ব্যাচেলর অব মেডিসিন, ব্যাচেলর অব সার্জারির (এমবিবিএস) পাঁচ বছরের পাঠ্যক্রম শেষে একজন শিক্ষার্থীকে এক বছরের জন্য সাময়িক নিবন্ধন দেয় বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি)। ওই সময় সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থী সুনির্দিষ্ট কলেজ হাসপাতালের রোগীকে চিকিৎসা দিতে পারেন। শিক্ষক ও জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকদের সঙ্গে থেকে প্রশিক্ষিত হন। এরপর এক বছরের ইন্টার্নশিপসহ পাঁচ বছরের এমবিবিএস ডিগ্রিকে আমলে নিয়ে সুনির্দিষ্ট নিয়মে চূড়ান্তভাবে চিকিৎসক নিবন্ধন দেয় বিএমডিসি।
জীবন-মৃত্যুর দোটানায় মানুষ প্রথমে বেছে নেয় মেডিকেলের জরুরি বিভাগকে। আর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোর জরুরি বিভাগ প্রায় ক্ষেত্রেই পরিচালিত হয় শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের দ্বারা। যদিও জরুরি মুহূর্তে সংকটাপন্ন রোগীর চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় তাদের পর্যাপ্ত জ্ঞান ও দক্ষতা নেই। সম্প্রতি এক গবেষণায়ও বিষয়টি উঠে এসেছে, যেখানে শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের বেশির ভাগই নিজেদের দক্ষতা নিয়ে সন্তুষ্ট নন বলে জানান।
জরুরি চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার বিষয়ে গবেষণা নিবন্ধটি প্রকাশ পেয়েছে গতবছর । ‘ইজ লাইফ সাপোর্ট কম্পিটেন্সিস অ্যান আর্জেন্ট ইস্যু ইন আন্ডারগ্র্যাজুয়েট মেডিকেল এডুকেশন অব বাংলাদেশ’ শিরোনামে নিবন্ধটি প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ জার্নাল অব মেডিকেল এডুকেশন (বিজেএমই)। ২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়। এতে দেশের চারটি করে আটটি সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক, শিক্ষক, শিক্ষানবিশ চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীদের তথ্য নেয়া হয়েছে। আর তাতে দক্ষতা ও জ্ঞানের মূল্যায়ন করা হয়েছে চিকিৎসকদের নিজেদের মতামতের ভিত্তিতেই।
নিবন্ধন পেয়েছেন এমন এক চিকিৎসক বলেছেন, ‘জরুরি অবস্থার রোগী ব্যবস্থাপনার জন্য শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের বিদ্যমান জ্ঞান ও দক্ষতা পর্যাপ্ত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শিক্ষানবিশরা হাসপাতালের অন্তর্বিভাগ, বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগে কাজ করেন। তবে জরুরি চিকিৎসায় তাদের প্রশিক্ষণ অপর্যাপ্ত। বড় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোয় শিখন সুযোগ কিছুটা ভালো হলেও বেশির ভাগ হাসপাতালে তা নেই। পাঠ্যক্রম ও প্রশিক্ষণের দুর্বলতার কারণেই মূলত শিক্ষানবিশ চিকিৎসকরা জরুরি চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় দক্ষ হচ্ছেন না। বিষয়গুলো শেখানো হয় অনেকটা বিক্ষিপ্তভাবে। যারা কিছুটা দক্ষতা অর্জন করছেন তা সম্পূর্ণ নিজ তাগিদে।’
বিজেএমইতে প্রকাশিত গবেষণায় পাঁচটি নির্দেশকের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে জরুরি অবস্থায় লাইফ সাপোর্ট, শ্বাসনালি ব্যবস্থাপনা ও জরুরি ফার্মাকোলজি, কার্ডিওপালমোনারি ব্যবস্থাপনা, সাধারণ জরুরি পরিস্থিতিতে ওষুধ ও ব্যবস্থাপত্র লেখার পদ্ধতিগত দক্ষতা। পাঁচটি নির্দেশকের প্রায় সবক’টিতে শিক্ষানবিশ চিকিৎসকের দক্ষতা ও জ্ঞান গড় বা মধ্যম পর্যায়েরও কম।
এটি একটি বাস্তবচিত্র। দেশের অনেক হাসপাতালে গেলে এমন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়। শিক্ষানবিশেরা আরেকটু দক্ষ হলে রোগীরা প্রাথমিক চিকিৎসাটি পেতেন উন্নতমানের। ফলে গবেষণার এসব তথ্য দ্রুত আমলে নেওয়া উচিত। আমাদের সীমাবদ্ধতা কোথায় তা বের করতে হবে এবং তা কাটিয়ে ওঠার উপায় বের করতে হবে। চিকিৎসার মতো একটি জরুরি সেবাখাতকে আধুনিক, মানসন্মত ও দক্ষ করে তুলতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নিতে হবে।
এ মুহূর্তের সংবাদ