ইউসুফ ইকবাল »
বাংলাদেশে গণমানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামী চেতনার বিশ্বস্ত মানবিক নাম শেখ হাসিনা। তিনি গণতন্ত্রের মানসকন্যা। হারানো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের অবিসংবাদিত নেত্রী। পিতা তাঁর বঙ্গবন্ধু— স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের রূপকার। পরাজিত শত্রুর দল সপরিবারে হত্যা করেছে তাঁকে। এরপর পরাজিত শক্তি বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাকে দীর্ঘকাল ক্ষত-বিক্ষত করেছে বিকৃত উল্লাসে। পঁচাত্তর-উত্তর বাংলাদেশে দুই যুগ ধরে চলেছে বীভৎস শকুন-উৎসব। এই অরাজক স্বপ্নভুক বৈরীস্রোতে ঘুরে দাঁড়ালেন একজন— মানবমুক্তির অঙ্গীকারে দৃঢ়দৃপ্ত সংকল্প নিয়ে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্ত থেকে ডুবন্ত জাতিকে টেনে তুললেন। তিনি আর কেউ নন— তিনি বঙ্গবন্ধুকন্যা, দেশরত্ন, তুলনাহীনা, জননেত্রী শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা অন্ধকার কালের গর্ভে প্রজ্বলিত আলোকশিখা। অন্ধকারে পথহারা জাতির পথের দিশা। জাতির জীবনে যখন নেমে আসে ঘোর অমানিশা, ক্রান্তিকাল— তিনি এগিয়ে এসে সাহস দেন— জাতিকে পথ দেখান। তিনি আশাহত বাঙালির ভরসা, দুর্বলের সাহস, হতভাগ্য জাতির ভাগ্য বিধাতা। বিভেদ, বিভ্রান্তি আর হতাশার বালুচরে তিনি গড়ে তোলেন আশার বসতি। স্বাধীন বাংলাদেশে বাঙালির স্বপ্ন ও বাস্তবতার তিনিই সার্থক রূপকার। তার চোখজুড়ে স্বপ্ন, হৃদয় জুড়ে বাংলাদেশ। তাঁর গন্তব্য মানুষ। মানুষের কল্যাণে তাঁর আত্মনিবেদন।
শেখ হাসিনা বহুর মাঝে ঐক্যের যোগসূত্র, দ্বিধাবিভক্ত জাতির জীবনে পরম আশীর্বাদ। নিঃসঙ্গ পথিকের সঙ্গী তিনি, সম্মিলিত মানুষের পথপ্রদর্শক। পরাজিত শত্রুর আতংক তিনি, সপক্ষ শক্তির অনিঃশেষ সাহস। ক্রান্তিকালের বিশ্বস্ত বান্ধব তিনি, বৈরীস্রোতে নির্ভীক নাবিক। দিকভ্রান্ত জাতির পথদ্রষ্টা তিনি, বৈরীকালের সাহসী সৈনিক। পিতৃমাতৃহীন পরিজনহীন নিঃসঙ্গ তিনি, অথচ তিনিই আজ পিতৃহারা জাতির বিশ্বস্ত অভিভাবক।
শেখ হাসিনা মানবতার অতন্দ্র প্রহরি, জননী মানবতার। মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়েও তিনি প্রতিনিয়ত দুহাত বাড়িয়ে দেন মানুষের দিকে। মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেন তিনি মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে। জীবনকে ভালোবাসেন তিনি মানুষকে ভালোবাসার জন্যে। তিনি ত্রাতা, জাতিকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করেন। ব্যর্থতার করুণ জমিনে করেন ফসল আবাদ। তিনি দাতা, সোনালি ফসলে ভরে দেন জীবনের মাঠ। তার ব্যক্তিত্ব পর্বতের মতো। গগনস্পর্শী। সিদ্ধান্তে স্থির, অটল, অবিচলÑ যেন ঐ শিখর হিমাদ্রির। বাংলার কৃষ্টি, সংস্কৃতির অপূর্ব সমন্বয় তিনি— আবহমান বাঙালির মূর্ত প্রতীক। তার অন্তর আন্তরিকতায় পূর্ণ, মমতায় মমতাময়ী তিনি— শাসনে কোমলে কঠোর।
শেখ হাসিনা পথ দেখান পথহারা জাতিকে। অত্যাচারিত, নিপীড়িত, নিরন্ন, অসহায় মানুষ তার মাঝে খুঁজে পায় পরম আশ্রয়। ভূমিহীন, রাষ্ট্রহীন, বাস্তুহীন মানুষ খুঁজে পায় বেঁচে থাকার সাহস। তাঁর অনুপ্রেরণায় পরাজিত মানুষ দেখে জয়ের স্বপ্ন, জীবনের প্রতি বিশ্বাস হারানো মানুষও ফিরে আসে জীবনের পথে। তিনি জিতলে বাংলাদেশ জিতে যায়। বাংলার মানুষ কিছু পায়। তিনি হারলে হেরে যায় বাংলাদেশ, সবকিছু হারায়। তার স্পর্শে পালটে যায় দেশ। বিশ্ব অবাক তাকিয়ে থাকে। কী এমন শক্তি তার! না, কোনো অলৌকিক প্রণোদনায় নয়— নয় কোনো দৈবিক প্রেরণায়। দেশকে ভালবাসার অসীম ক্ষমতায় তিনি ক্ষমতাবান। মানুষের পাশে থেকে মানুষকে নিবিড়ভাবে ভালবাসতে পারেন একজন— তিনি জননেত্রী শেখ হাসিনা, আর কেউ নন।
শেখ হাসিনা উদার, পরমতসহিষ্ণু, বিনয়ী অভিভাবক। তিনি স্বপ্নবান। তাঁর স্বপ্ন আকাশকুসুম নয়। বাস্তবতার রূঢ় জমিতে তার অবস্থান। হাজারো সমস্যা জর্জরিত দেশকে তিনি নিয়ে গেছেন সম্ভাবনার স্বর্ণশিখরে। বেকারত্ব, হতাশা, দারিদ্র্যপীড়িত দেশকে তিনি উন্নীত করেছেন মধ্য আয়ে। তিনি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের বিশ্বস্ত ঠিকানা। তাঁর কাছে মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ, দেশবিরোধী চক্র আজ পরাজিতÑ পশ্চাদপদ চিন্তার প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের মুখোশ আজ উন্মোচিত। তাঁর হাতে সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী আজ সুদৃঢ়। তিনি অহিংস, নির্মুল করেছেন সহিংসতার অপরাজনীতি।
শেখ হাসিনা বহুমাত্রিক দূরদর্শী নেত্রী। বিশ্বশান্তি ও সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠায় তাঁর প্রচেষ্টা আজ বিশ্বসভায় সমাদৃত। তাঁর প্রচেষ্টা ও সাফল্যগাথা সমগ্র বিশ্বে প্রচারিত। তিনি বন্ধুবৎসল, বাড়িয়েছেন বন্ধুরাষ্ট্র। তাঁর হাতে বিকশিত হয়েছে এদেশ, তাঁর হাতে সবচেয়ে নিরাপদ বাংলাদেশ। তাঁর যোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের অনুকরণীয় আইকন। তলাবিহীন ঝুড়ির অপবাদ মুছিয়ে দিয়েছেন তিনি। এখন বাংলাদেশ আর দরিদ্র নয়, স্বচ্ছল সফল। আস্থা ও বিশ্বাসের নিরাপদ আশ্রয় তিনি। শেখ হাসিনার স্বপ্ন আর আবহমান বাঙালির স্বপ্ন অভিন্ন। অসাম্প্রদয়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলা তাঁর আজন্ম প্রত্যয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একটি শোষণমুক্ত, গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল, মানবিক সমাজ বিনির্মাণে তিনি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ, সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত মানবিকগুণসম্পন্ন সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা তাঁর লক্ষ্য। তাঁর প্রত্যয় ও প্রত্যাশার বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে জাতি ফিরে পাবে কাক্সিক্ষত স্বদেশ। সেটি হবে সুখী সমৃদ্ধ ও মর্যাদাপূর্ণ বাংলাদেশ। তাঁর নেতৃত্বে আমরা সেদিকেই এগিয়ে যাচ্ছি।
আজ জননেত্রীর ৭৭তম জন্মদিন। শুভময় হোক। কল্যাণময় হোক। সকল ষড়যন্ত্র পায়ে দলে আপনি এগিয়ে যান। সাফল্যের অবগাহনে সিক্ত হোক আপনার আগামী জীবন। জয় বাংলা।