সুপ্রভাত ডেস্ক »
দেশের শীর্ষ ব্যবসায়িক গ্রুপ পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান, একুশে পদকপ্রাপ্ত ও জ্ঞানতাপস সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘আমরা সোনার দেশ পেয়েছি, তোমরা হীরের দেশ গড়বে। পৃথিবীর কোনো দেশ মাত্র ৯মাসে স্বাধীনতা অর্জন করতে পারে নি। কিন্তু বাঙালি পেরেছে। আমি বিশ্বাস করি, এই বাঙালিই একদিন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতি হবে। বঙ্গবন্ধুর মাত্র ১৮ মিনিটের একটি ভাষণেই গোটা জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। কারো আর্থিক সহায়তা ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী সম্পূর্ণ নিজস্ব উদ্যোগে পদ্মা সেতু ও বঙ্গবন্ধু টানেলের মতো অবাক করা স্থাপনা হয়েছে। এই জাতির মধ্যে জ্বলে ওঠার শক্তি রয়েছে। এটা কাজে লাগাতে হবে। এজন্য সততা ও পরিশ্রম করে তোমাদের অদম্য গতিতে এগিয়ে যেতে হবে’।
শনিবার দুপুরে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্বদ্যিালয়-রুয়েট মিলনায়তনে ‘ইন্ডাস্ট্রি- অ্যাকাডেমিয়া মোটেভিশনাল স্পীচ’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে মূল বক্তা হিসেবে তিনি বক্তৃতা করেন। রুয়েটের রিসার্চ অ্যান্ড এক্সটেনশন দপ্তর এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে সুফী মিজানুর রহমান বলেন, ‘সফলতা অর্জন করতে হলে জীবনের সব বাধাকেই অতিক্রম করার দৃঢ় মনোবল থাকতে হবে। জীবনে বড় হবার মূল মন্ত্র হল কঠোর পরিশ্রম। সততার সাথে একাগ্রচিত্তে পরিশ্রম করলে আল্লাহর কুদরত থেকেই সকল সফল আসবে। কঠোর পরিশ্রম ছাড়া জীবনে সফল হওয়ার যাবে না। তাই শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা, জ্ঞান অর্জন থেকে শুরু করে চাকরি বা ব্যবসা-সবক্ষেত্রেই পরিশ্রমী হয়ে ওঠার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন, ‘স্বপ্ন না থাকলে জীবনে কখনো সফলতা আসবে না। যাদের অভাব রয়েছে ও বড়কিছু হবার স্বপ্ন রয়েছে তাদের মনের ভেতর জ¦ালা থাকতে হবে, দুঃখ-কষ্ট ও তাড়া থাকতে হবে। বড় হওয়ার জেদ পুষে রাখতে হবে। তাহলে জীবনে যত বাধা আসুক তা বাধা আর থাকবে না। কিন্তু আমাদের সমাজে বেশির ভাগ মানুষ প্রয়োজনের অতিরিক্ত কাজ করেন না। অফিস টাইমে বেশি ডিউটি করেন না। কারণ তারা কাজটা শুধু বেতন পাওয়ার জন্য করেন। কিন্তু কাজকে ওন করতে হবে। অতিরিক্ত সময় পরিশ্রম করতে হবে।
তিনি নিজের শিল্পপতি হওয়ার উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘আমি নিজেও প্রথমে মাত্র ১০০টাকা বেতনের কাজ করতাম। কিন্তু জীবনে কখনো আমি কাজকে ছোট মনে করি নি। দায়িত্বের চেয়েই কয়েকগুণ বেশি কাজ করেছি। কাজকে ওন করেছি। আমার স্বপ্ন ছিল বড় হওয়ার। আমি তা কঠোর পরিশ্রম করেই অর্জন করেছি। পরিশ্রম ছাড়া সফলতা আশা করা বৃথা’।
সুফি মিজানুর রহমান শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, তোমাদের একেকজনের মধ্যে বিস্ময়কর প্রতিভা লুকিয়ে আছে। প্রয়োজন শুধু জ্বলে ওঠা। এজন্য সততা, নিষ্ঠা আর কঠোর পরিশ্রম। মানুষ কত বড় হবে-তা নির্ভর করে তার কর্মের ওপর। জীবনে হিংসা ও পরশ্রীকাতরতা পরিহারের আহ্বান জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘অহংকার জীবনের ধ্বংসের মূল। অহংকারী ব্যক্তি সমাজের কেউ পছন্দ করেন না। জীবনের সবসময় বিনয়ী হবে হতে। সকল পেশার মানুষকে সম্মান করা শিখতে হবে। সম্মানের চোখে দেখতে হবে। ভালবাসা পৃথিবার সমস্ত সংকট দূর করতে পারে। আজকে পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় সংকট হলো মানুষে মানুষে ভালবাসার অভাব। কেউ কাইকে সম্মান করে না। বিশ্বাস করে না। পৃথিবীর সভ্যতা ততদিন পূর্ণাঙ্গতা পাবে না যতদিন না মানুষ মানুষকে ভালবাসবে।
অনুষ্ঠানের প্রধান আরো বক্তব্য রাখেন রুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম, ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেস-ইউআইটিএস’র ট্রাস্ট্রি বোর্ডের সদস্য এবং পিএইচপি ফ্লোট গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আমির হোসেন ও রুয়েটের রিসার্চ অ্যান্ড এক্সটেশন দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. ফারুক হোসেন।
পরে রুয়েটের রিসার্চ অ্যান্ড এক্সটেনশন সেন্টারের পক্ষ থেকে সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন উপাচার্য অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম।