সংগীত পরিবেশনে ‘অসৎ উদ্দেশ্য’ ছিল কি না খতিয়ে দেখছে পুলিশ

গ্রেপ্তার নয় দুজনকে আটক করা হয়েছে। খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না সজল দত্তকে

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেনউপকমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) মো. রইছ উদ্দিন। ছবি: সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক »

নগরীর রহমতগঞ্জের জে এম সেন হল পূজামণ্ডপের অনুষ্ঠান মঞ্চে ইসলামি সংগীত পরিবেশনের ঘটনায় কোনো অসৎ উদ্দেশ্য ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

শুক্রবার (১১ অক্টোবর) দুপুর ১২টায় দামপাড়া পুলিশ লাইনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নগর পুলিশের উপকমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) রইছ উদ্দিন এই তথ্য জানায়।

সিএমপি উপকমিশনার সাংবাদিকদের বলেন, ‘মহানগরের কোতয়ালি থানাধীন আন্দরকিল্লায় পূজা উদযাপন পরিষদ কর্তৃক জেএম সেন হল প্রাঙ্গণে পূজামণ্ডপ স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে শিল্পীদের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বী লোকজন পূজামণ্ডপে আসেন এবং অনুষ্ঠান উপভোগ করতে থাকেন। এরই মধ্যে পূজা আয়োজন কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সজল দত্ত চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির একদল শিল্পীকে অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করার জন্য অনুরোধ করেন।

‘তার অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে ওই শিল্পী গোষ্ঠীর ছয় সদস্য শহীদুল করিম (৪২), নুরুল ইসলাম (৩৪), আব্দুল্লাহ ইকবাল (৩০), রনি (২৮), গোলাম মোস্তফা (৩৬) ও মো. মামুন (২৭) পূজার অনুষ্ঠানে একটি ইসলামি গজল ও একটি বাউল গান পরিবেশ করেন।

‘এর মধ্যে একটি গানের ভাষায় শব্দ চয়ন সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বলে প্রতীয়মান হয়। ইতোমধ্যে অনুষ্ঠানে পরিবেশন করা গান দুটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।’

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এই ঘটনায় দুজনকে আটক করা হয়েছে। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আটক দুজন হলেন তানজিমুল উম্মাহ মাদ্রাসার শিক্ষক শহীদুল করিম ও দারুল ইরফান একাডেমির শিক্ষক নুরুল ইসলাম। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে নগরের পৃথক স্থান থেকে এই দুজনকে আটক করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে উপকমিশনার রইছ উদ্দিন বলেন, পূজা উদ্‌যাপন কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সজল দত্তের আমন্ত্রণে মণ্ডপের অনুষ্ঠান মঞ্চে চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির ছয়জন শিল্পী গান গেয়েছিলেন। সেই গানের কিছু কথা উপস্থিত মানুষের ধর্মানুভূতিতে আঘাত করেছে। এই ঘটনায় গতকাল রাতে অভিযান চালিয়ে দুজনকে আটক করা হয়। বাকিদেরও আটক করা হবে। আটক দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ঘটনার পেছনে কোনো অসৎ উদ্দেশ্য ছিল কি না, পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে। এই ঘটনায় একটি মামলা করার প্রক্রিয়া চলছে।

শুক্রবার (১১ অক্টোবর) সকালে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) কাজী তারেক আজিজ সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, এই ঘটনায় মামলা হয়েছে। দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার দুজনসহ মামলার আসামিদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংবাদ সম্মেলনে জানানো হবে। কিন্তু সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মামলার প্রক্রিয়া চলছে। আর দুজনকে আটক করা হয়েছে। এই বিষয়ে সাংবাদিকের প্রশ্নে নগর পুলিশের উপকমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) রইছ উদ্দিন জানান একটা ‘গ্যাপ’ হয়ে গেছে। তিনি এখন যেটা বলছেন সেটাই নিতে বলেছেন সংবাদকর্মীদের।

আটক দুজনের কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা আছে কি না—সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের উত্তরে রইছ উদ্দিন বলেন, এটিও তদন্তে আসবে। এ ছাড়া কেন চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির শিল্পীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, তা জানার জন্য পূজা উদ্‌যাপন কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সজল দত্তকে খোঁজা হচ্ছে। তবে তাঁকে পাওয়া যাচ্ছে না।