দীপন বিশ্বাস, কক্সবাজার
কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একের পর এক ঘটছে খুনের ঘটনা। চলতি বছর এই খুনের ঘটনা যেন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই দু’উপজেলার ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ২০১৭ সাল থেকে চলতি বছরের এপ্রিল মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত ১৫৭টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয় থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
সর্বশেষ শনিবার (১৫ এপ্রিল) উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আরসা সন্ত্রাসীদের গুলিতে রওশন আলী নামে এক রোহিঙ্গা নেতা (সাব মাঝি) নিহত হয়েছেন। বিকেল ৪টার দিকে উখিয়ার বালুখালী ১৩ নম্বর ক্যাম্পের ই-২ ব্লকে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) ৮-এর সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. ফারুক আহমেদ। রওশন আলী ওই ক্যাম্পের জালাল আহমেদের ছেলে এবং ওই ব্লকের সাব মাঝি তথা উপনেতা।
সহকারী পুলিশ সুপার মো. ফারুক আহমেদ জানান, রওশন আলী বিকেলে তার ক্যাম্পে নিত্যদিনের কাজে বাজারে অবস্থান করছিলেন। এ সময় ৬-৭ জন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী তাকে লক্ষ্য করে দুই রাউন্ড গুলি করে। হামলাকারীরা পালিয়ে যাওয়ার সময় তার পেটে ছুরিকাঘাত করে। খবর পেয়ে রোহিঙ্গাদের সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করে কুতুপালং এমএসএফ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তিনি মারা যান।
উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী জানান, মরদেহ কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। অপরাধীদের ধরতে ক্যাম্পে কাজ করছে পুলিশ।
এর আগের দিন শুক্রবার বিকাল ৫ টার দিকে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এপিবিএন এর সাথে গোলাগুলির ঘটনায় এক সন্ত্রাসী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় অস্ত্রসহ গ্রেফতার করা হয়েছে আরসার ১ সন্ত্রাসীকে। আরসা সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন এক রোহিঙ্গা নারী। এ ঘটনায় এপিবিএন ৮ ব্যাটালিয়নের ২ সদস্যও আহত হয়েছেন। শুক্রবার রাতের দিকে এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন এপিবিএন এর ৮ ব্যাটালিয়নের সহকারী পুলিশ সুপার (গণমাধ্যম) মো. ফারুক আহমেদ।
তিনি জানিয়েছেন, শুক্রবার দুপুর দেড়টার দিকে উখিয়ার ১৮ নম্বর ক্যাম্পের ১৭ নম্বর ব্লকের মসজিদের পাশের পাহাড়ে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে আরসা সন্ত্রাসী মো. হাসিম (৩২) নিহত হয়। নিহত হাসিম ক্যাম্পের বশির আহমেদের ছেলে। হাসিমের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ড, মাদক ব্যবসা, অপহরণ, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধে একাধিক মামলা রয়েছে। আরসার সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত রোহিঙ্গা নারী নূর হাবা (৫০) ওই ক্যাম্পের নুরুল ইসলামের স্ত্রী। ঘটনাস্থল থেকে পালানোর সময় অস্ত্রসহ গ্রেফতার করা হয়েছে আরসা সন্ত্রাসী সাদেককে। সাদেক ওই ক্যাম্পের নুরুল হাকিমের ছেলে। এপিবিএন এর ৮ ব্যাটালিয়নের সহকারী পুলিশ সুপার (গণমাধ্যম) মো. ফারুক আহমেদ এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
কক্সবাজার জেলা পুলিশের তথ্য বলছে, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১৩০টি হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। এরসঙ্গে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত ২৫টি হত্যাকাণ্ড হয়েছে।