সুপ্রভাত ডেস্ক »
দেশের শীর্ষ ব্যবসায়িক গ্রুপ পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান, একুশে পদকপ্রাপ্ত ও জ্ঞানতাপস সুফি মুহাম্মদ মিজানুর রহমান শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘সফলতা অর্জন করতে হলে জীবনের সব বাধাকেই অতিক্রম করার দৃঢ় মনোবল থাকতে হবে। জীবনে বড় হবার মূল মন্ত্র হল কঠোর পরিশ্রম। সততার সাথে একাগ্রচিত্তে পরিশ্রম করলে আল্লাহর কুদরত থেকেই সকল সফল আসবে। কঠোর পরিশ্রম ছাড়া জীবনে সফলতার অন্য কোনো জাদু নেই। তাই শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা, জ্ঞান অর্জন থেকে শুরু করে চাকরি বা ব্যবসা-সবক্ষেত্রেই পরিশ্রমী হয়ে ওঠার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
শুক্রবার (৩ মে) বিকেলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ডা. কাইছার রহমান মিলনায়তনে ক্রিয়েটিভ শিক্ষা পরিবার আয়োজিত কৃতী শিক্ষার্থী সংবর্ধনা ও দি মখদুম ফাউশনের উদ্যোগে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে সুফি মিজানুর রহমান আে বলেন, ‘পৃথিবীতে যারা নানা কারণে প্রখ্যাত হয়েছেন তাদের বেশির ভাগই দরিদ্র ঘরের সন্তান ছিলেন। কিন্তু জীবনে বড় হওয়ার স্বপ্ন ছিল তাদের। দারিদ্রতার কষাঘাত থেকে মুক্তি পেয়ে সততার সাথে তারা কঠোর পরিশ্রম করেছেন। আর তাদের প্রত্যেকের এই পরিশ্রমের পেছনে ছিল বড় স্বপ্ন। স্বপ্ন না থাকলে জীবনে কখনো সফলতা আসবে না। যাদের অভাব রয়েছে ও বড়কিছু হবার স্বপ্ন রয়েছে তাদের মনের ভেতর জ¦ালা থাকতে হবে, দুঃখ-কষ্ট ও তাড়া থাকতে হবে। বড় হওয়ার জেদ পুষে রাখতে হবে। তাহলে জীবনে যত বাধা আসুক তা বাধা আর থাকবে না। কিন্তু আমাদের সমাজে বেশির ভাগ মানুষ প্রয়োজনের অতিরিক্ত কাজ করেন না। অফিস টাইমে বেশি ডিউটি করেন না। কারণ তারা কাজটা শুধু বেতন পাওয়ার জন্য করেন। কিন্তু কাজকে ওন করতে হবে। অতিরিক্ত সময় পরিশ্রম করতে হবে। পরিশ্রম ছাড়া সফলতার কোনো জাদু নেই।
তিনি নিজের শিল্পপতি হওয়ার উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘আমি নিজেও প্রথমে মাত্র ১০০টাকা বেতনের কাজ করতাম। কিন্তু জীবনে কখনো আমি কাজকে ছোট মনে করি নি। দায়িত্বের চেয়েই কয়েকগুণ বেশি কাজ করেছি। কাজকে ওন করেছি। আমার স্বপ্ন ছিল বড় হওয়ার। আমি তা কঠোর পরিশ্রম করেই অর্জন করেছি। পরিশ্রম ছাড়া সফলতা আশা করা বৃথা’।
তিনি শিক্ষার্থীদের কাজের করার মানসিকতা তৈরির আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমরা বড়লোক হতে চাই। কিন্তু পরিশ্রম করতে চাই না। সুনাম ও সুখ্যাতি চাই কিন্তু বিশ^স্ত হতে চাই না। এ ধরনের ফাঁকি দিয়ে শর্টকাটে সফলতার কোনো সিঁড়ি নেই। ওপরে ওঠার জন্য তোমাদের জন্য কেউ সিঁড়ি তৈরি করে দেবে না। নিজেকেই নিজের জন্য সিঁড়ি তৈরি করতে হবে। তাহলে সেই সিঁড়ি দিয়ে সফলতার আকাশও ছোঁয়া যাবে। এখন যারা শিক্ষার্থী তাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে জীবনে কী হতে চাও। সেই আলোকে নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নে কঠোর মনোবল থাকতে হবে। এজন্য আল্লাহর অলিদের দরবারে যেতে হবে। সেখানে গিয়ে তাদের অসিলায় আল্লাহর কাছে চাইতে হবে। আল্লাহ অবশ্যই তোমার মনের আশা পূরণ করবেন। অলি-আউলিয়াদের মাজারে গিয়ে তাদের অসিলায় আল্লাহর কাছে চাওয়া কোনো শিরক বা বেদায়াত নয়’।
সুফি মিজানুর রহমান শিক্ষার্থীদের সময়ের প্রতি যত্ন হওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘সময়কে ফাঁকি দিয়ে কিছু অর্জন করা যাবে না। সময়ের কাজ সময়ের মধ্যেই করতে হবে। কাজ আর কাজ। কাজ ফাঁকি দিয়ে বড় হওয়া যাবে না। কাজেই জীবন গঠনের শ্রেষ্ঠ কাজ হলো সময়ের মূল্য দেয়া। সময়কে কখনো অবহেলা করা যাবে না। তোমাদের একেকজনের মধ্যে বিস্ময়কর প্রতিভা লুকিয়ে আছে। প্রয়োজন শুধু জ¦লে ওঠা। এজন্য সততা, নিষ্ঠা আর কঠোর পরিশ্রম’। জীবনে হিংসা ও পরশ্রীকাতরতা পরিহারের আহ্বান জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘অহংকার জীবনের ধ্বংসের মূল। অহংকারী ব্যক্তি সমাজের কেউ পছন্দ করেন না। এমন কি আল্লাহ পছন্দ করেন না। শয়তান অহঙ্কার করে বেহশত থেকে বিতাড়িত হয়েছিল। কাজেই জীবনের সবসময় বিনয়ী হবে হতে। সকল পেশার মানুষকে সম্মান করা শিখতে হবে। সম্মানের চোখে দেখতে হবে। শিক্ষার্থীরা এখন বীজের মতো। বীজ থেকেই তোমারা ফলবান বৃক্ষ হয়ে উঠবে’।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেস-ইউআইটিএস’র ট্রাস্ট্রি বোর্ডের সদস্য এবং পিএইচপি ফ্লোট গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আমির হোসেন ও বাংলাদেশ সুফি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রুহুল আমিন প্রমাণিক।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন ক্রিয়েটিভ শিক্ষা পরিবারের উপদেষ্টা আফজাল হোসেন ও দি মখদুম ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি সুফি ডা. মো. সুরায়েত রহমান রক্তিম। পরে সুফি মুহাম্মদ মিজানুর রহমান কৃতী শিক্ষার্থীদের হাতে উপহার ও বৃত্তি প্রদান করেন।