কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বারবার অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটছে। পাশাপাশি ঘটছে খুনের ঘটনাও। উখিয়ার কুতুপালংয়ে মাত্র ১ দিনের ব্যবধানে দুইজন রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতাকে (মাঝি) গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। বাইরের দিক থেকে এই শরণার্থী ক্যাম্প অধিকাংশ সময় শান্ত মনে হলেও ভেতরে-ভেতরে অস্থিরতা ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে।
উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রোববার ভয়াবহ এক আগুনে দুই হাজারের বেশি ঘরবাড়ি এবং দোকানপাট পুড়ে গেছে। রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি ছাড়াও দাতা সংস্থার কিছু অফিস এবং কয়েকশো দোকানপাট আগুনে পুড়ে গেছে।
গত বছরের জানুয়ারি মাসে উখিয়ার একটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন লেগে ছয়শ ঘরবাড়ি পুড়ে গিয়েছিল। এর দুই মাস পরে মার্চ মাসে এই বালুখালী ক্যাম্পেই আরেকটি অগ্নিকা-ে ১০ হাজারের মতো ঘরবাড়ি পুড়ে যায়। তখন ১৫ জন রোহিঙ্গা নিহত হয়েছিল।
এলাকায় আধিপত্য বিস্তার এবং ক্যাম্পের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কয়েকটি গোষ্ঠীর মধ্যে বিরোধ রয়েছে। আরাকান স্যালভেশন আর্মি- আরসা, আরাকান সলিডারিটি অর্গানাইজেশন- আরএসও, আল-ইয়াকিনসহ রোহিঙ্গাদের বিশটির বেশি গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে। গত এক মাসের মধ্যে তাদের মধ্যে সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন হতাহতও হয়েছে।
অতীতে অনেক সময় যেমন দুর্ঘটনাবশত আগুন লেগেছে, তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নাশকতার অভিযোগ উঠেছে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঘরগুলো কাঠ, বাঁশ, প্লাস্টিক, কাগজ দিয়ে তৈরি । এর সবগুলোই সহজ দাহ্য পদার্থ। আগুন নিয়ে তাদের সচেতনতারও অভাব রয়েছে। ফলে একবার কোন বাড়িতে আগুন লাগলে তা দ্রুত আশেপাশের বাড়িঘর এবং পুরো ক্যাম্পেই ছড়িয়ে পড়ে। পুরো রোহিঙ্গা ক্যাম্পেই আগুন লাগলে তা নেভানোর বা প্রতিরোধের কোন ব্যবস্থা নেই।
বাংলাদেশে প্রবেশের পর থেকে রোহিঙ্গাদের অনেকের বিরুদ্ধে নানা অপরাধের অভিযোগে মামলাও হয়েছে। এসব অভিযোগের মধ্যে রয়েছে হত্যা, মাদক, নারী পাচারসহ নানা ধরনের অপরাধ।
রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠী ক্যাম্পের ভেতরে তাদের একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে চায়। রোহিঙ্গাদের একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী ইয়াবা চোরাচালানের সাথে জড়িত। এখান থেকে টাকা আয় করে নিজেদের সংগঠন চালানোর জন্য খরচ করে তারা।
রোহিঙ্গাদের নিজস্ব দ্বন্দ্বের কারণে খুনোখুনিগুলো হচ্ছে এবং তার প্রভাব কক্সবাজারের আইশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উপরও পড়ছে।
শরণার্থী ক্যাম্পের পরিস্থিতি দিন দিন জটিল হয়ে উঠছে। ভবিষ্যতে ক্যাম্পের ভেতরে নিরাপদে কাজ করা মুশকিল হয়ে উঠতে পারে। সবচেয়ে উদ্বেগের জায়গা হলো উখিয়া এবং টেকনাফে এখন রোহিঙ্গারাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। বাংলাদেশীরা সেখানে এখন সংখ্যালঘু।
উদ্বেগ নিরসনে নিরাপত্তা বাহিনীর কঠোর নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ জোরদার করা জরুরি।
এ মুহূর্তের সংবাদ