রুমন ভট্টাচার্য :
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব শ্রীশ্রী শ্যামা পূজা ও দীপাবলি উৎসব আজ। কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে সাধারণত শ্যামা পূজা বা কালীপূজার আয়োজন করা হয়। বিশুদ্ধ পঞ্জিকামতে আজ দুপুর ২টা থেকে অমাবস্যা তিথির আরম্ভ হয়ে রোববার সকাল ১১টা ৩৭ মিনিট পর্যন্ত থাকবে।
এছাড়া আজ সন্ধ্যায় হিন্দুদের প্রতিটি ঘরে ঘরে প্রদীপ জ্বেলে আয়োজন করা হবে দীপাবলী উৎসবের। বাংলায় ‘দীপাবলি’ হিন্দুতে ‘দিওয়ালি-যার অর্থ প্রদীপের সারি। দীপাবলির আলোয় দূর হবে সকল অশুভ শক্তির, ঘটবে শুভ শক্তির আবির্ভাব। দীপাবলি হচ্ছে শ্যামা পূজার অন্যতম আকর্ষণ।
দীপাবলী সনাতনধর্মীদের উৎসব বিশেষ। এটি দেওয়ালি, দীপান্বিতা, দীপালিকা, সুখরাত্রি, সুখসপ্তিকা এবং যক্ষরাত্রি নামে অভিহিত। দীপাবলি শুধু সনাতনধর্মীদের নয়, শিখ এবং জৈন ধর্মাবলম্বীদেরও অনুষ্ঠান। বাংলাদেশে দীপাবলির দিনে কালী পূজা হয়-তাই দীপাবলি আর কালী পূজা একইসূত্রে গাঁথা।
পুরাণ মতে কালী দেবী দুর্গারই অপর এক শক্তি। সংস্কৃত ভাষার ‘কাল’ শব্দ থেকে কালী নামের উৎপত্তি। কালী পূজা শক্তির পূজা ও শক্তির আরাধনা। জগতের অশুভ শক্তিকে পরাজিত করে শুভশক্তির বিজয়ের মধ্যেই রয়েছে কালীপূজার মাহাত্ম্য। কালী দেবী তার ভক্তদের কাছে শ্যামা, আদ্যা মা, তারা মা, চামুণ্ডা, ভদ্রকালী, মহামায়াসহ বিভিন্ন নামে পরিচিত।
এদিকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দুর্গাপূজাকে অনুসরণ করে শ্যামা পূজা উদযাপনের নির্দেশনা দিয়েছে মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদ।
মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট চন্দন তালুকদার সুপ্রভাতকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় পূজা কমিটির নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা যেভাবে দুর্গাপূজা উদযাপন করেছি, ঠিক একইভাবে শ্যামা পূজা উদযাপনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, নগরীর যেসব মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে তার অধিকাংশ মণ্ডপেই আয়োজন করা হয়েছে শ্যামাপূজার। তবে করোনা মহামারীর কারণে প্রতিটি পূজামণ্ডপেই আয়োজন সীমিত করা হয়েছে।
এদিকে নগরীর জে এম সেন হল প্রাঙ্গণ, সদরঘাট কালী বাড়ি, হাজারী লেইন, টেরীবাজার রঘুনাথবাড়ী, চট্টেশ্বরী কালী বাড়ি, গোলপাহাড় মহাশ্মশান কালী বাড়ি, গোসাইলডাঙ্গা মহাশ্মশান কালী মন্দির, শ্রীশ্রী আনন্দময়ী কালী মাতা মন্দির, করুণাময়ী কালী বাড়ি, ব্রহ্মময়ী কালী বাড়িসহ অন্যান্য মন্দিরেও এই পূজা অনুষ্ঠিত হবে। পূজা উপলক্ষে মন্দিরগুলোকেও সাজানো হয়েছে রঙিন আলোয়। পূজামণ্ডপগুলোর সামনে নির্মাণ করা হয়েছে তোরণ, লাগানো হয়েছে ব্যানার। পূজা আরম্ভ হবে আজ রাত ১২ টায়। পূজা শেষে ভক্তদের দেওয়া হবে অঞ্জলি। এছাড়াও বিভিন্ন মন্দির ও পূজামণ্ডপে রয়েছে পাঠাবলীর আয়োজন।
শ্রীশ্রী আনন্দময়ী কালীমাতা মন্দিরের প্রধান পুরোহিত শ্যামল ভট্টাচার্য জানান, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে পূজার দিন সকাল থেকেই মন্দিরে মায়ের আবাহন, বাল্যভোগ, চন্ডীপাঠ, গীতাপাঠ, ধর্মীয় সঙ্গীত, মায়ের নিত্য পূজা ও ভোগ, প্রদীপ প্রজ্জ্বলনসহ নানা ধর্মীয় কর্মসূচি রয়েছে। তবে এবার করোনা মহামারীর কারণে ভক্তদের মাঝে প্রসাদ বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়নি। এছাড়া মাস্ক ছাড়া মন্দিরে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।’