অনিক শুভ :
বিজ্ঞান ছাড়া আধুনিক সভ্যতা সম্পূর্ণ অচল। বর্তমান যুগের প্রতিটি মুহূর্তে ও পদক্ষেপে বিজ্ঞানের কাছ থেকে আমরা তথ্য আহরণ করছি। এই বিজ্ঞানকে বাদ দিয়ে আজ আমাদের অস্তিত্বই কল্পনা করা যায় না। অথচ আধুনিক প্রযুক্তি বিদ্যার যুগেও বিজ্ঞান মনস্কতা বৃহত্তর জনমনের কাছে এখনও চরম অবহেলিত। বিজ্ঞানের ছাত্র-শিক্ষক হয়েও বিজ্ঞান চর্চায় আমাদের আগ্রহ নেই। সে কারণেই আজ নতুন করে বিজ্ঞান মানসিকতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে নানাবিধ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। পঠন-পাঠ, স্কুল কলেজে বিজ্ঞানের ক্ষেত্রকে নানাভাবে প্রসারিত করা হচ্ছে।
কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক, ঐতিহাসিক, দার্শনিক, সমাজবিজ্ঞানী সবার মধ্যেই কমবেশি বিজ্ঞানমনস্কতা থাকা প্রয়োজন। সত্যিকার অর্থে বিজ্ঞান শিক্ষা প্রতিটি মানুষের মনের সংকীর্ণতা ও ভ্রান্তির আবরণ ভেদ করে বাস্তব সত্যের সন্ধান দেয় এবং সত্যকে চেনায়। আর বৈজ্ঞানিক চিন্তার বিকাশেই মানুষের ভ্রান্ত ধারণার অবসান ঘটে। একমাত্র বিজ্ঞানমনস্কতাই মানুষের মোহ অন্ধতা দূরীভূত করতে পারে। ফলে সে যুক্তিবাদী ও বিচার বোধ সম্পন্ন হয়ে ওঠে। তাই সবাইকে বিজ্ঞান শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম ও অনস্বীকার্য।
শিশুদের মধ্যে বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ তৈরি করা এবং তাদের মধ্যে বিজ্ঞানমনস্কতা তৈরি করার প্রধান দায়িত্ব প্রথমে অভিভাবকদের। শিক্ষাবিদদের মতে শিশুদের জন্য বিজ্ঞানের মধ্যে থাকবে নানাধরণের কৌতূহল জাগানো প্রশ্ন, সেগুলোর উত্তর খোঁজার চেষ্টা, তথ্য সংগ্রহ, পরীক্ষা চালানো, রেজাল্ট যা আসবে সেটা নিয়ে নিজের একটি মতামত দেয়া ইত্যাদি। উন্নত দেশগুলোর কোনো স্কুলেই সবাইকে বিজ্ঞানী বানানোর জন্য বিজ্ঞান পড়ায় না। অথচ বিজ্ঞান শিক্ষার ওপর তারা অনেক বেশি জোর দেয়। তাদের মূল লক্ষ্য শিশুদের মধ্যে পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা বাড়ানো, লজিক এবং যুক্তি দিয়ে চিন্তা করা, পরীক্ষার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা এইসব বাড়ানো।
একটি শিশু কতটুকু কৌতূহলী তার ওপর নির্ভর করে ঐ শিশুর বিজ্ঞানসম্মত চিন্তা করার ক্ষমতা এখন কতটুকু আছে বা ভবিষ্যতে কতটুকু হবে। একটি কাজ যে বিভিন্নভাবে করা যায় সেটি শিশুকে বোঝানোর মাধ্যমে শিশুদের মধ্যে ওপেন মাইন্ডসেট তৈরি করা যায়। শিশুরা জন্মগতভাবেই কৌতূহলী। এই কৌতুহলী মনের সাথে যদি পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে আপনার শিশুকে সাহায্য করতে পারেন। পর্যবেক্ষণ করার ক্ষমতা তৈরি হলে শিশু বিভিন্ন জিনিসের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী তাদের ছোট ছোট দলে ভাগ করার ক্ষমতা অর্জন করবে। শিশুকে তার নিজের ইচ্ছামতো চিন্তা করতে দিন। এখানে কোন ভুল বা সঠিক ব্যাপার নেই। আগেই তার ধারণা ভুল না ঠিক সেটি বলবেন না। ভুল হলে সঠিক উত্তরটি তবে কি? এ পরীক্ষার মাধ্যমে সে কি বুঝতে পারলো? এরকম প্রশ্নগুলো করে শিশুর কাছ থেকে উত্তরগুলো জানার চেষ্টা করুন।
শিশুদের মধ্যে বিজ্ঞানমনস্কতা তৈরির জন্য তার নিজের করা পরীক্ষার মূল্যায়ন করতে পারার ক্ষমতা তৈরি হতে হবে। তবেই সে দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন প্রশ্ন ও সমস্যার সমাধান এবং তার চারদিকের পরিবেশের বিভিন্ন বিষয় যেমন বৃষ্টি পড়া, সূর্য ওঠা-ডোবা, গাছপালার বেড়ে ওঠা ইত্যাদি বিষয়গুলোর জবাব নিজেই বের করার চেষ্টা করবে। আর এভাবেই ধীরে ধীরে শিশুর মধ্যে একটি বিজ্ঞানমনস্ক এবং যৌক্তিক মন তৈরি হবে।