দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে করোনা বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটি কমপক্ষে ১৪ দিনের সম্পূর্ণ ‘শাটডাউনের’ সুপারিশ করেছে সরকারের কাছে। জরুরি সেবা ছাড়া যানবাহন, অফিস আদালতসহ সবকিছু বন্ধ রাখার পক্ষে মত দিয়েছে পরামর্শক কমিটি। কমিটির সুপারিশ ‘যৌক্তিক’ আখ্যা দিয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, সরকার বিষয়টি বিবেচনা করছে, এই ধরণের প্রস্তুতিও সরকারের রয়েছে বলে সংবাদ মাধ্যমে তিনি জানান।
এদিকে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বৈশ্বিকভাবে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু ধারাবাহিকভাবে কমলেও বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশে সংক্রমণ ও মৃত্যু দুই-ই বাড়ছে। করোনায় উদ্বেগসৃষ্টিকারী ৩টি ধরণ (যথা যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারত) বাংলাদেশে সক্রিয় বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে।
কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি কমিটি ৫০টির বেশি জেলায় অতি উচ্চ সংক্রমণ লক্ষ্য করা গেছে মর্মে বলেছে। তারা ভারতের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার পক্ষে। ভারতীয় ডেল্টা ধরণ বাংলাদেশে সামাজিক সংক্রমণের রূপ নিয়েছে। বৃহস্পতিবার শনাক্ত ৬ হাজার ছাড়িয়েছে, গতকাল মৃত্যু ১০৮ জন। সপ্তাহ ধরে এরকম উচ্চ সংক্রমণ ও মৃত্যু দেখা গেছে। বর্তমানে ঢাকার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাখতে প্রচেষ্টা নেওযা হলেও তা সর্বাংশে মানা হচ্ছেনা। দেশের অনেকগুলো জেলাÑউপজেলায় লকডাউন চললেও তা খুব একটা কার্যকর ফল দিচ্ছে না।
দেশের করোনা পরিস্থিতির উচ্চ সংক্রমণ মোকাবেলায় আমাদের স্বাস্থ্যসেবা অপ্রতুল প্রমাণিত হয়েছে। অধিক জনসংখ্যার দেশ হিসেবে যে স্বাস্থ্যসেবা বিদ্যমান থাকার কথা তার ঘাটতি রয়েছে। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে এখন রোগীর চাপ বাড়ছে যা সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। জেলা উপজেলায় যেভাবে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে সেভাবে আমাদের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা প্রস্তুত নয়। করোনার দেড় বছরে আমাদের স্বাস্থ্যসেবার খুব একটা উন্নতি নেই। তদুপরি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতা, পরামর্শক কমিটির সুপারিশ যথাসময়ে আমলে না নেওয়া, অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, বরাদ্দ সম্পূর্ণ খরচ করতে না পারা-এসব বিষয়ে যথোচিত দৃষ্টি দিয়ে প্রতিকারের ব্যবস্থা করতে হবে। উপজেলায় স্বাস্থ্যসেবা তেমন না থাকায় মানুষ রাজধানী ও জেলা শহরে আসতে থাকবে এটি তো জানা কথা। স্বাস্থ্য অধিদফতর এদিকে দৃষ্টি দেয়নি কেন? শাটডাউনের সময় জরুরি সেবা, কর্মহীন, গরিব মানুসের দৈনন্দিন খাবারের সংস্থান, কমিউনিটি পর্যায়ে স্বেচ্ছাসেবী নিয়ে প্রস্তুত থাকা-এসব বিষয়ে প্রশাসনকে দৃষ্টি দিতে হবে। সামনে ঈদুল-আজহার সময় জনচলাচল কিভাবে সামাল দেয়া যাবে তাও চিন্তায় রাখতে হবে?
কোভিড থেকে পুর্ণ মুক্তির জন্য ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে হবে। এ জন্যে বিদেশ থেকে টিকা সংগ্রহ, লাইসেন্সের মাধ্যমে দেশে টিকা উৎপাদন ও নিজস্ব টিকা তৈরিতে সরকারি- বেসরকারি গবেষণায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি পরামর্শক কমিটি সমর্থন করে বলে জানিয়েছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলিকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
মতামত সম্পাদকীয়