শিশুপার্ক উচ্ছেদ প্রক্রিয়া শুরু

কংক্রিটের নগরে এক মুঠো সবুজের জন্য নগরবাসী তৃষ্ণার্ত থাকে, একটু উন্মুক্ত জায়গায় খোলা হাওয়া আর সেই জায়গাটিতে বেড়ানোর দুর্নিবার লোভ কজনেই বা সামলাতে পারে! চট্টগ্রাম মহানগরী এক সময় সবুজে আচ্ছাদিত থাকলেও তার সে সজ্জা এখন নেই। কিছু মানুষের অবিমৃষ্যকারী কর্মকা- আর প্রশাসনের জনস্বার্থের বিষয়ে উদাসীনতায় নগরবাসীর নির্মল বিনোদনের স্থান সংকুচিত হয়ে আসছে। শিশুদের শৈশবের বৃত্তে কেবলই বন্দিদশা। নগরে দু’একটি শিশু পার্ক আছে কিন্তু সেখানে বড়দের সমাবেশ বেশি। আমরা চাই নগরীর সবুজ অক্ষুণœ রেখে, চারপাশের পরিবেশ রমণীয় রেখে বিনোদন কেন্দ্র গড়ে ওঠুক। কেবল মুনাফার স্বার্থে যেখানে সেখানে বাণিজ্যিক স্থাপনা, বিনোদন স্পট গড়ে তোলা অনুচিৎ।

নগরীর সার্কিট হাউস সংলগ্ন শিশুপার্ক আর তার পাশে যে বাণিজ্যিক স্টল, স্থাপনা গড়ে উঠেছে তাই নিয়ে এ প্রসঙ্গের অবতারণা।

সার্কিট হাউসটি একদা দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা হিসেবে দেশি বিদেশিদের আকৃষ্ট করতো। চারিদিকের সবুজ গাছপালা, উন্মুক্ত জায়গা, পাশে স্টেডিয়াম-মানুষজনের হাঁটার, বিনোদনের স্পট ছিলো এক সময় কিন্তু ৩ দশক আগে সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে শিশুপার্ক। সেটি এখনো চলছে। জায়গাটি সামরিক ভূমি ও সেনানিবাস অধিদপ্তরের, সেখানে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কি করে শিশুপার্ক করতে ইজারা দেয়? পত্রিকান্তরে প্রকাশ, ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রীও পার্কটি উচ্ছেদের কথা বলেছিলেন। স্থানটি উন্মুক্ত রাখার দাবি জানিয়েছেন পরিবেশবিদ, নাগরিক সমাজ। কিন্তু তাদের দাবি উপেক্ষা করে চলতি বছর নতুন করে শিশু পার্কটিতে ১৫ বছরের জন্য ইজারাদার নিয়োগ করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। ২০০৯ সালের ৬ মে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির তৃতীয় সভায় শিশুপার্কটি তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। চসিক শিশুপার্ক পুনরায় ইজারা দেওয়ার সময় সংসদীয় কমিটির এ সিদ্ধান্ত কিভাবে উপেক্ষা করতে পারলো! ২০০৮ সালের ২৮ জানুয়ারি চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টের একজিকিউটিভ অফিসার এক পত্রে সেনাবাহিনীর ঐ জমি ফেরত চান। ঐ পত্রে আরো বলা হয় শিশুপার্ক এলাকায় একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান অননুমোদিত বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ করায় এলাকায় যানজট, বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রম ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে।

শিশুদের মনোজগতের সাথে এসব ব্যাপারগুলি যায় কি?

এখন এই শিশুপার্কটি উচ্ছেদ করে জায়গাটি উন্মুক্ত রাখার কথা বলেছেন চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন। যেহেতু ইজারাদারের সাথে চুক্তি হয়েছে তাই বিকল্প স্থানে শিশুপার্ক সরিয়ে নেয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে এজন্য প্রাথমিকভাবে পাহাড়তলী ও খুলশি এলাকায় দুটি পরিত্যক্ত জায়গা বাছাই করা হয়েছে মর্মে পত্রিকান্তরে প্রকাশ।  আমরা মনে করি, একটি বিকল্প স্থানে সার্কিট হাউস সংলগ্ন শিশুপার্কটি সরিয়ে নেওয়ার যে সিদ্ধান্ত হয়েছে তা নগরবাসীর প্রশংসা পাবে। নগরীতে উন্মুক্ত স্থান রাখা নগরবাসীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য অপরিহার্য। চসিক ও নগরীর সেবা সংস্থা এবং সাধারণ প্রশাসন এ ব্যাপারে গুরুত্ব দেবে বলে আমরা আশা করি।