সুপ্রভাত ক্রীড়া ডেস্ক :
সফরের জন্য বাংলাদেশকে যেসব শর্ত দিয়েছে শ্রীলঙ্কা, তাতে বিস্ময় প্রকাশ করছেন বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান। এত সব শর্ত মেনে শ্রীলঙ্কা সফরে বাংলাদেশ দল যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। খবর বিডিনিউজের।
বিসিবিতে গতকাল সোমবার দুপুরে বিসিবির কয়েকজন পরিচালকের সঙ্গে আলোচনার পর সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে নিজেদের সিদ্ধান্তের কথা জানান নাজমুল হাসান।
‘আমরা একটি বার্তাই ওদেরকে দিতে চাই, ওরা যে শর্তাবলী দিয়েছে, এটা ইতিহাসে বিরল। এটা দিয়ে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ সম্ভব নয়। এই বার্তাই ওদের দিতে চাই। তারপর ওরা যদি বলে যে, ‘আসো আলাপ আলোচনা করি’, তখন আমরা দেখব কী বলা যায় বা কোথায় শিথিল করতে বলব। তবে এই কন্ডিশনে খেলা হবে না।’
তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলতে এই মাসের শেষ দিকে শ্রীলঙ্কায় যাওয়ার কথা বাংলাদেশ দলের। জাতীয় দলের সঙ্গে যাওয়ার কথা বাংলাদেশ হাই পারফরম্যান্স (এইচপি) দলেরও। সেখানে গিয়ে করোনাভাইরাস পরীক্ষায় নেগেটিভ হওয়া সাপেক্ষে তৃতীয় দিন থেকেই অনুশীলনে নামতে পারবে বাংলাদেশ দল, এমনই আলোচনা ছিল এতদিন। কিন্তু শ্রীলঙ্কান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে নতুন নির্দেশনার পর এসএলসি চিঠি পাঠয় বিসিবিকে। সেখানে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনসহ নানা শর্তের কথা উল্লেখ করা হয়।
১৪ দিন কোয়ারেন্টিন করতে হলে টেস্ট সিরিজের প্রস্তুতির জন্য পর্যাপ্ত সময়ই পাবে না বাংলাদেশ দল। এখানে বাংলাদেশ কোনো আপোস করবে না বলেই পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন বিসিবি সভাপতি।
‘আমরা আগে যা ভেবেছিলাম আর ওরা কালকে যে চিঠি এসেছে, এটা তার ধারেকাছে তো নাই-ই, অন্য যেসব দেশে খেলা হচ্ছে, তাদের সঙ্গেও মিল নেই। কতগুলি ব্যাপার একেবারেই আমাদের জন্য নতুন। অনেক দেশে ৭ দিন কোয়ারেন্টিন হচ্ছে, তখনও নিজেদের মধ্যে প্র্যাকটিস করতে পারছে, জিম ব্যবহার করতে পারছে। কালকে শ্রীলঙ্কা যা বলল, তাতে ১৪ দিন কেউ হোটেলে ঘর থেকেই বের হতে পারবে না। খাওয়া-দাওয়াও ঘরে করতে হবে।’
‘ওখানে গিয়ে আমাদের দল থাকার কথা ডাম্বুলায়, কলম্বোয় নয়। এমনিতেই ওই জায়গা আইসোলেটেড। সেখানে রুম থেকে বের হতে পারবে না, আমরা আশ্চর্য হয়েছি। দ্বিতীয়ত, সাধারণত যা হয়, সফরে গেলে বল থ্রো করার জন্য থ্রোয়ার দেবে, নেট বোলার দেবে, যে কোনো দেশে গেলেই দেয়। ওরা এটাও দিচ্ছে না। সেটাও নাহয় বুঝলাম ঠিক আছে। কিন্তু আমাদের এখান থেকেও নিতে দেবে না। ওরা কী বলতে চাচ্ছে, আমি বুঝছি না। এটা তো ছেলেখেলা নয়, আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচ!’
জাতীয় দল ও এইচপি দলের ক্রিকেটার, সাপোর্ট স্টাফসহ ৬৫ জনর বহর নিয়ে শ্রীলঙ্কায় যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল বাংলাদেশ দল। টেস্ট সিরিজের প্রস্তুতির জন্য নিজেদের মধ্যে ম্যাচ খেলারও কথা। কিন্তু নতুন করে শ্রীলঙ্কা জানিয়েছে, দলে ৩০ জনের বেশি নেওয়া যাবে না সফরে। এভাবে সফর কীভাবে সম্ভব, ভেবে পাচ্ছেন না নাজমুল হাসান।
‘৩০ জনের মধ্যে নেট বোলার, থ্রোয়ার, সিকিউরিটি, মেডিক্যাল টিম, সবই আমাদের নিতে হবে। তাহলে ক্রিকেটারই তো নিতে পারব না! ওরা বলেছিল যে ওদের ওখানে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি ভালো। সেজন্যই আমরা বড় স্কোয়াড নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলাম। এখন প্র্যাকটিসই করতে দিচ্ছে না। যেখানে আমাদের ক্রিকেটাররা ৭ মাস ধরে খেলায় নেই, ওখানে গিয়েই প্র্যাকটিস করতে পারব না, এটা তো হয় না।’
‘এসব চিন্তা করে আমরা সেটিই আজকে ঠিক করলাম যে, আমরা জানিয়ে দেব, আমাদের চিন্তাধারার সঙ্গে ওদের বাস্তবের কোনো মিল নেই। ওরা যেটা দিয়েছে, এটা মেনে কোনো অবস্থাতেই টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ খেলা সম্ভব নয়। তার পর দেখি ওরা কী বলে।’
সামনেই লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগ আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শ্রীলঙ্কার বোর্ড। সে কারণেই বাংলাদেশকে সফরে নেওয়ার আগ্রহ কমে গেছে কিনা এই প্রশ্নও উঠল সংবাদ সম্মেলনে। বিসিবি প্রধান সরাসরি উত্তর না দিলেও তার কথায় মিশে থাকল অনেক জবাব।
‘এলপিএল ওরা কিভাবে করবে, জানি না। আমাদের একটা দলকেই সামলাতে পারছে না শ্রীলঙ্কার সরকার। তাহলে এতগুলো ফ্র্যাঞ্চাইজিকে কীভাবে সামলাবে!’
বিসিবির চিঠির পর শ্রীলঙ্কার অবস্থান কেমন হবে, সেটা নিয়েও আপাতত ভাবনা নেই বলে জানালেন বিসিবি প্রধান। বাংলাদেশ নিজেদের অবস্থান থেকে সরবে না, জানিয়ে দিলেন তিনি।
‘আশা করি কাল-পরশু ওদের উত্তর পাব। কালকেই পাওয়া উচিত। অথবা ওরা হয়তো কারও সঙ্গে কথা বলবে, সময় নেবে সেটা বলতে পারছি না।’
‘আমরা আমাদের প্রোগ্রাম নিয়ে চিন্তা শুরু করেছি। আজকে বলেও দিয়েছি। আমরা এগিয়ে যাব। ওরা যত দ্রুত জানায়, তত ভালো। আমরা একবার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলে আর পেছাব না।’
খেলা