গেল মাসের শেষে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার পদ্মা নদীতে জেলেদের জালে ধরা পড়ে এক মণ ওজনের একটি শুশুক (ডলফিন)। বিপন্ন জলজ প্রাণীটি সেদিন বিকেলে ফেরিঘাটের অদূরে ধরা পড়ে। পরে সন্ধ্যায় দৌলতদিয়া ঘাটে মাত্র ৭০০ টাকায় সেটি বিক্রি করে দেওয়া হয়।। এভাবে চট্টগ্রামের হালদা নদীও এখন শুশুকশূন্য হয়ে পড়েছে প্রায়।
বন অধিদপ্তরের তথ্যমতে, আমাদের দেশে যে দুটি নদীর ডলফিন আছে তা হলো শুশুক ডলফিন আর ইরাবতী ডলফিন। আইইউসিএনের গ্লোবাল রেড লিস্ট ক্যাটাগরিতে দুটিই ঝুঁকিপূর্ণ ‘এন্ডেঞ্জার্ড অ্যানিমেল’। ইরাবতীদের বাস আমাদের ৭২০ কিমি উপকূলীয় নদী কিংবা সাগরমুখে আর শুশুক ডলফিন বিচরণ করছে দেশে বিদ্যমান ৭০০ নদীর ২৪ হাজার কিমির একটি বড় অংশজুড়ে। যদিও বর্ষা মৌসুম ব্যতিরেকে শুষ্ক মৌসুমে এদের আবাসস্থল কমে বেশ সংকুচিত হয়ে যায়।
বাংলাদেশে গঙ্গা নদীর ডলফিনসহ অন্যান্য প্রজাতির ডলফিন বিপন্ন অবস্থায় রয়েছে। এর প্রধান কারণ হলো নদীর দূষণ, অপ্রয়োজনীয় মাছ ধরার জাল, জলবিদ্যুৎ বাঁধ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নদীর প্রবাহে পরিবর্তন। এদের সংখ্যা ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে, যা আমাদের বাস্তুসংস্থানকে ঝুঁকিতে ফেলছে। ডলফিন সংরক্ষণ কেবল একটি প্রজাতি সংরক্ষণ নয় বরং আমাদের পরিবেশের সার্বিক সুরক্ষা নিশ্চিত করার এক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। যখন ডলফিনকে রক্ষা করা হয়, তখন তা জলজ পরিবেশের অন্যান্য প্রাণীদের জন্যও উপকার বয়ে আনে।
বাংলাদেশ সরকার এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে ডলফিন সংরক্ষণে বেশকিছু কার্যক্রম শুরু করেছে। গঙ্গা নদীর ডলফিন সংরক্ষণে বিশেষ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে ডলফিনের বাস্তুসংস্থান উন্নত করার পাশাপাশি তাদের সংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে জেনে আমরা আশ্বস্ত হয়েছি। ২০১২ সালে গাঙ্গেয় ডলফিনকে সংরক্ষিত প্রজাতির মর্যাদা প্রদান করা হয়েছে, যা এদের রক্ষার প্রচেষ্টায় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
সুন্দরবন ডলফিনের নিরাপদ আবাসস্থল হওয়ায় ২০১২ সালের জানুয়ারিতে দেশের প্রথম তিনটি ডলফিন অভয়ারণ্য ঘোষিত হয়। সুন্দরবনের চাঁদপাই, ঢাংমারী এবং দুধমুখী ডলফিন অভয়ারণ্যে যেকোনো সময় গেলেই ডলফিন দেখা যায়। সুন্দরবন এবং এর আশপাশের এলাকায় ২০২০ সাল পর্যন্ত ডলফিন এবং জলজ প্রতিবেশ রক্ষায় সরকারের প্রথম প্রকল্পটি সত্যিকার অর্থেই একটি সফল প্রকল্প। যে প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে সুন্দরবন নির্ভর জনসাধারণ বিশেষ করে জেলে সম্প্রদায়ের মধ্যে ডলফিনের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বেড়েছে।
এরই ধারাবাহিকতায় আমরা আশা করব হালদা নদীকেও ডলফিন বা শুশুকের অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হোক। তাতে বিপন্নপ্রায় শুশুক সামান্য হলেও রক্ষা পাবে।
এ মুহূর্তের সংবাদ