সুপ্রভাত ডেস্ক »
উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বর্তমান সরকার সমুদ্রকেন্দ্রিক অর্থনীতির সম্ভাবনা কাজে লাগাতে বদ্ধপরিকর বলে মন্তব্য করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। বুধবার চট্টগ্রামে মেরিন ফিশারিজ অ্যাকাডেমির প্যারেড গ্রাউন্ডে অ্যাকাডেমির ৪২তম ব্যাচের ক্যাডেটদের পাসিং আউট প্যারেড উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানে ক্যাডেটদের মধ্যে পদক বিতরণ করেন এবং অ্যাকাডেমির পাসড আউট হওয়া ১৩৮ জন ক্যাডেটের হাতে সনদপত্র তুলে দেন মন্ত্রী।
শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘সমুদ্রসম্পদের গুরুত্ব উপলব্ধি করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে মেরিন ফিশারিজ অ্যাকাডেমি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি ১৯৭৪ সালে টেরিটোরিয়াল ওয়াটার্স অ্যান্ড মেরিটাইম জোনস অ্যাক্ট প্রণয়ন করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কূটনৈতিক দূরদর্শিতা ও দৃঢ় ভূমিকায় ১ লাখ ১৮ হাজার ৮শ’ ১৩ বর্গকিলোমিটার সামুদ্রিক জলসীমায় আমাদের সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে। এর ফলে সমুদ্রকেন্দ্রিক অর্থনীতির নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়।’
তিনি বলেন, ‘মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সমুদ্রের মৎস্যসম্পদ অনুসন্ধান, সংরক্ষণ ও টেকসই আহরণের লক্ষ্যে নানা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। এ মন্ত্রণালয় থেকে প্রণয়ন করা হয়েছে সামুদ্রিক মৎস্য আইন, ২০২০, সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ নীতিমালা, ২০২২ এবং সামুদ্রিক মৎস্য বিধিমালা, ২০২৩।’
সমুদ্রে অবৈধ ও অনিয়ন্ত্রিত মৎস্য আহরণ বন্ধে ন্যাশনাল প্ল্যান অব অ্যাকশন বাস্তবায়ন করা হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন মেরিন ফিশারিজ অ্যাকাডেমির মাধ্যমে সমুদ্রসম্পদ অনুসন্ধান, আহরণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং টেকসই সংরক্ষণ ও ব্যবহারের বিষয়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা হচ্ছে। এ দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনশক্তি সমুদ্রসম্পদ আহরণের মাধ্যমে সুনীল অর্থনীতির বিকাশে কার্যকর ভূমিকা রাখছে।’
ক্যাডেটদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘অন্ধকার ভেদ করে আলোকবর্তিকা হাতে নিয়ে ক্যাডেটদের এগিয়ে যেতে হবে। দেশপ্রেম, আত্মবিশ্বাস, অধ্যাবসায়, সুচিন্তিত লক্ষ্য এবং পরিশ্রম কখনও বৃথা যায় না। দেশে ও দেশের বাইরে মেরিন ফিশারিজ অ্যাকাডেমির ক্যাডেটরা হবে আমাদের অ্যাম্বাসেডর। বিদেশের জাহাজে আমাদের যে ক্যাডেট কাজ করবে সে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করবে। ক্যাডেটদের শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, নৈপুণ্য, মেধা ও যোগ্যতা, দেশপ্রেম ও কর্তব্যনিষ্ঠার মাধ্যমে সম্প্রসারণ করতে হবে; দেশের প্রয়োজনে কাজে লাগাতে হবে।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘মেরিন ফিশারিজ অ্যাকাডেমির নারী ক্যাডেটরাও তাদের দক্ষতা ও নৈপুণ্যে কর্মক্ষেত্রে দেখাতে সক্ষম হচ্ছেন। এর পাশাপাশি দেশের সব ক্ষেত্রেই নারীরা তাদের দক্ষতা ও যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন।’ খবর বাংলাট্রিবিউন।
অনুষ্ঠানে আরও ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও রুটিন দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিব নৃপেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ, অতিরিক্ত সচিব এ টি এম মোস্তফা কামাল ও মো. আবদুল কাইয়ূম, মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালক খ. মাহবুবুল হক, মেরিন ফিশারিজ অ্যাকাডেমির অধ্যক্ষ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ হাসান, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বাংলাদেশ নৌবাহিনী, বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন, মৎস্য অধিদফতর, প্রাণিসম্পদ অধিদফতর, মার্কেন্টাইল মেরিন ডিপার্টমেন্ট, সরকারি শিপিং দফতরসহ অন্যান্য মেরিটাইম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা।
এ বছর অ্যাকাডেমির ৪২তম ব্যাচে নটিক্যাল বিভাগে ৬০ জন, মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ৫৯ জন এবং মেরিন ফিশারিজ বিভাগে ১৯ জন ক্যাডেটসহ মোট ১৩৮ জন ক্যাডেট পাসড আউট হন। এ বছর ৪২তম ব্যাচের ক্যাডেটদের মধ্যে সব বিষয়ে সর্বোচ্চ মান অর্জনকারী ক্যাডেট হিসেবে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ক্যাডেট এইচ এম আবরার অয়ন বেস্ট অল রাউন্ডার গোল্ড মেডেল প্রাপ্ত হন। তিন বিভাগের সর্বোচ্চ মান অর্জনকারী ক্যাডেট হিসেবে নটিক্যাল সায়েন্স বিভাগ থেকে ক্যাডেট এস এম মারুফ হোসেন নাবিল, মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে ক্যাডেট মো. আল রিফাত এবং মেরিন ফিশারিজ বিভাগ থেকে ক্যাডেট মোহাম্মদ সাজিদ হোসেন বেস্ট ইন প্রফেশনাল ট্রেনিং সিলভার মেডেল পদক প্রাপ্ত হয়েছেন। এছাড়াও মহিলা ক্যাডেটদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ মহিলা ক্যাডেট হিসেবে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ক্যাডেট সুরাইয়া আক্তার বেস্ট ফিমেইল ইন প্রফেশনাল ট্রেনিং সিলভার মেডেল পদক প্রাপ্ত হন।