মো. তৈয়বুর রহমান ভূঁইয়া :
এক গেরস্তের বাড়িতে একটি ছাগল ছিল। সে ছিল একাকী। তার কোনো বন্ধু ছিল না। তাই সে প্রায়ই একা-একা হাঁটাহাঁটি করতো আর আফসোস করতো, ইশ! আমার যদি বন্ধু থাকতো! তাহলে আর একা থাকতে হতো না। আমরা দুই বন্ধু মিলে পুরো এলাকা টইটই করে ঘুরে বেড়াতাম আর গাছের পাতা চিবুতাম।
একদিন ছাগলটি হাঁটতে-হাঁটতে এক নদীর কাছে চলে আসল। নদীর টলমলে পানি দেখে সে খুব খুশি হলো। তাই সে একদম নদীর ধারে আসল আর অমনি দেখতে পেল পানিতে তার মতোই আরেকটা ছাগল দেখা যাচ্ছে। এটা দেখে একাকী ছাগলটি ভাবল, ওই ছাগলটিকে যদি বাঁচাই তাহলে আর আমায় একা থাকতে হবে না। আমরা দুজন সবসময় বন্ধু হয়ে এক সাথে থাকব। কী মজা! কী মজা!
যেই ভাবনা সেই কাজ। তাই সে পানিতে ডুবুডুবু থাকা সেই ছাগলটিকে বাঁচানোর জন্য যেই পা বাড়াল অমনি সেও পানিতে ডুবে যেতে লাগল। কিন্তু বোকা ছাগলটি বুঝল না যে এটা তারই প্রতিচ্ছবি ছিল, অন্য কোনো ছাগল ছিল না।
দূরের ধানগাছের ফাঁকে বসে এসব দৃশ্য দেখছিল এক শৈয়াল। ‘আহা! ছাগলটি কী বোকা! যাক, অনেকদিন পর আজ ছাগলের মাংস খাওয়া যাবে। কতদিন ধরে ছাগলের মাংস খাওয়া হয় না’, এই বেবে পাঁজি শেয়ালটি আনন্দে লাফিয়ে উঠল। চটজলদি শেয়ালটি দৌড়ে গিয়ে তলিয়ে যেতে থাকা সেই ছাগলটির গলায় কামড় বসিয়ে পানি থেকে প্রায় মাটিতে এনেই ফেলল। আর অমনি ছাগলটি ভাবল, আজ রক্ষা নেই! শেয়ালটি আজ আমায় খেয়েই ফেলবে। তাই ছাগলটি উপায় না পেয়ে ভ্যা-ভ্যা করে ডাকতে শুু করল। কিন্তু ছাগলটির গলা শেয়ালটি কামড়ে ধরায় কী রকম বিকট শব্দ হতে লাগল। ছাগলটির এমন শব্দ শুনে শেয়ালটি ভয় পেয়ে গেল। ‘বাপরে! এ কেমন ছাগলে রে! ছাগল তা ভ্যা-ভ্যা করে ডাকে কিন্তু এটা এমন ভয়ংকর করে ডাকে কেন? নিশ্চয়ই এটা ছাগল নয়, আস্ত জানোয়ার। প্রাণে বাঁচি তো আগে। দৌড় লাগাই!’
এই বলে দৌড়ে পালিয়ে গেল শেয়ালটি। সেই শেয়ালের এ রকম পালিয়ে যাওয়া দেখে এলাকার অন্য শেয়ালরা ভাবল, নিশ্চয়ই এলাকায় কোনো বিপদ হয়েছে। নয়তো সে পালিয়ে যাবে কেন। এই এলাকাটা বোধ হয় আমাদের জন্য নিরাপদ নয়। তারপর এলাকার সব শেয়াল সেই শেয়ালটির পিছন-পিছন দৌড় লাগাল। আর অমনি কয়েক মিনিটের মধ্যে সব শেয়াল এলাকা থেকে উধাও। শেয়ালদের এমন লেজ গুটিয়ে পলায়ন দেখে সেই ছাগলটি মনের সুখে হাসতে লাগল। তারপর কোনো দিনই আর সেই এলাকায় কোনো শেয়াল দেখা গেল না।
এভাবে সেই ছাগলটির কারণে এলাকার মানুষ শেয়ালদের জ্বালা-যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেল।