেতো। তাহলে এখন এই সমস্যা হচ্ছে কেন? এই প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইলে বিআইটিআইডি ল্যাব প্রধান ডা. শাকিল আহমেদ বলেন, ‘প্রথমদিকে লকডাউনে কড়াকড়ি ছিল সামাজিক সংক্রমণ ছিল না। তাই হটলাইনে ফোন করলে আমরা গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে আসতাম। কিন্তু এখন লকডাউন শিথিল, তাই আমরা লোকজনকে বলেছি ফ্লু কর্নারে গিয়ে নমুনা দিতে। সেই হিসেবে ফ্লু কর্নারে গিয়ে নমুনা দিতে গিয়ে দীর্ঘ লাইন হচ্ছে। আর এখন সামাজিক সংক্রমণ হয়ে যাওয়ায় রোগীর সংখ্যাও বেশি। এতে দুর্ভোগও বেশি হচ্ছে।’
তিনি বলেন, বর্তমানে তিনটি (বিআইটিআইডি, চমেক ও জেনারেল হাসপাতাল) পয়েন্টে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এই নমুনা সংগ্রহের কেন্দ্র বাড়াতে হবে। তবেই মানুষের দুর্ভোগ কমবে।
ডা. শাকিল বলেন, ফ্লু কর্নারের ডাক্তার করোনার লক্ষণ পেলে নমুনা দেয়ার অনুমোদন দেবে। গড়ে সবাইকে তো নমুনা দিতে দেয়া হবে না।
নগরীতে নমুনা কেন্দ্র বৃদ্ধি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বী বলেন, ‘এজন্য আমরা সিটি কর্পোরেশনের সাথে কথা বলেছি। নগরীর চার প্রান্তে চারটি বুথ করার জন্য বলা হয়েছে। তারা হয়তো ব্র্যাকের সাথে সমন্বয়ে এসব বুথ চালু করতে পারে। ঢাকায়ও এভাবে বুথ চালু করা হয়েছে। তাহলে হয়তো দুর্ভোগ কমবে। সিটি কর্পোরেশনের চারটি বুথের সাথে আমাদের তিনটি বুথ থাকলে সাতটি পয়েন্টে নমুনা সংগ্রহ করা যাবে।
সিভিল সার্জনের এই বক্তব্যের বিষয়ে কথা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের সাথে। তিনি চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, চট্টগ্রামে করোনা চিকিৎসার জন্য যে দুটি হাসপাতাল রয়েছে সেগুলো রোগীতে প্রায় পরিপূর্ণ। অপরদিকে ফিল্ড হাসপাতালেও রোগী রয়েছে। এই অবস্থায় নমুনা দিতে ভোগান্তি থাকলে রোগীরা তো ঘরেই মারা যাবে।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা মারা যাওয়ার পর শনাক্ত হয়েছেন তিনি করোনায় ছিলেন। তিনি যদি আরো আগে নমুনা দিতে পারতেন এবং রিপোর্ট পেতেন তাহলে হয়তো চিকিৎসা নিতে পারতেন। একইভাবে চট্টগ্রাম মেডিক্যোলেও অনেক রোগী মারা যাওয়ার পর তাদের করোনা শনাক্ত হচ্ছেন। এ সমস্যা সমাধানে আমরা নগরীতে ব্র্যাকের সহায়তায় নমুনা কেন্দ্র চালু করার পরিকল্পনা নিয়েছি।
তিনি বলেন, ‘আমরা নগরীর চার প্রান্তের চারটি এবং শহরের মাঝখানে একটি- এই পাঁচটি বুথের চিন্তা করছি। সাথে বিদ্যমান তিনটি চালু থাকলে হয়তো নমুনা দুর্ভোগ থেকে কিছুটা হলেও রেহাই পাবে নগরবাসী।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামে করোনা পরীক্ষায় বিআইটিআইডির পাশাপাশি রয়েছে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ ল্যাব। এই তিনটি ল্যাব এখন প্রতিদিন গড়ে ৪০০ এর বেশি নমুনা পরীক্ষা করতে পারছে। অপরদিকে সাতকানিয়া ও লোহাগাড়ার নমুনা যাচ্ছে কক্সবাজারে। তাই চট্টগ্রামে এখন আর নমুনা দিয়ে চার থেকে পাঁচ দিন অপেক্ষায় থাকতে হয় না। বর্তমানে সময়ের ব্যবধান কমে আসছে।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামে এপর্যন্ত ৫৭৫ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং এদের মধ্যে মারা গেছেন ৩১ জন ও সুস্থ হয়ে বাড়ি গেছেন ৯৩ জন।