সুপ্রভাত ডেস্ক »
পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান।
প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পাবার পর চট্টগ্রামের সন্তান ওয়াসিকা আয়শা খান প্রথমবারের মতো নিজ শহরে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে একথা জানিয়েছেন। শনিবার (৯ মার্চ) সকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে প্রতিমন্ত্রী আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে বসেন।
শুভেচ্ছা বক্তব্যের পর অর্থ প্রতিমন্ত্রীর কাছে সাংবাদিকরা পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার বিষয়ে জানতে চান। জবাবে ওয়াসিকা আয়শা খান বলেন, ‘টাকা পাচারের বিষয়টা, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিএফআইইউ (বাংলাদেশ ফিন্যান্স ইন্টেলিজেন্স ইউনিট) কিন্তু প্রায়শই এটা নিয়ে আলোচনা করে।’
‘বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সমঝোতা স্মারক হচ্ছে। যেখানে টাকাগুলো, পাচারকৃত টাকাগুলো থাকে, সেগুলো তখন ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। দুই দেশের মধ্যে আইনগত অ্যাগ্রিমেন্ট হওয়ার পরেই কিন্তু পাচার হওয়া টাকা ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এ কাজগুলো চলমান আছে।’
টাকা পাচারের বিরুদ্ধে জনমত গঠনের আহ্বান জানিয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আপনারা জাতির বিবেক, টাকা পাচারের বিষয়ে আপনাদের কথা বলতে হবে, সবাইকে সচেতন করতে হবে। হু-িটা দেশের জন্য কতটুকু ক্ষতিকারক, সেটা আপনাদের বলতে হবে, আপনারা বলতে থাকুন।’
প্রবাসীদের প্রণোদনা সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে অর্থ প্রতিমন্ত্রী জাতীয় সংসদে সদ্য পাস হওয়া অফশোর ব্যাকিং আইনের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন।
ওয়াসিকা আয়শা খান বলেন, ‘আমরা দ্বাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশনের শেষদিনে অফশোর ব্যাংকিং লিমিট আইন পাস করেছি। এটা কিন্তু বিভিন্ন ব্যাংকে আগে থেকেই ছিল। নতুন আইনে শুধু কোম্পানি না, ব্যক্তিও অফশোর ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট করতে পারবেন। শুধুমাত্র কারেন্ট অ্যাকাউন্ট না, ডিপোজিট অ্যাকাউন্টও করতে পারবেন। বৈদেশিক মুদ্রায় ডিপোজিট করতে পারবেন।’
ডিপোজিটের বিপরীতে আকর্ষণীয় সুদ দেয়া হবে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী, ‘ডলারের ডিপোজিটে কিংবা বৈদেশিক মুদ্রার ডিপোজিটে আকর্ষণীয় সুদ দেয়ার জন্যই কিন্তু আইনটা পাস করা হয়েছে। প্রবাসী ভাই-বোনেরা যারা বিভিন্ন দেশে কাজ করেন, বিদেশে কিন্তু ডিপোজিটের সুদ খুব কম, এখানে ডিপোজিটের ব্যবস্থা আছে। এখানে আকর্ষণীয় সুদ দেয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে, এটাই একধরনের প্রণোদনা। এটা কিন্তু খুব বড় একটা আইনগত পদক্ষেপ।’
উল্লেখ্য, অফশোর ব্যাংকিং মানে হলো ব্যাংকের ভেতরে পৃথক ব্যাংকিং সেবা, যাতে আমানত ও ঋণ- উভয়ই বৈদেশিক উৎস থেকে আসে এবং বিদেশি গ্রাহকদের দেওয়া হয়। স্থানীয় মুদ্রার পরিবর্তে বৈদেশিক মুদ্রায় হিসাব হয় অফশোর ব্যাংকিংয়ে। এক্ষেত্রে প্রচলিত ব্যাংকের কোনো নিয়ম-নীতিমালা প্রয়োগ করা হয় না।
করযোগ্য আয় আছে এমন সকল নাগরিক যেন কর দেন, সেই সচেতনা সৃষ্টির জন্য সাংবাদিকদের অনুরোধ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘কর দেয়ার বিষয়ে আপনারা একটু ক্যাম্পেইন করবেন। এবার রিটার্ন জমা দিয়েছে ৩৩ লাখের বেশি। যাদের করযোগ্য আয় আছে, প্রত্যেকে যেন কর দেন, আপনারা সকলকে সচেতন করবেন। কর দেয়া মানে দেশের অগ্রগতিতে অংশ নেয়া। সর্বজনীন পেনশন স্কিমটা খুব চমৎকার, এটার জন্যও একটু লিখুন।’ খবর সারাবাংলা।
এর আগে, শুভেচ্ছা বক্তব্যে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিক আয়শা খান বলেন, ‘বৈশ্বিক অর্থনীতির যে অবস্থা এখন চলছে, সেখানে অবশ্যই চ্যালেঞ্জেস আছে। তবে বাংলাদেশ যেভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে গেছে, নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই কিন্তু এগিয়েছে। দেশের অভ্যন্তর থেকে এবং আন্তর্জাতিকভাবে অনেক চ্যালেঞ্জ এসেছে। সেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই কিন্তু শেখ হাসিনা দেশকে স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।’
‘দেশের রূপান্তরকালে শেখ হাসিনার যে নেতৃত্ব, তাতে আমাদের সবাইকে অনেক বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। আরও বন্ধুর পথ আসতে পারে। বাংলাদেশ তো গ্লোবালি কানেক্টেড, আমরা তো একা চলতে পারি না।’
নতুন দায়িত্ব পালনে সাহসের সঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকারের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার অঙ্গীকার হচ্ছে, শেখ হাসিনার যে দূরদর্শিতা, রূপান্তরকালীন যে নেতৃত্ব, তার সঙ্গে আমরাও সাহসের সঙ্গে এগিয়ে যাব। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাকে আমরা স্মার্ট বাংলায় রূপান্তর করবো। যে লক্ষ্য নিয়ে নতুন দায়িত্ব নিয়েছি, সেটা যাতে সঠিকভাবে পালন করতে পারি এবং বাংলাদেশের এগিয়ে চলার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারি, সেজন্য সবার সহযোগিতা চাই।’
‘আমি চট্টগ্রামের সন্তান। পরিবারের দিক থেকে আমি চতুর্থ প্রজন্মের প্রতিনিধি। চট্টগ্রামের প্রতি অবশ্যই আমার আবেগ আছে, দায়িত্বও আছে। চট্টগ্রামের জন্য আগেও উচ্চপর্যায়ে কথা বলেছি, এখনও বলবো। না চাইলে তো পাওয়াটা কঠিন হয়ে যায়,’- বলেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান।
মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও বর্ষীয়ান রাজনীতিক প্রয়াত আতাউর রহমান খান কায়সারের মেয়ে ওয়াসিকা আয়শা খান এ নিয়ে তৃতীয় দফায় সংরক্ষিত আসনের সদস্য হয়েছেন। এবার প্রথমবারের মতো তিনি মন্ত্রীসভায়ও জায়গা পেয়েছেন।
সার্কিট হাউজে অর্থ প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম এবং দক্ষিণের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী ছিলেন।