সুপ্রভাত ডেস্ক »
সরকার পতনে বিএনপির কর্মসূচি ঘোষণার দিন ‘এক দফা’র ঘোষণা এল ক্ষ মতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও। দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপির এক দফা শেখ হাসিনার পদত্যাগ, আর আমাদের এক দফা শেখ হাসিনা ছাড়া কোনো নির্বাচন নয়।’ বিএনপি যে এক দফা ঘোষণা করেছে, সেটি কাদেরের দৃষ্টিতে ‘কাদা-পানিতে আটকে গেছে।’
বুধবার বিকালে গুলিস্তানে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেইটে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর আওয়ামী লীগের আয়োজনে হয় ‘শান্তি সমাবেশ’। সেখানেই এক দফার ঘোষণা দেন ওবায়দুল কাদের।
একই সময়ে দেড় কিলোমিটার দূরে নয়া পল্টনে বিএনপির সমাবেশ থেকে সরকারের পদত্যাগের ‘এক দফা’ দাবিতে আন্দোলনের ঘোষণা আসে।
তবে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঘোষণা করেন অনেকগুলো দাবি। যেমন: সংসদ ভেঙে দেওয়া, নির্বাচনকালীন ‘নিরপেক্ষ ’ সরকার গঠন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সাজা বাতিল ইত্যাদি।
বিএনপির সমাবেশ থেকে ‘নমনীয়’ কর্মসূচির ঘোষণা আসে; আগামী ১৮ ও ১৯ জুলাই ঢাকাসহ সব বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে মার্চ ও পদযাত্রার ডাক দেন ফখরুল।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের বাংলাদেশ সফরের মধ্যে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের পাল্টাপাল্টি এই কর্মসূচি নিয়ে দিনভর ছিল টান টান উত্তেজনা।
সমাবেশ ঘিরে বিএনপিতে ছিল ‘সাজ সাজ রব’। নেতা-কর্মীরা ঢাকা ছাড়াও আসেন দূরের জেলা থেকে। নগরীর প্রবেশ পথে তল্লাশি চৌকি বসায় পুলিশ। তবে কোনো গোলযোগ ছাড়াই শেষ হয় সমাবেশ।
রাজপথে সক্রিয় ছিল আওয়ামী লীগও। তাদের শান্তি সমাবেশের শুরুতে মঞ্চের সামনে বসা নিয়ে হালকা মারামারিও হয়।
পরে সমাবেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির খবর জানেন? তাদের এক দফা জানেন? বিএনপির এক দফা হল শেখ হাসিনার পদত্যাগ। আর আমাদের এক দফা শেখ হাসিনা ছাড়া কোন নির্বাচন নয়। নির্বাচন শেখ হাসিনার আমলেই হবে, শেখ হাসিনাই নেতৃত্ব দেবেন।
‘বাংলাদেশের জনগণ যে নেত্রীর ক্ষমতাকে পছন্দ করে, উন্নয়নকে পছন্দ করেৃ শেখ হাসিনার সততা ও পরিশ্রম পছন্দ করে আমরা এমন নেতা হারাতে পারি না।’ খবর বিডিনিউজ।
উচ্চ আদালত এক রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করলে ২০১১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার সংবিধান সংশোধন করে নির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করে। এরপর থেকেই নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে রাজনৈতিক বিরোধ চলছে।
সংবিধান সংশোধনের পর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করে আন্দোলনে যায় বিএনপি ও সমমনা দলগুলো।
বিরোধী দলের বর্জনের মধ্যে ১৯৮৮ ও ১৯৯৬ সালের পর তৃতীয়বারের মতো সহিংস আন্দোলনের মধ্যে হয় ভোট। আগের দুইবার যথাক্রমে জাতীয় পার্টি ও বিএনপি ক্ষমতায় টিকে থাকতে না পারলেও এবার আওয়ামী লীগ মেয়াদ পূরণ করে ফের ক্ষমতায় আসে।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের ভোটের আগে ফের আন্দোলনের হুমকি দিলেও পরে ২০ দলীয় জোটের পাশাপাশি নতুন জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে ভোটে আসে বিএনপি। এ নির্বাচনেও ভরাডুবি হয় তাদের।
এরপর বিএনপি তত্ত্বাবধায়কের দাবিতে ফিরে যায়। আওয়ামী লীগ সরকারে থাকলে কোনো ভোট হবে না বলেও ঘোষণা আসে। তবে আওয়ামী লীগ সাফ জানিয়ে দিয়েছে, সংবিধানের বাইরে গিয়ে ভোট হবে না।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি জানে নির্বাচন হলে তারা হেরে যাবে। শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তার কাছে ভেসে যাবে। তারা শেখ হাসিনাকে হিংসা করে। শেখ হাসিনার অপরাধ, তিনি উন্নয়ন করেছেন। শেখ হাসিনার অপরাধ, ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়বেন।”
বিএনপির আন্দোলনের হুঁশিয়ারিকে পাত্তা দিচ্ছেন না আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিরোধী দলটির বিভাগীয় সমাবেশের আগে ‘সরকার পতনের’ হুমকির বিষয়টি নিয়েও কথা বলেন।
কাদের বলেন, বিএনপি অনেক স্বপ্ন দেখেছিল। আজকেও কাঁথা বালিশ নিয়ে অনেক লোক আনার চেষ্টা করেছিল। আগেও একটা স্বপ্ন দেখেছিল, ওই স্বপ্ন গরুর হাটে মরে গেছে।
আজকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের ‘এক দফা’ স্বপ্ন নয়া পল্টনের কাদা-পানির ভেতরে আটকে গেছে।
তিনি বলেন, আমাদের এক দফা (শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন) সংবিধানসম্মত নির্বাচন। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।
‘বাধা এলে প্রতিরোধ’
আওয়ামী লীগের এই লক্ষ্যের পথে বাধা হয়ে না দাঁড়াতে বিরোধী দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান দলের সাধারণ সম্পাদক। বলেন, ‘কোনো বাধা দেবেন না, আমরা কাউকে আক্রমণ করতে যাব না।’
বাংলাদেশে নির্বাচন নিয়ে বিরোধের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলের যে সফর শুরু হয়েছে, সেটি নিয়েও কথা বলেন কাদের।
তিনি বলেন, ‘যে বিদেশি বন্ধুরা এসেছেন, আপনারা চান ফ্রি ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল, সুষ্ঠু নির্বাচন। আমাদের লক্ষ্যও ফ্রি ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল, সুষ্ঠু নির্বাচন। এই ফ্রি ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল, সুষ্ঠু নির্বাচনে যারা বাধা দিতে আসবে, আমরা তাদের প্রতিহত করব।
নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনাও নাকচ করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, যাদের হাতে রক্তের দাগ, তাদের সঙ্গে কোনো সংলাপ নয়। তাদের সঙ্গে আমরা আপোস করতে পারি না।
ঢাকা মহানগর দক্ষি ণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, আব্দুর রাজ্জাক, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, কামরুল ইসলাম, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন হাছান মাহমুদ, মাহবুবউল আলম হানিফ।
সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, এসএম কামাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারাও সমাবেশে বক্তব্য রাখেন।