রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সর্বাত্মক ব্যবস্থা নিতে হবে

মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর অত্যাচারে দলে দলে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করে-( ফাইল ছবি)

রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রোহিঙ্গা-বিষয়ক জাতীয় টাস্কফোর্সের এক বৈঠকে জানানো হয়, মিয়ানমারের রাখাইনে সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণে প্রায় ৫০ হাজার রোহিঙ্গা সীমান্তের কাছে আশ্রয় নিয়েছে। তারা যে কোনো সময় বাংলাদেশে ঢুকে পড়তে পারে।বৈঠকে অংশ নেওয়া এক কর্মকর্তা বলেন, ‘রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে সংঘর্ষের কারণে রোহিঙ্গারা সীমান্তের দিকে জড়ো হচ্ছে। কিছু কিছু করে তারা সীমান্ত অতিক্রম করছে।’
রোহিঙ্গা সংকটের শুরু হয় ২০১৭ সালে। ওই সময় মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানের মুখে রাখাইন রাজ্য থেকে লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। সে থেকে তারা বাংলাদেশেই অবস্থান করছে। বেশ কয়েকবার ফিরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েও শেষ পর্যন্ত ফিরিয়ে নেয়নি মিয়ানমারের সামরিক জান্তা। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী গত ১৮ মাসে নতুন করে দেড় লাখের মতো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। রোববারের বৈঠকে রোহিঙ্গাদের জন্য তহবিল অপ্রতুলতার বিষয়টিও আলোচনা হয়। এই কর্মকর্তা জানান, গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সাইডলাইনে রোহিঙ্গাদের নিয়ে এক অনুষ্ঠানে তহবিল সংগ্রহের বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল। এখন রোহিঙ্গাদের নিয়ে নতুন উদ্বেগ হলো। বিশ্বে নানা ইস্যু তৈরি হওয়ার কারণে রোহিঙ্গা ইস্যুটি মনোযোগ হারিয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে তহবিলে। এখন তহবিলে প্রতিশ্রুত ও প্রয়োজনীয় অর্থের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘চলতি বছর রোহিঙ্গা জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যানে প্রায় ৯৫ কোটি ডলারের জন্য আবেদন করা হয়। এ পর্যন্ত অর্ধেকের কিছু বেশি সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে। এখন জরুরিভাবে ১৭ কোটি ডলারের প্রয়োজন। এই তহবিল সংগ্রহের জন্য জাতিসংঘে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে।’
এদিকে দীর্ঘদিনের রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা জোরদারের অংশ হিসেবে মালয়েশিয়ার প্রভাবকে কাজে লাগাতে চায় বাংলাদেশ। বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর আঞ্চলিক জোট আসিয়ানের সভাপতি হিসেবে মালয়েশিয়ার এই ভূমিকার ব্যবহার করতে চায় ঢাকা। মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা বারনামাকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এমন প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, কেবল গত ১৮ মাসেই নতুন করে ১ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছেন। এর সঙ্গে আগে থেকেই পালিয়ে আসা ১২ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে আছেন। ফলে পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হচ্ছে। আরো ভয়াবহ হলো, যুক্তরাষ্ট্র তাদের (রোহিঙ্গাদের) তহবিল পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে। এটা আমাদের জন্য বিশাল সমস্যা।
২০২১ সাল থেকে মিয়ানমারে চলমান সশস্ত্র সংঘাত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে আরো জটিল করে তুলেছে। দীর্ঘস্থায়ী এই মানবিক সংকট কেবল বাংলাদেশ নয়; বরং আসিয়ানের আরো কয়েকটি দেশ- যেমন মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়াকেও প্রভাবিত করছে।
কাজেই নতুন করে আর একজন রোহিঙ্গাকে গ্রহণ করা বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব হবে না। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীকে সতর্ক অবস্থানে থাকতে হবে।