নিজস্ব প্রতিবেদক »
পৌষের মাঝামাঝিতে জেঁকে বসেছে শীত। গ্রামের মাঠ-ঘাট মেঠোপথ কুয়াশাচ্ছন্ন। কেটে ফেলা পাকা ধানের খড় পুড়িয়ে গল্প করতে করতে আগুন পোহাচ্ছেন কেউ কেউ। কাক ডাকা ভোরে মায়েদের উনুনে চলছে পিঠা বানানোর ধুম। মাকে ঘিরে চারপাশে উৎসুক ছেলেমেয়েরা আধবোজা চোখে অপেক্ষা করছে ধোঁয়া উঠা কাক্সিক্ষত শীতের পিঠার। কিন্তু শহরের যান্ত্রিকতায় এমন দৃশ্য নেই বললেই চলে।
শীতের পিঠা বাঙালির অনেক পুরোনো ঐতিহ্য। এই পিঠাই বাঙালির নিজস্বতার পরিচায়ক। পৃথিবীর যে প্রান্তেই বাঙালি থাকুক না কেন, পিঠা প্রীতি কমেনা। তাই গ্রামের বাইরে এমনকি দেশের বাইরে দেশীয় পিঠা উৎসবগুলো থাকে জমজমাট। তবে গ্রামের বাইরে এসব উৎসব হয় না। কর্মব্যস্ততায় ইচ্ছে থাকলেও পিঠা বানানোর অবকাশ পাননা অনেকে। আবার যারা কাজের সন্ধানে বাধ্য হয়ে শহরে পাড়ি জমান তারাও পিঠার স্মৃতিতে হয়ে উঠেন কাতর। তাদের সকলের জন্যেই থাকছে শহরের মোড়ে মোড়ে ‘বাচ্চুর’ মতো পিঠাপ্রেমীর হাতের পিঠা। দামও থাকছে হাতের নাগালে। পিঠা প্রতি দাম থাকছে ১০-২০টাকা মাত্র। কেবল ভ্রাম্যমাণ দোকান নয় নগরীর সুপার শপগুলোতেও থাকছে রকমারি পিঠার পসরা।
কখনও নিউমার্কেট মোড় কখনও সিআরবিতে ভোর পেরোলে কিংবা দুপুর গড়ালে ভ্যান চালিয়ে ভ্রাম্যমাণ দোকান নিয়ে হাজির হন বাচ্চু। ধোঁয়া উঠা গরম পিঠা পেতে লেগে যায় পিঠাপ্রেমীদের ভিড়। শীতের পিঠাগুলোর মধ্যে বাচ্চু তৈরি করেন চিতই, পাটিসাপ্টা ও ভাঁপা পিঠা। এছাড়া পিঠার সাথে থাকছে বাহারি ভর্তা। আছে সরিষা ভর্তা, লাল মরিচ ভর্তা, ধনে পাতা ভর্তা, চালতা ভর্তা, শিম ভর্তা, কাঁচা মরিচ ভর্তা। এছাড়া রয়েছে নানা শুঁটকির ভর্তা, যেমন লইট্টা শুঁটকি, বাঁশপাতা শুঁটকি, মিক্স শুঁটকি ভর্তা। এছাড়াও রয়েছে ইলিশ ভর্তা, মাংসের ঝোল ও আঁচার।
পিঠা বিক্রেতা বাচ্চু বলেন, ‘কেউ কেউ বলে সারাদিন থাকিনা কেন? দিনের বেলা তো লোকে পিঠা খায় না। পিঠা খাওয়ারও তো টাইম আছে, কি বলেন আপা? তাই ৪টা পার হইলেই আসি, রাত পর্যন্ত থাকি।’
তিনি আরও বলেন, ‘শহরের মানুষ কি গ্রামের মতো পিঠা খাইতে পারে? কিন্তু পিঠা তো ভালা জিনিস। দামও বেশি রাখিনা। আপনার আন্টি (বাচ্চুর স্ত্রী), আমার পোলা কয় পিঠা মজা অয়, মাইনষেও মজা কইরা খায় তাই উৎসাহ পাই।’
শুধু বাচ্চুই নন, নগরজুড়ে প্রধান সড়কগুলোর মোড়ে মোড়ে রয়েছেন এমন অনেক ক্ষুদ্র পিঠা ব্যবসায়ী। নগরীর লালখান বাজার বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, নিউমার্কেট, ষোলশহর, দুই নম্বর গেইট, জামালখান, জিইসি, আগ্রাবাদ, দেওয়ানহাট এলাকার মোড়ে এসব ভ্রাম্যমাণ দোকানের দেখা মেলে। নগরীর সুপার শপগুলোতেও তৈরি ও বিক্রি হচ্ছে শীতের পিঠা। সেসব সুপার শপে তুলনামূলক বিত্তবানরা আগে ভাগেই অর্ডার করে রাখছেন পিঠা। কেউবা সাপ্তাহিক বা মাসিক বাজার সারতে এসেই কিনে নিচ্ছেন প্রিয় পিঠা।
নগরীর কাজির দেউড়ি এলাকার শপিং ব্যাগ নামক একটি সুপার শপের বাইরে শপের সৌজন্যে চলছে পিঠা তৈরি ও বিক্রির আয়োজন। গ্রামের ছোঁয়া দিতে শপের ক্ষণস্থায়ী বর্ধিত অংশটিকে সাজানো হয়েছে খড়, ছন ও বাঁশ দ্বারা। সেখানে পিঠা বানাতে বানাতে শরীফা নামে একজন বলেন, ‘প্রতিবছরই আমরা পিঠা বানাই ও বিক্রি করি। স্যার মেডামরা নিয়ে যায়। অনেকে আগে থেকে অর্ডার দিয়ে রাখে। ডেইলি ৪ থেকে ৫’শ পিঠা বানাই বিকাল ৩টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত। যারা খায় তারা আবারো খাইতে আসে, অর্ডার দেয়। ভালো লাগে। ’