সুপ্রভাত ডেস্ক »
আদালত বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা কী তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে রিমান্ডের আবেদন করল, আর বিচারিক আদালত তা মঞ্জুর করে দিলেন। এগুলো পরীক্ষা করা দরকার। এগুলো তো কোনো সভ্য সমাজে হতে পারে না, ঘটতে পারে না।
চিত্রনায়িকা শামসুন্নাহার স্মৃতি ওরফে পরীমনিকে রিমান্ডে নেওয়ার বিষয়টিকে ‘সভ্য সমাজে এভাবে চলতে পারে না’ বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। এদিকে পরীমনির জামিন প্রশ্নে জারি করা রুল অকার্যকর বলে আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার কাজলের হাইকোর্ট বেঞ্চ বুধবার এ মন্তব্য করেন এবং জামিন প্রশ্নে রুলের ওপর আদেশ দেন।
শুনানিতে হাইকোর্ট বলেছেন, ‘ম্যাজিস্ট্রেট দুজনের সামনে কী ম্যাটারিয়াল ছিল এটা জানতে চাইব। কোনো ম্যাটেরিাল ছাড়া আইও (তদন্তকারী কর্মকর্তা) প্রেয়ার দিল রিমান্ডের, আপনি (ম্যাজিস্ট্রেট) মঞ্জুর করে দিলেন। এগুলো তো কোনো সভ্য সমাজে হতে পারে না, ঘটতে পারে না বর্তমানে। রিমান্ড অতি ব্যতিক্রমী বিষয়।’
পরীমনিকে রিমান্ডে নেওয়ার বৈধতা প্রশ্নে হাইকোর্টের হস্তক্ষেপ চেয়ে আইন ও সালিশ কেন্দ্র—আসকের করা এক আবেদনের ওপর শুনানিকালে আদালত এসব মন্তব্য করেন।
আসকের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না, মো. মুজিবুর রহমান, ড. সৈয়দা নাসরিন ও অ্যাডভোকেট মো. শাহীনুজ্জামান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবু ইয়াহহিয়া দুলাল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মিজানুর রহমান।
অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না আদালতকে বলেন, রিমান্ড প্রশ্নে সুপ্রিম কোর্টের যেসব নির্দেশনা নিম্ন আদালতকে মেনে চলতে বলা হয়েছিল, যুদ্ধাপরাধীদের মামলা ব্যতীত সাধারণ নাগরিকদের ক্ষেত্রে এসব নির্দেশনা মেনে চলা হয় না।
এ সময় আদালত বলেন, আবেদনকারীর তো জামিন হয়ে গেছে। তাই রুলটি শুনানির জন্য অকার্যকর (ইমফ্রাকচুয়াস) হয়ে গেছে। আর রিমান্ড নিয়ে যা বলছে, সে বিষয়ে তো আপিল বিভাগের গাইডলাইন আছেই। কিন্তু কেউ মানছে না।
অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না বলেন. রিমান্ড প্রশ্নে সুপ্রিম কোর্টের গাইডলাইন যাতে অনুসরণ করা হয়, সেজন্য একটি আদেশ চাচ্ছি।
এরপর পরীমনিকে তিন দফায় কত দিন করে রিমান্ড নেওয়া হয়, সে বিষয়ে আদালতকে জানান অ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান। তিনি বলেন, ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৭ ধারায় যে বিধান আছে এবং আমাদের আপিল বিভাগের যে গাইডলাইন আছে এগুলো পরীমনির রিমান্ডের ক্ষেত্রে ফলো না করেই তাকে তিন দফায় ৭ দিন রিমান্ডে নিয়েছে।
আসকের নির্বাহী সদস্য ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, রিমান্ডে নেওয়ার ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা আছে। সে নির্দেশনা অনুসরণ না করে পরীমনিকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। রিমান্ডের ক্ষেত্রে যাতে সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা নিম্ন আদালত অনুসরণ করেন, এটিই প্রার্থনা। কেবল মানবতাবিরোধী অপরাধীদের ক্ষেত্রে নির্দেশনা অনুসরণ করা হয়েছে, অন্য নাগরিকদের বেলায় তা অনুসরণ করা হয়নি।
শুনানির এক পর্যায়ে আদালত বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৩৫ এবং ৪৩৯ ধারা অনুযায়ী জামিনের রুল বিচারাধীন থাকাবস্থায় রিমান্ডের প্রশ্নটি পরীক্ষা করতে পারি। নথি তলব করতে পারি। প্রয়োজন হলে বিচারককে তলব করতে পারি। হাইকোর্ট বিভাগ সবকিছু করতে পারে।
এ সময় সহকারি অ্যাটর্নি জেনারেল মিজানুর রহমান বলেন, কিন্তু সে (পরীমনি) তো এখন রিমান্ডে নেই। তার জামিন হয়ে গেছে। এখন জামিন প্রশ্নে রুল অকার্যকর হয়ে গেছে।
আদালত বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা কী তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে রিমান্ডের আবেদন করল, আর বিচারিক আদালত তা মঞ্জুর করে দিলেন। এগুলো পরীক্ষা করা দরকার।
আদালত বলেন, এগুলো তো কোনো সভ্য সমাজে হতে পারে না, ঘটতে পারে না।
আদালত আরও বলেন, ৪৩৯ ধারার আলোকে মহানগর দায়রা জজ আদালত জামিন আবেদন (৪৯৮ ধারায়) কত দিনের মধ্যে শুনবেন সে বিষয়ে আমরা একটি গাইডলাইন দেব।
উল্লেখ্য, চিত্রনায়িকা পরীমনি ২৮ দিন কারাবাসের পর জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। জামিনের কাগজপত্র কারাগারে পৌঁছানোর পর আজ সকাল সাড়ে নয়টার দিকে ছাড়া পান তিনি।