উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়েছে মধ্যস্বত্বভোগীদের কারসাজি। লাভ কৃষকের ঘরে যাবে কি, এখনই ভাগ-বাঁটোয়ারায় ব্যস্ত হয়ে পড়ছে এরা।
কক্সবাজারে ৬৬ হাজার একর জমিতে দৈনিক লবণ উৎপাদন হচ্ছে ৩৮ হাজার মেট্রিক টন। গত মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) পর্যন্ত চলতি মৌসুমের ৫ মাসে লবণ উৎপাদিত হয়েছে ২৩ লাখ ৮০৪ মেট্রিক টন, যা বাণিজ্যিকভাবে লবণ উৎপাদনের ইতিহাসে গত ৬৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। কক্সবাজারে বাণিজ্যিকভাবে লবণ উৎপাদন শুরু হয় ১৯৬০ সালে। গত মৌসুমের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত লবণ উৎপাদিত হয় ১৯ লাখ ৫৩ হাজার ৬১৬ মেট্রিক টন।
বিসিকের দেওয়া তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে (নভেম্বর থেকে এপ্রিল) জেলার টেকনাফ, কুতুবদিয়া, পেকুয়া, কক্সবাজার সদর, ঈদগাঁও, মহেশখালী, চকরিয়া ও চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় ১৬ হাজার ৪২৪ একর জমিতে লবণ উৎপাদিত হচ্ছে। এসব জমিতে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২০ লাখ ৪৫ হাজার মেট্রিক টন। দেশে লবণের বার্ষিক চাহিদা ২০ লাখ ২৮ হাজার মেট্রিক টন।
এ বছর মৌসুমজুড়ে কম বৃষ্টি, এপ্রিল মাসজুড়ে তাপপ্রবাহ পরিস্থিতি, মাঠে শতভাগ পলিথিন প্রযুক্তির পাশাপাশি ১ হাজার ৯০০ একরের বেশি জমিতে লবণের চাষ হয়েছে। এ ক্ষেত্রে অতীতের সব রেকর্ড অতিক্রম করেছেন চাষিরা। আরও তিন-চার লাখ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদনের সম্ভাবনা আছে।
এই পরিস্থিতি লবণচাষিদের ভাগ্য খুলে দিলেও তার সুফল তারা পুরোপুরি ভোগ করতে পারবেন না দাদন ব্যবসায়ী ও লবণ বাবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে। মার্চ মাসে মাঠপর্যায়ে প্রতি মণ লবণের দাম ছিল ৪০০ টাকার বেশি। এপ্রিলের মাঝামাঝিতে এসে তা কমে দাঁড়ায় ৩৬০ টাকায়। বর্তমানে তা ৩০০ টাকায় এসে ঠেকেছে। এরপর দাম আরও কমলে চাষিদের লোকসান গুনতে হবে। বর্তমানে প্রতিমণ লবণ উৎপাদনের ক্ষেত্রে চাষিদের খরচ হচ্ছে ২১০ টাকার বেশি। এদের অধিকাংশের নিজস্ব জমি নেই। অন্যের জমি বর্গা নিয়ে লবণ চাষ করেন তারা। আগে প্রতি কানি জমির বিপরীতে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হতো। এখন পরিশোধ করতে হয় ৭০ হাজার টাকা।
এখন দরকার চাষিদের প্রতি সহযোগিতার হাত প্রসারিত করা। এ ক্ষেত্রে সরকারেরও দায় আছে। অতি উৎপাদনে প্রায় সময় চাষিরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। লাভবান হয় দাদন ব্যবসায়ী ও মধ্যস্বত্বভোগীরা। এদের হাত থেকে চাষিদের রক্ষার কৌশল ও উপায় বের করতে হবে। নতুবা উৎপাদনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে তারা।
এ মুহূর্তের সংবাদ