লবণ মাঠের মাঝখানে হলুদ- সবুজ রঙের বিস্তীর্ণ ক্ষেত

পেকুয়া উপজেলার উজানটিলা ইউনিয়নে লবণ মাঠের মাঝখানে হলুদ-সবুজ রঙের বিস্তীর্ণ সরিষার ক্ষেত -সুপ্রভাত

এস এম জুবাইদ, পেকুয়া »

লবণ চাষ এবং উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলা। এ উপজেলার সাগরকূলবর্তী একটি ছোট্ট ইউনিয়ন উজানটিয়া। এ ইউনিয়নে বর্তমানে চলছে লবণ উৎপাদনের ধুম কিন্ত লবণের মাঠে লবণ চাষ না করে করছেন বিনা-১৪ সরিষা চাষ। এ চাষে সফলতাও পেয়েছেন।
এমন এক অদ্ভুত দৃশ্য দেখা যায় এ ইউনিয়নের উপকূলীয় এলাকার গোদারপাড়া, পশ্চিম উজানটিয়া মিয়ারপাড়া এবং করিয়ারদিয়ায়।
সাফল্যের গল্প শুনতে সরিষা বাগানে গিয়ে কথা হয় চাষি মোহাম্মদ ওসমানের সাথে তিনি বলেন, ‘প্রায় ২০ বছর ধরে লবণ চাষ ও মৎস্য ঘের করছি। কিন্তু দুই বছর ধরে মিটা পানি দিয়ে ধান চাষ করছি। এই বছর উপ কৃষি কর্মকর্তা শামসু উদ্দিন এর পরামর্শে এ জমিতে প্রথমবার সরিষার চাষ করেছি। লবণাক্ত মাটি হওয়ায় অন্য চাষের চেয়ে সরিষা কম হয়েছে। তবে ইনশাআল্লাহ আগামী বছর থেকে সরিষার ফলন ভালো হবে।
আরেক চাষী রহমত উল্লাহ বলেন, এ লবণাক্ত মাটিতে আমি লবণ চাষ করতাম। আমাদের চারপাশে শুধু লবণের পানি আর লবণ চাষ হচ্ছে। সরকার আমাদের একটা গভীর নলকূপ দিয়েছে। কৃষি কর্মকর্তা মিজবাহ উদ্দীনের পরামর্শে এই নলকূপের পানি দিয়ে আমরা সরিষার চাষ করেছি। আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো চাষ হয়েছে। আমরা অনেক খুশি হয়েছি। আগামী বছর আবারো এই সরিষা চাষ করব।
স্থানীয়রা জানান, লবণের মাঠের মাঝখানে হলুদ-সবুজ রঙের এক বিস্তীর্ণ ক্ষেত। লবণাক্ত মাটিতে এই ধরনের চাষাবাদ স্থানীয় কৃষকদের জন্য একটি নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করেছে। উপকূলীয় এলাকার লবণাক্ত মাটিতে প্রথমবারের মতো বিনা-১৪ সরিষা চাষে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন স্থানীয় কৃষক ওসমান ও রশিদ। এছাড়াও আরো ৪০ চাষী সরিষা চাষে কাজ করছে।
সিনিয়র উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামসু উদ্দিন বলেন, যে মাটিতে লবণ চাষ হতো, তেল ফসল উৎপাদন প্রকল্পের আওতায় সেখানে আমরা চাষিদের নানা সহায়তার মাধ্যমে এ সরিষা চাষ করেছি। আমাদের কঠোর পরিশ্রমে এ প্রথম সরিষার চাষ করেছি আলহামদুলিল্লাহ ভালো ফসল হয়েছে।ইনশাআল্লাহ আগামী বছর আরো উদ্যোক্তা নিয়ে বেশি সরিষা চাষ করব।
উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মিসবাহ উদ্দিন আরেফী বলেন, এ এলাকায় প্রথমবারের মতো বারি সরিষা-১৪ ও প্রণোদনা সরিষা চাষের উদ্যোগ নিতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। লবণাক্ত এলাকায় এটি আমার জন্য একটি নতুন অভিজ্ঞতা, যা আমি অত্যন্ত আগ্রহ ও উদ্দীপনার সঙ্গে শুরু করেছি। আমাকে মাস্টার মুফিজুর রহমান, ডাক্তার রহমত উল্লাহ, নুরুল কায়েস ও কাজী আজিজসহ সকল কৃষক সহযোগিতা করেছেন। সবার যথেষ্ট আগ্রহ ছিল। আমাদের এলাকায় সরিষা চাষে সম্ভাবনা রয়েছে অনেক। বিশেষ করে তেল উৎপাদনের ক্ষেত্রে। প্রথমবার হওয়ায় কৃষকদের অনেক কিছু শেখার সুযোগ হয়েছে, যা ভবিষ্যতে আরও সফল হতে সহায়তা করবে। আমি আশা করি, সঠিক পরিশ্রম ও যত্নের মাধ্যমে একটি ভালো ফলন পাব এবং এই উদ্যোগটি সফলভাবে বাস্তবায়িত হবে। সবার সহযোগিতা এবং কৃষকদের আন্তরিকতা বহাল থাকলে এটি সরিষা গ্রাম হিসেবে খ্যাতি লাভ করবে।
এ বিষয়ে পেকুয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাসেল বলেন, পেকুয়া উপজেলার মধ্যে বেশি লবণাক্ত ইউনিয়ন উজানটিয়া। এ ইউনিয়নে এই বছর আমরা তেল ফসল উৎপাদন প্রকল্পের আওতায় ৪০ জন কৃষককে ৪০ একর জমির জন্য বীজ দিয়েছি, আর রাজস্ব আওতায় সার, কীটনাশক দিয়েছি এ কৃষকদের। সরিষার ফলনের উত্তম মাস হলো অক্টোবর শেষ থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত। বলতে গেলে আমন আর বোরো ধানের মধ্যবর্তী সময়ে চাষ করা হয় সরিষা। যত বেশি শীত পড়বে যতবেশি সরিষা ফলন ভালো হবে। সরিষার সময় ৬৫-৭০ দিন। সরকার তেল উৎপাদনের জন্য এই প্রকল্প নিয়েছেন। আলহামদুলিল্লাহ অনেকের ফলন ভাল হয়েছে।