স্বাস্থ্যবিদেরা করোনায় দেশের অবস্থা খুব একটা সন্তোষজনক বলছেন না এখনও। তাঁদের অনেকেরই পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, স্বাস্থ্যসেবায় সে রকম কোনো অগ্রগতি হয়নি। অথচ দেশে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে প্রায় দেড় বছর হলো। অন্যদিকে ঢাকার বাইরে জেলা শহরগুলোতে হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় শয্যাসংকট, জনবল ঘাটতি, আইসিইউ ইত্যাদি এখনও পর্যাপ্ত পরিমাণে নেই। স্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, গ্রাম-গঞ্জ-উপজেলা ও জেলায়-জেলায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে চলেছে।
দেশে গত বছরের ৮ মার্চ করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত হয়। আবার চলতি বছরের মার্চ থেকে দেশে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়। এই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে গত ৫ এপ্রিল থেকে দেশে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। এর কিছু ইতিবাচক প্রভাবও পরিলক্ষিত হয়। সংক্রমণ কমতে থাকে। গেল পবিত্র ঈদুল ফিতরের পর মে মাসের মাঝামাঝি সময় আবারও সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি লক্ষযোগ্য হয়ে ওঠে। বিশেষ করে দেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে খুব দ্রুতই সংক্রমণ ছড়াতে থাকে। বর্তমানে দেশের প্রায় সবক’টা জেলাতেই সংক্রমণ তার করাল বাহু বাড়িয়ে দিয়েছে। গ্রামাঞ্চলেও এবার সংক্রমণ বাড়ছে। বড় শহরগুলোর তুলনায় গ্রামে চিকিৎসাসুবিধা অপ্রতুল হওয়ায় মৃত্যু বেশি হওয়ার আশংকাও দিন-দিন বাড়ছে।
এদিকে গত ২৩ জুলাই থেকে আগামী ১৪ দিনের জন্য নতুন করে আবারও সর্বাত্মক লকডাউন শুরু হয়েছে দেশে। এখন শহর ফাঁকা বললেই চলে। যানবাহন ও জনচলাচলশূন্য হয়ে গেছে নগর। লকডাউনে অলিগলিতে বেড়েছে পুলিশের তৎপরতা। এ অবস্থায় গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে মারা গেছে ৬ জন। এ নিয়ে চট্টগ্রামে করোনায় মৃত্যুর মোট সংখ্যা দাঁড়ালো ৮৭৪ জনে। আর নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে ৩০১ জন। তবে মানুষের মধ্যে সচেতনতা কিছুটা বেড়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রবণতাও বেড়েছে।
এদিকে পরপর দুটি সুখবর এসেছে। প্রথমটি হলো, বিশ্বজুড়ে টিকা সরবরাহের আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম ‘কোভ্যাক্স’-এর আওতায় জাপান থেকে ২ লাখ ৪৫ হাজার ২০০ ডোজ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিক্ এসেছে দেশে। গত শনিবার ঢাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে টিকাগুলো হস্তান্তর করেন ঢাকাস্থ জাপানি রাষ্ট্রদূত। উল্লেখ্য, এই টিকার জন্য ১৫-১৬ লাখ মানুষ অপেক্ষায় আছে। কারণ তারা সকলেই প্রথম ডোজ হিশেবে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার এই টিকাই নিয়েছিলেন। উল্লেখ করা দরকার, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা ‘কোভিশিল্ড’-এর তিন কোটি ডোজ কেনার জন্য গত বছরের শেষ দিকে চুক্তি করেছিল বাংলাদেশ। সেই টিকার প্রথম চালান পাওয়ার পর ৭ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে গণটিকাদান শুরু হয়। কিন্তু চালানের ৭০ লাখ ডোজ পাঠানোর পর ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দিলে সংকটে পড়ে বাংলাদেশ। ফলে পর্যাপ্ত টিকা না-থাকায় ২৫ এপ্রিল দেশে প্রথম ডোজ দেয়া বন্ধ হয়ে যায়।
অন্য সুখবরটি হলো, শিগগিরই করোনার টিকা উৎপাদনে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, আমরা স্থানীয়ভাবে এটি তৈরি করতে যাচ্ছি। আগামীতে টিকার সমস্যা হবে না। সেজন্য আমরা প্রস্তাবও পেয়েছি এবং খুব শিগগিরই আমরা যৌখ উৎপাদনে যাবো।
মতামত সম্পাদকীয়