সারাদেশে বিএনপি-জোট সরকারের আমলে সিরিজ বোমা হামলার প্রতিবাদ বার্ষিকীতে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় বক্তাগণ বলেন, ওই ঘটনা ছিল বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ উত্থানের অশনি সংকেত। শোকাবহ আগস্ট মাসে অনেক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এরই ধারবাহিকতায় ২১ আগস্টের মর্মান্তিক ট্রেজেডির সূচনা। মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ একাত্তরের পরাজিতশক্তির ছোবল থেকে মুক্ত নয়। এর বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ লড়াই চাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে জঙ্গিবাদ অবরুদ্ধ। তবে শিকড় নির্মূল হয়নি।
সভাপতির বক্তব্যে মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ২০০৪ সালে জঙ্গিবাদের চরম আস্ফালন আমরা দেখেছি। বিএনপি-জামায়াত জোটের মন্ত্রী, এমপি এবং জিয়ার নষ্টদুলাল তারেক জিয়া এই জঙ্গিবাদের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষক এবং বাঙালি জাতিসত্তার ধ্বংসকামী ভয়ঙ্কর শত্রু। নিয়তির পরিহাস, তারেক জিয়া হাজার অপকর্মে দ-িত সাজাপ্রাপ্ত আসামি হয়েও একটি সভ্যদেশ বলে কথিত রাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছেন। তাই বলতে হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার অপচেষ্টা ও ষড়যন্ত্র এখনো চলছে।
মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, বিপ্লবতীর্থ চট্টগ্রামের ধর্মপ্রাণ মানুষকে ধর্মের মূল বাণীচ্যুত করে জঙ্গিবাদীরা এই চট্টগ্রামে সংগঠিত হয়েছিল। এর বিরুদ্ধে রাজপথে প্রতিবাদ-প্রতিরোধের ব্যারিকেড তৈরি করেছিল মহানগর আওয়ামী লীগ। তাই মহানগর আওয়ামী লীগের রাজপথের সৈনিকেরা ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ে নেতৃত্বের জায়গায় এসে গেলে দল আরো গতিশীল হবে। এই গতিশীলতা রক্ষায় আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দায়বদ্ধতা থেকে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ত্যাগী ও পরীক্ষিতদের আমলে আনতে হবে। তিনি বলেন, দলের ভিতরে পছন্দ-অপছন্দ ব্যাপারটি ব্যক্তিক দন্দ্ব কিন্তু তা অপরিণামদর্শী। তাই দেখা যাচ্ছে, আমরা যতটা নিজেদের সমালোচনা করছি, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ততটা নয়। আমি স্বীকার করি, ছোটখাটো ভুলভ্রান্তির তাৎক্ষণিক সমাধান হচ্ছে না বলে বিভক্তি-বিভাজন তৈরি হচ্ছে। এর পরিণতি শুভ নয়। আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই, একাত্তরের পরাজিতশক্তি ৭৫’র ১৫ আগস্ট এবং ২০০৪ সালে আগস্ট মাসে যা করতে চেয়েছিল, তারা তাতে ব্যর্থ হয়েছে। এখন তাদের টার্গেড প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে জঙ্গিবাদ কোণঠাসা হলেও শিকড় নির্মূল হয়নি। তবে শেখ হাসিনাই তা নির্মূল করবেন। এ শিকড় নির্মূল করাটাই আমাদের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ সহসভাপতি ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন কবি শামসুর রাহমানের কবিতা থেকে উদ্ধৃত করে বলেন, শত্রুকে তুমি ক্ষমা করেছ, কিন্তু শত্রু তোমাকে ক্ষমা করেনি- এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। আজ মনে রাখতে হবে, শত্রু পেছনে লেগে আছে। সেই ৭৪’র কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ, ৭৫’র ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা, ২০০৪ সালের এই আগস্ট মাসেই ১৭ তারিখে সিরিজ বোমা হামলা এবং ২১ আগস্ট জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা অপচেষ্টা একই ধারাবাহিকতার অসম্পূর্ণ নীলনকশা। এ কারণে আমাদের চোখ-কান খোলা রেখে দলের সাংগঠনিক ভিত্তিকে বলিষ্ঠ করতে হবে। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও আসন্ন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এম. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, আমরা দৃশ্যমান প্রতিপক্ষকে সহজে চিনি ও জানি। তবে ঘরের শত্রু বিভীষণদের জানি না, চিনি না। এরা যে কোনো সময় ফণা তুলবে। তাই ফণা তোলার আগেই আঘাত করতে হবে। আমাদের মধ্যে যতই ভিন্নতা থাকুক, পার্থক্য থাকুক, মিলেমিশে থেকে দলকে ও দেশকে ভালোবাসতে হবে।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিক আদনান-এর সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন মহানগর আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, সাংগঠনিক সম্পাদক চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, দপ্তর সম্পাদক হাসান মাহমুদ চৌধুরী শমসের, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মশিউর রহমান চৌধুরী।
সভামঞ্চে উপস্থিত ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা আলহাজ শফর আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আলহাজ শফিকুল ইসলাম ফারুক, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক মো. হোসেন, শ্রম সম্পাদক আবদুল আহাদ, নির্বাহী সদস্য এম এ জাফর, আবুল মনসুর, আলহাজ পেয়ার মোহাম্মদ, বখতিয়ার উদ্দিন খান, সাইফুদ্দিন খালেদ বাহার, মহব্বত আলী খান, হাজি বেলাল আহমদ, হাজি ছিদ্দিক আলম, হাজি আবু তাহের, হাজি মো. ইলিয়াছ, রেজাউল করিম কায়সার, হাজি নুরুল আমিন, আবছার উদ্দিন চৌধুরী, হাজি আবুল কাশেম, সৈয়দ মো. জাকারিয়া, মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, ইকবাল হাসান, আবু তৈয়ব ছিদ্দিকী প্রমুখ। বিজ্ঞপ্তি