শুভ্র শরৎ

মোখতারুল ইসলাম মিলন »

বর্ষার বিদায়ের সাথে সাথে প্রকৃতিতে নেমে আসে শরতের মায়াময় আবহ। আকাশে ভেসে বেড়ায় তুলতুলে সাদা মেঘের ভেলা। সূর্যের আলো হয়ে ওঠে কোমল ও স্নিগ্ধ। গাছের পাতা ধীরে ধীরে রঙ বদলাতে শুরু করে, সবুজ থেকে হলুদ, তারপর লাল ও বাদামি। শরতে প্রকৃতি সেজে ওঠে নতুন সাজে। কাশফুলের সাদা পালক হাওয়ায় দুলতে থাকে। পদ্ম ও শাপলা ফুল ফুটে থাকে পুকুরে। ধানক্ষেতে সোনালি রঙের ঢেউ খেলে যায়। দূরের পাহাড়গুলো নীল আর বেগুনি রঙে রাঙা হয়ে ওঠে।
শরৎ মানে ফসল পরিপূরক হওয়ার সময়। ধান, পাট, আখ, তুলা সব ফসল পূরক হয় এই সময়ে। কৃষকের মুখে হাসি, ফলস ভালো হচ্ছে। প্রকৃতি তার দৃশ্য দেখে হৃদয় জুড়ায় কৃষকদের।
আবহাওয়া শীতল, শুষ্ক ও মনোরম পরিবেশে সাজে। দিনের দীর্ঘতা ছোট হতে শুরু করে। আর্দ্রতা কম থাকে। উত্তর দিক থেকে শীতল বাতাস মন জুড়ে দিয়ে যায়।
বাংলা সাহিত্যে শরৎকাল এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জীবনানন্দ দাশ, কাজী নজরুল ইসলামসহ সবার কবিতায় শরতের রূপ ফুটে উঠেছে অপরূপ সৌন্দর্যে। কাজী নজরুল ইসলাম শরৎ নিয়ে লিখেছেন: “এসো শারদ প্রাতের পথিক এসো শিউলি-বিছানো পথে, এসো ধুইয়া চরণ শিশিরে এসো অরুণ-কিরণ-রথে।” আরও লিখেছেন: “শিউলিতলায় ভোরবেলায় কুসুম কুড়ায় পল্লীবালা, শেফালি পুলকে ঝরে পড়ে মুখে খোঁপাতে চিবুকে আবেশ-উতলা।” রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন: “আমরা বেঁধেছি কাশের গুচ্ছ, আমরা গেঁথেছি শেফালি মালা, নবীন ধানের মঞ্জরি দিয়ে সাজিয়ে এনেছি ডালা।” এভাবে কবিদের কলমে ফুটে উঠেছে শরতের স্নিগ্ধ শোভন।
ধীরে ধীরে শরতের বিদায় ঘন্টা বাজে। গাছের পাতা ঝরে পড়তে শুরু করে। হাওয়ায় শীতলতার আভাস পাওয়া যায়। এভাবেই শরৎ পথ ছেড়ে দেয় হেমন্তের জন্য, অথচ রেখে যায় মনে অসংখ্য মধুর স্মৃতি। শরৎকাল আমাদের হৃদয়ে এনে দেয় শান্তি আর আনন্দের বার্তা। প্রকৃতির এই অপরূপ সাজে মুগ্ধ হয়ে আমরা অপেক্ষা করি আবার আগামী বছরের শরতের জন্য।