মাহমুদ নাঈম :
ফরিদাকান্দা ছোট্ট গ্রামের একটি মেয়ে শ্রাবণী। মেয়েটা ভীষণ লাজুক, ফুটফুটে একটি শিশু। মিয়া ভাই শখ করে নাম দিয়েছে মেঘলা। হয়তো সেদিন গগন ছিল মেঘাচ্ছন্ন। তবে বাবার মেঘলা নাম মোটেই পছন্দ নয়।বাবা আদর করে শ্রাবণী ডাকে। বাবা একটু বদমেজাজি। মুহূর্তে রেগে যায়। বাবার সঙ্গে শ্রাবণী প্রয়োজন ছাড়া খুব একটা কথা বলে না, বাবাকে ভীষণ ভয় পায়।
শ্রাবণী বৃষ্টি দেখতে খুব পছন্দ করে। ঢেউতোলা টিনের চাল থেকে নির্গত বৃষ্টি। বৃক্ষের পাতা জুড়ে ছুঁইছুঁই জল দেখতে ওরখুব পছন্দ। এসব যেন শ্রাবণীর হৃদয়েকে পালতোলা নৌকার মতো ভাসিয়ে নিয়ে যায় সাতসমুদ্দুরে। একদিন শ্রাবণীকে বাবা অকারণে খুব বকা দিল। মোটেও কোনো অন্যায় ছিল না ওর। বকা খাওয়ায় শ্রাবণীর গোলাটে মুখখানা গম্ভীর হয়ে গেল। সেদিন আবার সুয্যিমামাও আড়ি বেধেছে। আকাশে কালো-কালো মেঘ জমেছে।
মনে হচ্ছে আজ এক পশলা বৃষ্টি হবে। শ্রাবণী জানালা দিয়ে আকাশপানে জমে থাকা মেঘালয়কে প্রশ্ন করতে লাগলো, ও মেঘ মেঘ তুমি আকাশের বুকে জমে থাকো কেন! তোমার এত কেন বিষাদ! তোমার কেন এত অভিমান!
মেঘ কি আর শুনে শ্রাবণী মেয়ের কথা!
এমনি সময় এক পশলা ধুম বৃষ্টি শুরু হলো। ওপাশ থেকে বাবা এসে বললো, শ্রাবণী চলো, তোমায় নিয়ে বৃষ্টিতে আম কুড়াতে যাই আমবাগানে। শ্রাবণী একথা শুনে হতভম্ব। চোখে-মুখে হাসির রেখা ফুটে ওঠে। সত্যি কি বাবা আমায় ডাক দিয়েছে!
তৎক্ষণাৎ দৌড়ে ছুটে চলে গেলে বৈশাখী বৃষ্টির জলে গা ভিজাতে। শুরু হয়ে গেল বাবা-মেয়ের আমকুড়ানো। কুড়িয়ে ঝুড়িভরতি করে নিয়ে এলো কাঁচাপাকা আম।
রাগী বাবাদের মাঝেও এতো সুখ পাওয়া যায় সেটা কল্পনায়ও ছিল না। সব বাবা এমনি হয়। রাগী হলেও ভিতরে ভিতরে আনন্দ-উল্লাস, দুষ্টুমিও রয়!