নিজস্ব প্রতিনিধি, লামা :
লামা-আলীকদম, ফাসিয়াখালী সড়কের প্রতিটি বাঁকই পরিণত হয়েছে মৃত্যুফাঁদে।
সড়কের ১৯-২০ কি. পয়েন্টে পাথরের কংক্রিট বোঝায় দু’টি ড্রাম ট্রাক উল্টে যায়। ২৭ নভেম্বর সকাল ৯টা ৫ মিনিটে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। গত ৪ দিনের ব্যবধানে এ নিয়ে তিনটি মালবাহী ট্রাক-লরি দুর্ঘটনায় পতিত হল। সড়কের প্রতিটি বাঁক যেন মৃত্যুর ফাঁদ। অতিরিক্ত মাল বোঝায়, ঝুঁকিপুর্ণ বাঁকে একটি গাড়ি অন্যটিকে ওভারটেক করতে গিয়ে এ সব দুর্ঘটনা ঘটছে।
এর আগে ২৫ নভেম্বর দুপুরে খাম্বাবাহী আরেকটি লরি পাহাড়ের খাদে পড়ে যায়। এ নিয়ে গত এক মাসে ১২টি মালবাহী গাড়ি দুর্ঘটনায় পতিত হয়। এতে একজন চালকের মৃত্যু এবং ৫ জন চালক গুরুতর আহত হয়েছে।
রোডের ধারণ ক্ষমতার অনেক গুণ বেশি মালামাল পরিবহন, রাস্তার প্রশস্ততা কম, বাঁকগুলো নজরে আসার মতো রোড সাইন ও দুর্ঘটনা প্রতিরোধ ব্যবস্থা না থাকার কারণে এসব দুর্ঘটনা হচ্ছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই সড়কে যাত্রীবাহী গাড়িসহ ট্রাক, লরি, কার্গো ও সরকারি সংস্থার বড় বড় গাড়ি চলাচল বহু গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তাছাড়া পর্যটকদের আগমনও বেড়েছে। এই বাস্তবতায় ৮০’র দশকে নির্মিত ১২ ফুট, কোন স্থানে ১৮ ফুট প্রশস্ত সড়কটি বর্তমানে নিরাপদ নয়।
সড়কের প্রতিটি বাঁক বিপজ্জনক, যেন একেকটি মৃত্যুফাঁদ। সেনাবাহিনী ইসিবি’র মাধ্যমে ৪৪ কি. মি. সড়কের ৩০ ফুট প্রশস্ত করা এবং আলীকদম-পোয়ামুহুরী সড়কের সাথে সংযুক্ত করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। একই সাথে বাঁকগুলো চালকদের নজরে আসার মতো রোড সাইন স্থাপন ও বান্দরবান সড়কের ন্যায় দুর্ঘটনা প্রতিরোধ (পাহাড়ের বিপরীত পাশে মাটির ঢিবি) ব্যবস্থা করা দরকার।
৪৪ কি.মি. সড়কটি নির্মাণের পর থেকে যথাযথ মান রক্ষা করে সংস্কার না করা, ঝুঁকিপূর্ণ বিভিন্ন বাঁকে রোড সাইন-দুর্ঘটনা প্রতিরোধ ব্যবস্থা না করায় মূলত মরণ ফাঁদে রূপ নিয়েছে সড়কের বিভিন্ন বাঁক।
বর্তমানে সড়কে যে হারে বড় বড় ট্রাক, বাস, লরি ও কার্গো যাতায়ত করছে তাতে ৮০’র দশকে নির্মিত রাস্তাাটিতে ব্যাপক চাপ পড়ছে।
এ কারণে সড়কের ১৯-২০ কি. পয়েন্টে গত এক মাসে ৬টি মালবাহী ট্রাক-লরি দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছে।
এর আগে ১৯৮৯ সালে রাষ্ট্রপতির প্রোটকলের একটি পুলিশ ভ্যান এই বাঁকে দুর্ঘটনায় কবলিত হলে ১০ জন পুলিশ প্রাণ হারান। তার আগে ১৯৮৬ সালে একইস্থানে আরেকটি চাঁদের গাড়ি খাদে পড়ে ১২ যাত্রী নিহত হন।
অভিযোগ উঠেছে, লামা-আলীকদম, ফাঁসিয়াখালী সড়কে যাত্রী ও মালামাল সেবায় চলছে লক্কর ঝক্কর গাড়ি। লামা উপজেলা প্রশাসন ও ট্রাফিক বিভাগের নেই কার্যকর কোন উদ্যোগ। যার কারণে চালকরাও সড়ক আইনের তোয়াক্কা না করে নিজের মতো করে গাড়ি চালাচ্ছে।
লামা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, সেনাবাহিনীসহ সরকারের প্রকৌশল টিমের সরেজমিন পর্যবেক্ষণ করে লামা-আলীকদম, ফাঁসিয়াখালী সড়কটি ব্যাপক সংস্কার দরকার। একাজে যত দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া যায়, ততই মঙ্গল। এতে কমে আসবে সড়ক দুর্ঘটনা। সড়কের বাঁকগুলোকে চালকদের নজরে আনতে দৃষ্টি আকর্ষক রোড় সাইন স্থাপন, দুর্ঘটনা প্রতিবন্ধক ব্যবস্থা ও সড়ক প্রশস্ত করা জরুরি। বিষয়টি সংশি¬ষ্ট মহলের নজরে আনা প্রয়োজন।