নিজস্ব প্রতিনিধি, ফটিকছড়ি »
ফটিকছড়িতে গৃহস্থালী কাজে যোগ দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নিচ্ছেন মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা পরিবার। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা টাকার বিনিময়ে এমনটা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে পরিবারটির এক সদস্য এনআইডি পেয়ে পাসপোর্ট তৈরী করে বিদেশেও চলে গেছেন। সম্প্রতি স্থানীয় এক বাসিন্দা ইউএনও, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বরাবর এমন অভিযোগ করলে বিষয়টি সামনে আসে। পরে বিষয়টিকে স্পর্শকাতর উল্লেখ করে গুরুত্ব দিয়ে তদন্তের আশ্বাস দিয়ে উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দিনকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে তিন কর্মদিবসে তদন্ত করে বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য নির্দেশ দেন ইউএনও মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী।
মঙ্গলবার (৩ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের গুরা মিয়া চৌধুরীর পরিত্যাক্ত কাচারী ঘরে বসবাস করছে আট সদস্যের পরিবারটি।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায় , ২৭ বছর পূর্বে স্বামী ও এক সন্তান নিয়ে সাজেদা বেগম নামে এক রোহিঙ্গা মহিলা এলাকায় আসে। পরে ঐ মহিলা স্থানীয় চৌধুরী পরিবারে গৃহস্থালী এবং তার স্বামী কৃষি কাজে যোগ দেয়। এর মধ্যে তাদের সংসারে পর্যায়ক্রমে জন্ম নেয় পাঁচ সন্তান।
পরে ২০০৮ সালে দেশে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরীর কার্যক্রম শুরু হলে স্থানীয় স্থানীয় ইউপি সদস্যের সহযোগিতায় এনআইডি পান সাজেদা ও তার স্বামী হাছান। পরবর্তীতে মাতা -পিতার এনআইডির সূত্র ধরে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জন্ম সনদ তৈরীতে মনোযোগী হয় পরিবারটি। তথ্য উপাত্ত যাচাই করে দেখা যায়, ইউনিয়ন পরিষদের দেয়া জন্মসনদে ২০১৫ সালে পাসপোর্ট তৈরী করে বিদেশে পাড়ি জমান রোহিঙ্গা পরিবারটির বড় ছেলে ওসমান গনী। ২০২৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক দেয়া জন্মসনদে এনআইডি পান পরিবারটির আরেক ছেলে ইউছুপ। এছাড়াও স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদ হতে জন্মসনদ তৈরী করেন সাজেদার দুই ছেলে আইয়ুব ও ইসমাইল। অন্যদিকে, বাপের বাড়ি থেকে জন্ম সনদ নিলেও শ্বশুর বাড়ি ভুজপুর ইউনিয়নের ঠিকানায় এনআইডি তৈরী করেন মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস।
স্থানীয়দের সাথে কথা হলে তারা অভিযোগ করে বলেন, এর দায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও নির্বাচন কার্যালয় এড়াতে পারে না। কোন কিছুর বিনিময় ছাড়া এমন কাজ কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি সদস্য আলকাছ উদ্দিন বলেন, পরিবারটির ছয় সন্তানকে মা-বাবার ঠিকানার সূত্র ধরে জন্মনিবন্ধন হয়েছে। যখন সাজেদা ও তার স্বামী হাছান এনআইডির আওতায় আসে তখন আমি দায়িত্বে ছিলাম না।
জানতে চাইলে কাঞ্চননগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. দিদারুল আলম বলেন, তারা কীভাবে ভোটার হয়েছেন তা জানি না। তবে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমি বিষয়টি তদন্ত করার আহ্বান জানাচ্ছি।
ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা অরুণ উদয় ত্রিপুরা বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়ার ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। এ কাজে যে জড়িত থাকুক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
তদন্ত কমিটির প্রধান উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা মেজবাহউদ্দিন বলেন অভিযুক্ত বিষয়টি এখনো তদন্তাধীন রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। এ রকম একটি অভিযোগ পেয়ে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছি। তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।