মো. মহসিন »
আজকের শিশুরা হতে পারে আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। সুতরাং তাদের সুস্থ, সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত মানসিক বিকাশ সাধনের অপরিহার্যতা রয়েছে। মানসিক বিকাশ সাধনে পড়াশোনার পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখে খেলাধুলা। শিশুরা খেলাধুলায় মনোনিবেশ করার ফলে তাদের জীবন থেকে অলসতা দূর হতে পারে এবং দৈহিক কর্মক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়।
অনেক শিশু স্কুল ব্যতীত খেলাধুলার সুযোগ তেমন পায় না। এ জন্য প্রতিটি স্কুলে খেলাধুলার জন্য প্রয়োজনীয় মাঠ থাকাটা একান্ত প্রয়োজন। খেলাধুলার মাধ্যমে শিশুরা পড়াশোনার সাথে সাথে আনন্দ উপভোগ করারও সুযোগ পায়। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে, মানসিক ও শারীরিক বিকাশের জন্য ৫ থেকে ১০ বছর বয়সী শিশুদের দৈনিক অন্ততপক্ষে এক ঘণ্টা খেলাধুলা করার প্রয়োজন রয়েছে।
আজকাল ডিজিটাল গেমগুলো শিশুদের আকৃষ্ট করছে বেশি এবং তারা মোবাইল গেমগুলোতে এত আসক্ত হয়ে পড়ছে যে, সেক্ষেত্রে একপর্যায়ে তারা পড়াশোনার প্রতি অমনোযোগী হয়ে ওঠে। মনোবিজ্ঞানী বা গবেষকদের মতে, খেলাধুলা বা ছোটাছুটি করতে না পারা শিশুরা পরবর্তীকালে বিবিধ সমস্যায় নিপতিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কেননা মাঠে খেলাধুলা করলে শিশুদের শরীরে রক্ত সঞ্চালন ক্রিয়ার বৃদ্ধি হয়। এটা শিশুদের সুস্থ দেহ-মন গঠনে সহায়ক এবং সুস্থ জীবনের জন্য অত্যন্ত জরুরি হয়ে থাকে। খেলাধুলা করার মধ্যে দিয়ে শিশুদের বিশেষ ক্ষমতা তৈরি হয়, যার ফলে তারা নানান পরিস্থিতি সামাল দিতে শেখে আর আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়। তাছাড়া কিছু অপরিকল্পিত গৃহায়নের ফলে দেশে খালি স্থানগুলোও কমে আসছে, তাই ভিডিও গেমস, মোবাইল, কম্পিউটার আর ল্যাপটপ হয়ে উঠেছে খেলাধুলার প্রধান অবলম্বন।
গবেষকদের ধারণায় খেলাধুলার পর্যাপ্ত সুযোগের অভাব হলে সেক্ষেত্রে শিশুরা মুটিয়ে বা স্থূলকায় হয়ে পড়তে পারে। বিগত দিনের বিভিন্ন জরিপের ফলাফল হতে প্রতীয়মান হয় যে, দেশের ৭০ -৮০ ভাগ ইসকুলে খেলার মাঠ নেই। শিশু ছেলেমেয়েদের ক্ষেত্রে মেধা ও মনের বিকাশ তা একেবারে খেলাধুলা ব্যতিরেকে গড়ে ওঠা আদৌ সম্ভব নয়। প্রকৃতপক্ষে মনের উৎফুল্লতাই শিশু ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার প্রতি মনোযোগী করে তুলে। অর্থাৎ মনকে উৎফুল্ল রাখার জন্য খেলাধুলার যথেষ্ট অপরিহার্যতা রয়েছে। খেলাধুলা করলে শিশু ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা ছাড়াও অভিভাবকদের অন্যান্য কোন মানসিক চাপও হালকা হয়ে পড়ে। তাছাড়া শিশু ছেলেমেয়েদের ওপর অভিভাবকদের সার্বক্ষণিক পড়ালেখার ব্যস্ততার চাপ প্রয়োগ তাদের বাকশক্তি বিকাশে বড় ধরনের অন্তরায় হয়ে পড়ে। বিদ্যালয়ে শিশু ছেলেমেয়েরা পর্যাপ্ত খেলাধুলার সুযোগ পেলে তাদের পড়ালেখার অগ্রগতির মানও অবশ্যই ত্বরান্বিত হবে আর তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নির্মাণের ক্ষেত্রে অনেক বড় সহায়ক বলা যায় ।
উন্নত বিশ্বের বিদ্যালয়গুলোত শিক্ষার মান দ্রুত প্রসার লাভ করার মূলে রয়েছে শিশু ছেলেমেয়েদের মানসিক ও মেধা বিকাশের অগ্রগতির ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা, যার কারণে তারা আদর্শ সুশিক্ষিত জাতি হিসেবে গড়ে উঠার পথ সুগম হয়।এসব ক্ষেত্রে দেশে শিক্ষার মান বাড়ানোর জন্য উন্নত বিশ্বের কিছু কিছু বিষয়,তরিকা অনুকরণ করাটাও দেশের শিশু ছেলেমেয়েদের শিক্ষার অগ্রগতি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অনেক অনেক সহায়ক হতে পারে নিঃসন্দেহে।
শিশু ছেলেমেয়েদের মনন ও মেধা বিকাশের ক্ষেত্রে খেলাধুলা একান্ত অপরিহার্য,তাই দেশের প্রতিটি বিদ্যালয়ে খেলাধুলার পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির প্রয়োজন রয়েছে। এক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যে শিশুদের খেলাধুলার উপর আরও বাড়তি সুযোগ সৃষ্টি করার ইতিবাচক বহুবিধ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। যা হয়তো আগামীতে দেশের শিশু ছেলেমেয়েদের আদর্শ শিক্ষার মান উন্নয়নে অনেক দূর এগিয়ে যাওয়ার সহায়ক হবে।
লেখক : প্রাবন্ধিক