নিজস্ব প্রতিবেদক, খাগড়াছড়ি »
খাগড়াছড়ি জেলা সদরের গুগড়াছড়ি এলাকার ধর্মসুখ বিহারের অধ্যক্ষ বিশুদ্ধা মহাথেরোকে হত্যা করেছে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা। তাঁর বয়স হয়েছিল ৫২ বছর। তিনি ১৯৯১ সালে নবম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় বৌদ্ধ ধর্মীয় অনুশাসন মেনে ভিক্ষু জীবন যাপন করছিলেন। রোববার গভীর রাতে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে বলে ধারণা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। হত্যাকারীরা ভান্তে’র দুটো মোবাইলও নিয়ে গেছে।
বিশুদ্ধা ভান্তে’র নির্মম হত্যাকাণ্ডের খবর শুনে হাজারো মানুষ ভিড় করেন খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি সড়ক লাগোয়া গুগড়াছড়ি ধর্মসুখ বৌদ্ধ বিহারে। এসময় দায়ক-দায়িকা ও স্বজনদের কান্নায় হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। ত্রিশ বছর ধরে অকৃতদার এই ধর্মীয় গুরু ধর্ম প্রচারের পাশাপাশি দরিদ্রদের শিক্ষা সহায়তার জন্য অনেকের কাছে দানবীর ভান্তে নামে পরিচিত ছিলেন বলে জানান বিশুদ্ধা ভান্তে’র ভক্ত শিষ্যরা।
খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আব্দুর রশিদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে গিয়ে বলেন, মরদেহ দেখে ধারালো কিছুর আঘাতেই ভিক্ষুকে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করছেন। অপরাধীদের সনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।
নিহতের ছোটভাই পাইঅং মারমা জানান, বিশুদ্ধা ভান্তে রোববার সকালে জেলা সদরের ভাইবোনছড়া এলাকার একটি বৌদ্ধ বিহারের একজন সতীর্থ’র দাহ ক্রিয়ায় যোগ দিয়ে রাত আটটার দিকে ধর্মসুখ বিহারে ফেরেন। বিহারে তিনি একাই রাত্রিযাপন করতেন। সকাল সাতটার দায়িকারা ছোয়াইঙ (খাবার) দিতে গিয়ে দেখেন ভান্তে তাঁর নিজের শয়নকক্ষে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন। তাঁর মাথার বামপাশে এবং পিঠে ধারালো কিছুর আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে।
নিহত ভান্তে’র ভাতিজা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য পোস্ট গ্রাজুয়েট করা থুইচিং মারমা জানান, কাকা অত্যন্ত দয়ালু মানুষ ছিলেন। সামর্থবান দায়ক-দায়িকাদের দেয়া টাকাকড়ি তিনি মানুষের মাঝে বিলিয়ে বেড়াতেন। সংসারত্যাগী এই মানুষটি দরিদ্র শিক্ষার্থীদের অর্থ যোগানোর অন্যতম ভরসা ছিলেন।
খাগড়াছড়ি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আম্যে মারমা জানান, খবর পেয়ে তিনি ভান্তেকে দেখতে যান। তখন মরদেহের কাছে একটি ইটের ভাঙা দুটো অংশ দেখতে পান। তাঁর ধারণা ডাকাতি করতে এসে ভান্তেকে ইটের আঘাতে হত্যা করা হয়েছে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান চাইথোঅং মারমা বলেন, একজন সর্বত্যাগী নির্লোভ ধর্মীয় গুরু’র জীবন প্রদীপ যারা নিভিয়ে দিয়েছেন; প্রশাসনের কাছে তাদের দ্রুত সনাক্ত এবং হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি জানাচ্ছি।
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্ক’র সভাপতি কংজরী চৌধুরী বলেন, যে বা যারা এমন হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, তারা নিঃসন্দেহে অমানুষ-অপশক্তি। তাদেরকে যতো দ্রুত সম্ভব আইনের আওতায় আনার পাশাপাশি সকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের নিরাপত্তা জোরদার করা জরুরি।
পুলিশ সুপার মো. আব্দুল আজিজ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি অপরাধীদের সনাক্ত এবং আইনি পদক্ষেপ দ্রুত কার্যকরের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
এদিকে ধর্মসুখ বিহারের অধ্যক্ষ বিশুদ্ধা মহাথেরো হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন খাগড়াছড়ি সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্মলেন্দু চৌধুরী এবং পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সঞ্জীব ত্রিপুরা এবং সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিত রায়দাশ।