আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে প্রস্তুতি নিচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে সীমিত আকারে ক্লাশ চালানোর কথা বলা হচ্ছে। যারা এ বছর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা দেবে তাদের ক্লাশ নিয়মিত হবে। অন্যদের ক্লাশ হবে সপ্তাহে একদিন। এ লক্ষ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিকে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে করণীয় বিষয়গুলির ব্যাপারে শিক্ষা অধিদফতরের স্পষ্ট নির্দেশিকা থাকা চাই। তবে ক্লাশ শুরুর দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হবে করোনা সংক্রমণ মোকাবিলা সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির পরামর্শের ভিত্তিতে। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপুমনি গত রোববার সংসদে এতদসংক্রান্ত তথ্য জানিয়েছেন। আসন্ন এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের পাঠ্যসূচি সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে যাতে ৩ থেকে ৪ মাসের পাঠ্যসূচি শেষ করা যায়। আগামী জুন-জুলাই মাসে এই দুটি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে পারে। করোনার মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অটো প্রমোশন দেয়া হয়েছে। এইচএসসির ফল প্রকাশ হবে জেএসসি, এসএসসি ও সমমানের গড় ফলের ভিত্তিতে।
দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ করোনা মহামারির কারণে। এর ফলে দেশের ৪ কোটিরও বেশি শিক্ষার্থীর জীবন ও শিক্ষাপঞ্জি ওলোট-পালট হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে ক্লাসে যেতে না পারার ফলে শিক্ষার্থীদের অনেকে পড়াশোনায় মনোযোগ হারিয়ে ফেলেছে। অনেকের মধ্যে মানসিক অস্থিরতাও দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলিতে সেশন জট হয়েছে। শিক্ষাজীবন শেষ না হওয়ায় অনেক তরুণ অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও হতাশার মধ্যে পড়েছে। শহরের শিক্ষার্থীরা অনলাইন, টিভি ও তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে লেখাপড়া কিছুটা চালাতে পারলেও গ্রামের ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনার স্বাভাবিক ছন্দ হারাবে। শিক্ষক-কর্মচারীরাও আর্থিক সংকটে পড়েছেন। অনেক কিন্ডারগাটেন বন্ধ হয়ে গেছে। বেসরকারি স্কুল, কলেজগুলিও আর্থিক সংকট ও শিক্ষার্থী সংকটে ভুগবে। দেখা যাচ্ছে, করোনার মহামারি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। জাতীয় ক্ষেত্রে যার ফল হবে সুদূরপ্রসারী। সম্প্রতি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গণ-সাক্ষরতা অভিযানের এক জরিপে দেখা যায়, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের বেশির ভাগ শিক্ষাঙ্গন খোলার পক্ষে মত দিয়েছেন। শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যেও শিক্ষা কাজে যোগদানের আগ্রহও ব্যক্ত হয়েছে জরিপে। শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন বিবেচনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া প্রসঙ্গে বিভিন্ন মহলে বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে। তবে শিশু-কিশোরদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। মাস্ক পরিধান, সামাজিক দূরত্ব ছাড়াও অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে সকলকে সচেতন হতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে সরকার থেকে বরাদ্দ দেওয়া উচিত। বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের মাস্ক সরবরাহ করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা ও টয়লেটের সুযোগ বাড়াতে হবে। স্বাস্থ্যরক্ষার বিষয়টিকে গতানুগতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে না দেখে সকল প্রকার প্রস্তুতি রাখতে হবে। সাধারণ অবহেলা বর্তমান পরিস্থিতিতে বড় বিপর্যয় ঘটাতে পারে-এটি শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কর্তৃপক্ষকে বিবেচনায় নিতে হবে আন্তরিকভাবে।
মতামত সম্পাদকীয়