আবেদন অনলাইনে
ভূঁইয়া নজরুল »
শুরু হচ্ছে কলেজ ভর্তি কার্যক্রম। আগামী শনিবার থেকে শুরু হতে যাওয়া এই ভর্তি কার্যক্রমে আবেদন করা যাবে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। ১৫০ টাকায় সর্বোচ্চ ১০টি কলেজে আবেদনের সুযোগ পাবে শিক্ষার্থীরা। শতভাগ অনলাইন পদ্ধতিতে আবেদনের পর প্রথম পর্যায়ের নির্বাচিতদের তালিকা প্রকাশ করা হবে ২৯ জানুয়ারি।
গত ৩০ ডিসেম্বর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পরপরই একাদশ ভর্তি কার্যক্রম শুরুর নির্দেশনা দেয়া হয়। একইসাথে আগামী ২ মার্চ থেকে একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরুরও ঘোষণা দেয়া হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে। কিন্তু ভর্তি নীতিমালায় কি রয়েছে? শিক্ষার্থীদের প্রতি নির্দেশনা কি? কিংবা পর্যাপ্ত আসন রয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তর জানতে কথা হয় চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর জাহেদুল হকের সঙ্গে।
ভর্তির আবেদন ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত
আগামী শনিবার ৮ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া অনলাইন ভর্তি কার্যক্রম চলবে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। অর্থাৎ এই সময়ের মধ্যে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি ইচ্ছুক সব শিক্ষার্থীকে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। শিক্ষার্থীরা এই ওয়েবসাইটে www.xiclassadmission.gov.bd গিয়ে অনলাইনে আবেদন করবে।
সর্বোচ্চ ১০টি কলেজে আবেদন উত্তম
ভর্তি নীতিমালা অনুযায়ী একজন শিক্ষার্থী সর্বনিম্ন পাঁচটি থেকে সর্বোচ্চ ১০টি কলেজ পছন্দক্রম অনুযায়ী নির্ধারণ করতে পারবে। তবে এ বিষয়ে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর জাহেদুল হক বলেন, ‘অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায় যেসব শিক্ষার্থী অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হয়ে ৫টি কলেজ নির্বাচন করে অনেকক্ষেত্রে তারা কলেজ পায় না। আর প্রথম পর্যায়ের তালিকায় কলেজ পাওয়া না গেলে পরবর্তীতে অনেকসময় কাক্সিক্ষত কলেজ পাওয়া যায় না। তাই পছন্দের ১০টি কলেজ নির্বাচন করা উত্তম।’
তিনি আরো বলেন, কলেজ নির্বাচনের ক্ষেত্রে পছন্দক্রম বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কলেজের টিউশন ফি, বাসা থেকে দূরত্ব এসব বিষয় বিবেচনা করে কলেজ নির্বাচন করা প্রয়োজন।
তালিকা কিভাবে প্রস্তুত করা হবে?
আবেদনকৃত ১০টি কলেজ থেকে কিভাবে একজন শিক্ষার্থীর জন্য মনোনীত কলেজ নির্বাচন করা হবে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের কলেজ পরিদর্শক জাহেদুল হক বলেন, ‘শিক্ষার্থীর এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলের প্রাপ্ত নম্বর ও পছন্দক্রম বিবেচনা করে সারাদেশে কেন্দ্রীয়ভাবে একটি তালিকা প্রস্তুত করা হবে। সেই তালিকায় কোন শিক্ষার্থী কোন কলেজে ভর্তির জন্য মনোনীত হয়েছে তা প্রকাশ করা হবে।’
এদিকে ভর্তি নীতিমালা অনুযায়ী, প্রথম পর্যায়ের তালিকায় নির্বাচিত হওয়ার পর যদি ভর্তি নিশ্চায়ন না করে তাহলে তার ভর্তি বাতিল হয়ে যাবে। দ্বিতীয় দফায় আবেদনের সময় আবারো ১৫০ টাকা দিয়ে নতুন করে আবেদন করতে হবে। তবে প্রথম পর্যায়ে যদি কেউ কোনো কলেজে ভর্তির জন্য বিবেচিত না হয় তাহলে তাকে নতুন করে আবেদন করতে হবে না। শিক্ষার্থী যদি মনে করে পছন্দক্রম পরিবর্তন করা প্রয়োজন তাহলে পরিবর্তন করতে পারবে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর জাহেদুল হক বলেন, অবশ্যই শিক্ষার্থীকে আবেদনের প্রিন্ট কপি রাখতে হবে।
ভর্তিতে আসনের সমস্যা হবে না
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর জাহেদুল হক বলেন, এবার এসএসসিতে পাশের হার অনেক বেশি হলেও বোর্ডের ২৭৭টি কলেজে ভর্তি কার্যক্রম চলবে। এসব কলেজে এসএসসিতে পাশের চেয়ে বেশি আসন রয়েছে। তাই সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তবে চট্টগ্রামের ছয় সরকারি কলেজে এবার আসন রয়েছে ৮ হাজার ৩৪৫টি। এরমধ্যে বিজ্ঞানে ২ হাজার ৮২০, মানবিকে ২ হাজার ৩০৫ ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৩ হাজার ২২০টি।
পরিবর্তন করা যাবে পছন্দক্রম
এদিকে তালিকায় ১০টি কলেজ পছন্দক্রম দেয়া হলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কেউ চাইলে পছন্দের ক্রম পরিবর্তন করতে পারবে। একইসাথে প্রথমবার কেউ আবেদন করলে দ্বিতীয় ও তৃতীয় আবেদনের সময়ও কোনো ফি লাগবে না এবং পছন্দের ক্রমও পরিবর্তন করতে পারবে।
প্রথম পর্যায়ের নির্বাচিতদের তালিকা প্রকাশ ২৯ জানুয়ারি
৮ জানুয়ারি থেকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত আবেদনকৃত শিক্ষার্থীদের আবেদন যাচাই বাছাই করে প্রথম পর্যায়ের নির্বাচিতদের তালিকা প্রকাশ করা হবে ২৯ জানুয়ারি। ৩০ জানুয়ারি থেকে ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা তাদের কাছে থাকা পিন কোড দিয়ে ভর্তির নিশ্চায়ন করবে।
প্রথম পর্যায়ে যারা ভর্তি নিশ্চায়ন করবে না তাদের আবেদন বাতিল হয়ে যাবে এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে পুনরায় আবেদন করতে হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। প্রথম পর্যায়ের মাইগ্রেশনের ফলাফল ও দ্বিতীয় পর্যায়ে মনোনীতদের তালিকা প্রকাশিত হবে ১০ ফেব্রুয়ারি। দ্বিতীয় পর্যায়ে মনোনীতদের নিশ্চায়নের জন্য ১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছে। ১৩ ফেব্রুয়ারি রাখা হয়েছে তৃতীয় পর্যায়ের আবেদনের জন্য। আর দ্বিতীয় পর্যায়ে ভর্তিকৃতদের মাইগ্রেশনের ফলাফল ও তৃতীয় পর্যায়ের মনোনীতদের তালিকা প্রকাশ করা হবে ১৫ ফেব্রুয়ারি। তৃতীয় পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা ভর্তির নিশ্চায়ন করবে ১৬ ও ১৭ ফেব্রুয়ারি। ভর্তি নিশ্চায়ন শেষ হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট কলেজগুলো ভর্তি কার্যক্রম শুরু করবে ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে। একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু হবে ২ মার্চ থেকে।
পুনঃনিরীক্ষণের শিক্ষার্থীরা আবেদন যাচাই বাছাইয়ের সুযোগ পাবে
ভর্তি নীতিমালা অনুযায়ী ১৫ জানুয়ারি শেষ হয়ে যাচ্ছে আবেদনের সুযোগ। অপরদিকে এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলকে চ্যালেঞ্জ করে যারা আবেদন করবে (৬ জানুয়ারির মধ্যে) তাদের ফলাফল প্রকাশের পর ২২ ও ২৩ জানুয়ারির মধ্যে তারা তাদের আবেদনকৃত ফরমের পছন্দক্রম পরিবর্তন করতে পারবে। একইসাথে তারা নতুন করেও আবেদন করতে পারবে। পুনঃনিরীক্ষণের ফলাফল প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ন চন্দ্র নাথ বলেন, ‘এখনো তো আবেদন গ্রহণ করা হচ্ছে। ৬ জানুয়ারি আবেদনের শেষ তারিখ। আবেদনের পর ফলাফল তৈরি করতে একমাস সময় লেগে যায়। তারপরও এবার যেহেতু ভর্তি কার্যক্রম তাই আমরা ২০ জানুয়ারির মধ্যে ফলাফল তৈরির চেষ্টা করবো।’
উল্লেখ্য, এই ভর্তি প্রক্রিয়ায় একজন শিক্ষার্থীকে শুধু কলেজে ভর্তি হওয়ার সময় ছাড়া এর আগে কলেজে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। অনলাইন পদ্ধতিতে ঘরে বসেই আবেদন ও ভর্তি নিশ্চায়ন করতে পারবে।