সুপ্রভাত ডেস্ক »
বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সোমবার রাতে সরকারি সফরে যুক্তরাজ্যে যাচ্ছেন। এই সফরে লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে তার একটি বৈঠকের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা তৈরি হয়েছে।
সোমবার (৯ জুন) বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বিষয় জানা গেছে।
এদিকে সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় প্রধান উপদেষ্টার ঢাকা ছাড়ার কথা থাকলেও চূড়ান্ত সফরসূচি তার সফরসঙ্গীদেরও দুপুর পর্যন্ত দেয়া হয়নি।
এ সফরে বিটিভি ও পিআইডির প্রতিনিধি নেয়া হলেও সরকারি বার্তা সংস্থা বাসসের কোনো প্রতিনিধিসহ আর কোন সাংবাদিককে নেয়া হচ্ছে না, যা অনেকটা নজিরবিহীন বলে অনেকের কাছে মনে হচ্ছে।
আবার প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গীদের তালিকায় নাম আছে দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান আব্দুল মোমেন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের নামও। এটিকেও অনেকে বিরল ঘটনা বলে মনে করছেন।
সরকারি বার্তা সংস্থা বাসস অবশ্য প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়কে উদ্ধৃত করে বলেছে ‘তাঁর এ সফরে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে যুক্তরাজ্যের সমর্থনের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পাবে। এর পাশাপাশি পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার বিষয়টিতে প্রাধান্য দেবে বাংলাদেশ’।
ওদিকে কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, সফরে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমারের সঙ্গে মি. ইউনূসের একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও সেটি কখন হবে তা এখনো পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়নি।
আবার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি ও ব্রিটিশ পার্লামেন্টের এমপি টিউলিপ সিদ্দিক মি. ইউনূসের যুক্তরাজ্য সফরের সময় তার সাথে সাক্ষাতের প্রস্তাব করে চিঠি দিয়েছেন বলে গার্ডিয়ান সংবাদ প্রকাশ করেছে। তার প্রেস উইং অবশ্য আগেই জানিয়েছে যে, টিউলিপ সিদ্দিকের কোন চিঠি তারা পাননি।
কর্মসূচির তালিকায় কী আছে
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের এ সফরের কর্মসূচিকে সরকারের সূত্রগুলো ‘কনফিডেনশিয়াল’ উল্লেখ করেছে বিস্তারিত জানাতে রাজি হয়নি। সরকারি সফর হলেও এবারে এই সফরে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে রাজার কাছ থেকে প্রধান উপদেষ্টার হারমনি অ্যাওয়ার্ড গ্রহণের বিষয়টি।
সরকারি বার্তা সংস্থা বাসসের খবরে বলা হয়েছে, সফরকালে বাকিংহাম প্যালেসে ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে দেখা করবেন তিনি। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা রাজা চার্লসের হাত থেকে গ্রহণ করবেন ‘কিংস চার্লস হারমনি অ্যাওয়ার্ড’।
সফরে অধ্যাপক ইউনূস ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গেও তার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে। এর বাইরেও বিভিন্ন কর্মসূচি রয়েছে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলোর কাছ থেকে পাওয়া খবর অনুযায়ী, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমারের সাথে বৈঠক হবে এটি মোটামুটি নিশ্চিত হলেও কখন এই বৈঠকটি হবে সেটি আজ সোমবার দুপুর (বাংলাদেশ সময়) পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়নি।
সুত্রগুলো বলছে, লন্ডনে পৌঁছানোর পর মি. ইউনূস বাংলাদেশ বিষয়ক অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপের সাথে বৈঠক করবেন। এছাড়া ইউকে স্পেশাল এনভয় টু উইমেন অ্যান্ড গার্লস, ট্রেড এনভয় টু বাংলাদেশ, আন্তর্জাতিক সমুদ্র সংস্থা এবং কমনওয়েলথ মহাসচিব তার সাথে সাক্ষাত করবেন।
বাংলাদেশের সরকারি বার্তা সংস্থা বাসস জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের নীতিগবেষণা প্রতিষ্ঠান চ্যাথাম হাউস আয়োজিত এক সংলাপে অংশ নেবেন প্রধান উপদেষ্টা।
জানা গেছে, বাকিংহাম প্রাসাদে ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে সাক্ষাত এবং চার্লস হারমনি অ্যাওয়ার্ডে তার যোগ দেয়ার কথা রয়েছে ১২ই জুন। এছাড়া তিনি কিংস ফাউন্ডেশনের ৩৫তম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত নৈশভোজেও অংশ নিবেন।
এর বাইরে কিছু প্রভাবশালী ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমকে তিনি সাক্ষাতকার দিবেন এবং ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ কয়েকজন ব্রিটিশ রাজনীতিক তার সঙ্গে দেখা করবেন বলেও কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে।
তবে ব্রিটেনে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের সাথে একটি অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা থাকলেও শেষ পর্যন্ত নিরাপত্তাজনিত কারণে সেটি বাতিল হয়েছে বা হতে পারে বলে কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে।
তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকের সম্ভাবনা
ঢাকায় ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব রুহুল আলম সিদ্দিকীকে ৪ঠা জুনের সংবাদ সম্মেলনে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে যুক্তরাজ্য সফরের সময় প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের কোনও কর্মসূচি রয়েছে কি-না। জবাবে মি. সিদ্দিকী বলেছিলেন, “সফরসূচিতে এ বিষয়ে কোনও তথ্য নেই’।
তবে ঢাকা ও লন্ডনে বিএনপির সূত্রগুলো দাবি করছে যে, প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকেই তারেক রহমানের সঙ্গে একটি বৈঠকের বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশের পর দু’পক্ষ বিষয়টি নিয়ে এখনো আলোচনায় রয়েছে।
তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, মি. রহমান কিংবা বিএনপিরও এ ধরনের একটি বৈঠকের বিষয়ে অনাগ্রহ নেই কিন্তু নির্বাচনের সময়সীমা হিসেবে এপ্রিল মাসকে ঘোষণা করে দেয়ার পর এখন আর ‘ইউনূস-তারেক বৈঠক’ কিংবা তাদের মধ্যকার আলোচনার প্রয়োজনীয়তা কতটা আছে- সেই প্রশ্নও দলটির ভেতরে আলোচিত হচ্ছে।
আবার শেষ পর্যন্ত উভয় পক্ষ একমত হতে পারলেও বৈঠকটি কোথায় কিভাবে হতে পারে তা নিয়েও দুই দিকেই নানা ধরনের মত আছে। আবার একটি সরকারি সফরে গিয়ে একটি রাজনৈতিক দলের প্রধানের সাথে বৈঠক- ঠিক হবে কি-না তাও বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।
যদিও বিভিন্ন সময়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার দফতরে সংযুক্ত ছিলেন এমন কয়েকজন সোমবার দুপুরেই সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে জানিয়েছেন যে, মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমানের মধ্যে একটি বৈঠক হতে যাচ্ছে।