নিজস্ব প্রতিবেদক »
ওয়াসার পানি সরবরাহে সংকট ও পানিতে দীর্ঘদিন ধরে লবণাক্ততার কারণে তিনমাস ধরে সীমাহীন ভোগান্তিতে নগরবাসী। ঈদের পর ওয়াসার পানিতে অনেকগুণ বেশি লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় নগরের অনেক এলাকাতে বোতলজাত পানি কিনে পান করতে হচ্ছে। এতে করে নি¤œ ও মধ্যম আয়ের মানুষ যারা নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্যে দিশেহারা তার মধ্যে বোতলজাত পানি কেনাতেই অনেকেরই বাড়তি চাপ পড়ছে।
গতকাল বুধবার দুপুরে নগরীর পাথরঘাটার ২ নম্বর নজু মিয়া লেইন এলাকার বাসিন্দা মামুন মুন্সি নামক এক ভাড়াটিয়া বলেন, ‘বিগত দেড়মাস ধরে ওয়াসার পানি নিয়ে ভোগান্তিতে আছি। পুরো রমজানে পরিবারের সবাইকে পান করতে হয়েছে বোতলজাত পানি। এমনিতে নিত্যপণ্যের চড়া বাজারে নূন আনতে পানতা ফুরায় অবস্থা তার মধ্যে পানি কেনায় আরেক খরচ বাড়লো। প্রতি ২০ লিটার বোতলজাত পানি ৫০ টাকায় করে কিনতে হয়। রমজানের একমাসে ছয়শো টাকার পানি কেনা লাগছে।’
বাকলিয়ার কোরবানিগঞ্জের ভবন মালিক নূর হোসেন বলেন, ‘ওয়াসার পানিতে লবণাক্ততার কারণে দুই ভাড়াটিয়া ইতিমধ্যে বাড়ি পরিবর্তন করেছে। ঈদের আগে লবণাক্ততার হার কম থাকলেও এখন আরও বাড়ছে। ওয়াসা কর্তৃপক্ষের অনেকটা অবহেলা আছে বলে মনে করছি।’
এদিকে সংকট নিরসনের দাবিতে গতকাল বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম ওয়াসা কার্যালয়ের পাশে মানববন্ধন করেছেন নগরীর বিভিন্ন এলাকার অর্ধশতাধিক বাসিন্দা। ওয়াসার পানির সরবরাহ সংকট নিরসন ও পানিকে লবণমুক্ত করার দাবিতে এ মানববন্ধনের আয়োজন করেন ‘চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরাম’ নামে একটি সংগঠন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, বর্তমান ওয়াসার পানি পান করার মতো কোন ধরনের অবস্থা নেই। দেড় মাস আগের চেয়ে বর্তমান ওয়াসার পানিতে লবণের মাত্রা এত বেশি যে তা পান করে মানুষ অসুস্থ হচ্ছেন। প্রতিবছর নদীর পানিতে লবণের মাত্রা বেড়ে যায়। কিন্তু ওয়াসা কর্তৃপক্ষ সংকট মোকাবিলায় কোন ধরনের পূর্বপ্রস্তুতি নেয়নি। এ গাফিলতির দায় ওয়াসাকে নিতে হবে।
মানববন্ধন শেষে ওয়াসা কর্তৃপক্ষের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। সেখানে বলা হয়েছে, নগরীর বেশ কিছু এলাকায় ওয়াসার পানি সরবরাহ খুবই কম। এদিকে তিন মাস আগে থেকে পানিতে অতিরিক্ত লবণাক্ততার বিষয় নজরে আসার পরও কর্তৃপক্ষ সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হয়েছে। লবণাক্ত এ পানি পান করে ডায়াবেটিস, কিডনি রোগ, ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার সদস্য জহুর আহমদ চৌধুরীর ছেলে জসিম উদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের মহাসচিব কামাল উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মনসুর, জেলা সদস্য মাসুদ খানসহ প্রমুখ।
চট্টগ্রাম ওয়াসার কর্মকর্তাদের মতে, স্বাভাবিক সময়ে ওয়াসার সরবরাহ করা প্রতি লিটার পানিতে মোট দ্রবীভূত কঠিন পদার্থ (টিডিএস), যেগুলো প্রধানত বিভিন্ন ধরনের লবণ থাকে ১০ থেকে ১৫ মিলিগ্রাম, তবে সরবরাহকৃত পানিতে টিডিএস এখন বেড়ে লিটার প্রতি ৩০০ থেকে ৩৫০ মিলিগ্রাম হয়েছে। ওয়াসার পানি সংগ্রহের প্রধান দুই উৎস হালদা ও কর্ণফুলী নদীতে সমুদ্রের লবণাক্ত পানি প্রবেশের কারণে লবণাক্ততা বেড়েছে বলে জানা যায়।
এদিকে ওয়াসার লবণাক্ততা অপসারণ প্ল্যান্ট না থাকায় কর্তৃপক্ষ এখন বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করছে যাতে নদীতে লবণাক্ততা কমে যায়।
সংকটের বিষয়ে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, সমুদ্রের লবণাক্ত পানি নদীতে ঢুকছে। তাছাড়া কর্ণফুলী নদীতে শ্যাওলা জমেছে। রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে মুষলধারে বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত এ সমস্যার পুরোপুরি সমাধান সম্ভব নয়।