সুপ্রভাত ডেস্ক »
পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ষোলো বছর পার হলেও এখনো প্রকৃত ষড়যন্ত্রকারীরা অধরাই রয়ে গেছে, অথচ শত শত নির্দোষ বিডিআর সদস্য বছরের পর বছর কারাগারে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন বিডিআর কল্যাণ পরিষদের সভাপতি মো. ফয়জুল আলম।
বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিডিআর কল্যাণ পরিষদ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে ফয়জুল আলম বলেন, যাদের হাতে প্রকৃতপক্ষে এই নারকীয় হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা হয়েছিল, তারা আজও বিচারের মুখোমুখি হয়নি। বরং যেসব সৈনিকদের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট প্রমাণ নেই, তাদেরই নানা অজুহাতে দোষী সাব্যস্ত করে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের দায় শুধুমাত্র বিডিআর সদস্যের ওপর দেওয়া হয়েছে, যা ইতোমধ্যে বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে এবং সেনা অফিসারদের টকশোতে উঠে এসেছে। তারা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। আমরা চাই, সঠিক তদন্তের মাধ্যমে এই হত্যাকারীদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে প্রচার করা হোক। এ হত্যাকাণ্ডের দায়ে সারা বাংলাদেশে পিলখানা এবং পিলখানার বাইরে ১৮টি বিশেষ আদালত তৈরি করে ৫৪টি স্থাপনায় ১৮ হাজার ৫১৯ জন বিডিআর সদস্যকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং বর্তমানে ৫০ জন বিডিআর সদস্যের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে বন্দি রাখা হয়েছে। কিছু লোকের জামিন দেওয়া হয়েছে। আমরা প্রধান উপদেষ্টার কাছে জানতে চাই, কার ইশারায় কার জামিন আটকে রাখা হয়েছে। আমাদের দাবি, আগামীকাল কোর্টে যেসব ভাইদের জামিন স্থগিত আছে, তাদের প্রত্যেককে কোর্টের মাধ্যমে জামিন দিতে হবে, নাহলে আমরা পুনরায় আন্দোলনে নামব।
বিডিআর কল্যাণ পরিষদের সভাপতি বলেন, হত্যাকাণ্ডকে বিদ্রোহী হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার জন্য ছয়–সাত দিন আগে একজন সেনা অফিসার মেজর রফিক সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন। সেই ভিডিওতে বলা হয়েছে, তৎকালীন বিডিআরের অফিসাররা ২২ তারিখে পিলখানায় মিটিং করেছেন। আমরা জানাতে চাই, কোন অফিসারকে সেক্টর কমান্ডার ছুটি দিতে পারেন না। এটি স্পষ্ট করে দেখাচ্ছে যে হত্যাকাণ্ড ঘটানোর জন্য সাহায্য করা হয়েছে। আমরা চাই, মিথ্যা বিদ্রোহের দায় দিয়ে যাদের চাকরি এবং জীবন ধ্বংস করা হয়েছে, তাদের অবিলম্বে পূর্ণ সুযোগ-সুবিধাসহ চাকরিতে বহাল রাখা হোক এবং যারা নির্দোষ, তাদেরকে দ্রুত জামিনে মুক্তি দিতে হবে। আমরা মজলুম বিডিআরের পক্ষ থেকে বলছি, আমাদের ন্যায্য অধিকার না ফিরিয়ে দিলে, আমরা দ্বিতীয়বারও মরার জন্য প্রস্তুত। আমাদের দাবি, নিরপরাধ বিডিআর সদস্যদের দ্রুত মুক্তি এবং সঠিক বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যরা বলেন, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পরপরই একটি পরিকল্পিত বিচার প্রক্রিয়া সাজানো হয়। এতে মূল কুশীলবদের আড়াল করে সাধারণ সদস্যদের লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়। রাষ্ট্রীয়ভাবে বিডিআর সদস্যদের প্রতি অবিচার করা হয়েছে। যারা সীমান্তে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় জীবন বাজি রেখে দায়িত্ব পালন করেছেন, তাদের প্রতি যথাযথ মর্যাদা দেখানো হয়নি। বরং একটি বিশেষ মহলের স্বার্থ রক্ষায় তাদের অন্যায্যভাবে অপরাধী বানানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলন শেষে বিডিআর কল্যাণ পরিষদের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি দাবি উত্থাপন করা হয়। দাবিগুলো হচ্ছে— অন্যায্য মামলাগুলো বাতিল করা, ভুয়া অভিযোগে আটক সদস্যদের মুক্তি দেওয়া, যারা সাজা শেষ করেছেন অথচ মুক্তি পাননি তাদের অবিলম্বে মুক্ত করা, চাকরিচ্যুতদের পুনর্বহাল করা এবং নিহত ও ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও ক্ষতিপূরণ দেওয়া।
সংবাদ সম্মেলনে বিডিআর পরিবারের সদস্য জিল্লুর রহমান, মো. ফারুক, মো. বুলবুল, মো. ফাইজুলসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।