ফজলে এলাহী,রাঙামাটি »
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা নানা ধর্মীয় আচারে মাধ্যমে উদযাপন করা হয়েছে রাঙামাটিতে। বৌদ্ধ ভিক্ষুরা তিন মাসব্যাপী নির্জন আশ্রমে বাস শেষে প্রবারণা পূর্ণিমার মাধ্যমে লোকারণ্যে ফিরে আসেন, একে আশ্বিনী পূর্ণিমাও বলা হয়।
বৃহস্পতিবার সকালে রাঙামাটি শহরের রাজবন বিহারে প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে সকাল থেকেই পঞ্চশীল গ্রহণ, প্রার্থনা, বুদ্ধ সংগীত, মোমমবাতি ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের করেছে। এরপর অষ্টপরিষ্কার দান, অষ্টশীল গ্রহণ, বুদ্ধ পূজা প্রভৃতি আচার শেষে দেব-মানবের তথা সকল প্রাণীর হিতার্থে ধর্মদেশনা দেওয়া হয়।
বৌদ্ধ ধর্মালম্বিদের মতে ভিক্ষুরা আষাঢ়ী পূর্ণিমা হতে আশ্বিনী পূর্ণিমান পর্যন্ত, এই তিন মাস বর্ষাব্রত পালন করেন। আর এই বর্ষাব্রত পালন শেষে আশ্বিনী পূর্ণিমা তিথিতে তারা প্রবারণা করেন। স্বাভাবিক সসময়ে প্রবারণা পূর্ণিমার পর দিন হতে পরবর্তি এক মাস বিহারে বিহারে অনুষ্ঠিত হয কঠিন চীবর দান। তবে পার্বত্য চট্টগ্রামের সাম্প্রদায়িক ঘটনা প্রেক্ষাপটে এবার হচ্ছে কঠিন চীবন দান অনুষ্ঠান। তবে পুণ্যার্থীদের আশা আগামী বছর সরকার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করবে এবং সকল ধর্মীয় অনুষ্ঠান নিরাপদ করার আশার কথা ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে পুণ্যার্থীদের উদ্দেশ্য বনভান্তের উদ্ধৃতি দিয়ে, একে-অপরের প্রতি হিংসায় লিপ্ত না হয়ে সৎ চিন্তা ও সৎ কুশলকর্ম সম্পাদন পূর্বক নিজেকে আত্মসংযম রেখে বুদ্ধের নিয়ম-নীতি পালনের আহবান জানিয়েছেন রাঙামাটি রাজবন বিহারের অধ্যক্ষ ও আবাসিক প্রধান ভদন্ত শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির। এসময় আরো ধর্মদেশনা প্রদান করেন রাজবন বিহারের সিনিয়র ভিক্ষু ভদন্ত জ্ঞানপ্রিয় মহাস্থবির।
পূর্ণার্থী জ্ঞান লতা চাকমা বলেন, বৌদ্ধ ভিক্ষুরা এই তিন মাস বর্ষাব্রত পালন শেষে প্রবারণা পূর্ণিমার মাধ্যমে লোকারণ্যে ফিরে আসে। একে আশ্বিনী পূর্ণিমাও বলা হয়। এই দিন অতিতের ভুল ভ্রান্তির জন্য একে অপরের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি। এমন পূর্ণময় অনুষ্ঠনে ভক্তকূলের প্রাথর্না সকল সম্প্রদায়ের মৈত্রীময় সহবস্থানেরর পাশাপাশি দেশ ও জাতির শান্তি মঙ্গল কামনা।
রাঙামাটি রাজবন বিহারে উপাসক- উপাসিকা পরিষদের সহ-সভাপতি নিরুপা দেওয়ান বলেন, একে অন্যের প্রতি ভালোবাসা, শ্রদ্ধা থাকবে। এক ধর্মের মানুষের অন্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা থাকবে এই প্রত্যাশা নিয়ে আজ প্রর্থনা করবো। বাংলাদেশ, পার্বত্য চট্টগ্রাম তথা বিশে^ সুখ শান্তি বিরাজ করে।
চাকমা সার্কেল চীফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় বলেন, বৌদ্ধ ভিক্ষুরা এই তিন মাস বর্ষাব্রত শেষে আগামী এক মাসের মধ্যে কঠিন চীবর দান হওয়ার কথা। তবে আমি শুনেছি চলমান পরিস্থিতির কারনে এবছর ভিক্ষুরা এই চীবর দান না করার সিদ্ধন্ত নিয়েছেন। আমি এই বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে ভিক্ষু সংঘের সাথে কথা বলার সুযোগ পাই নি। তবে এটাও শুনেছি কঠিন চীবর করতে হলে কিছু শর্ত, অবস্থা ও প্রেক্ষিত আছে তার পূরন করতে হয়। মনে সেইসব কারনগুলো বিবেচনা করেই তারা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন যে বিশেষ পরিস্থিতিতে ভিক্ষুরা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এমন পরিস্থিতি যাতে ভবিষ্যতে না হয়, সেজন্য সরকার ও জাতিসংঘ এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করুক যাতে পাহাড়ে জাতিগত সহিংসতার ঘটনা বন্ধ হয়। আগামীতে যাতে কঠিন চীবর দান সহ সকল ধর্মীয় অনুষ্ঠান নিরাপত্তার সাথে পালন করতে পরে সেই প্রত্যাশার কথা বলেন চাকমা সার্কেলের এই চীফ।
ধর্মীয় দেশনা দেন রাজবন বিহারের আবাসিক প্রধান শ্রীমৎ প্রজ্ঞালঙ্কার মহাস্থবির। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন চাকমা সার্কেল চীফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়, বিহার পরিচলানা কমিটির উপাসক-উপসিকাগন। অনুষ্ঠানে কয়েক হাজার ধর্মপ্রাণ নর-নারী অংশ নেন।