সুপ্রভাত ক্রীড়া ডেস্ক »
বিশ্বকাপে পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজের সেই অশ্লীল অঙ্গভঙ্গির রেশ এখনও কাটেনি। তুমুল সমালোচনার শিকার তিনি সারা বিশ্বে। এবার তার চেয়েও জঘন্যভাবে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করেছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। যে কারণে, সৌদি আরব জুড়ে তুমুল দাবি তুলেছে, পর্তুগিজ এই ফুটবলারকে দেশটি থেকে বের করে দেয়ার জন্য।
গত মঙ্গলবার আল হিলালের বিপক্ষে খেলতে গিয়েছিলো রোনালদোর ক্লাব আল নাসর। ম্যাচটিতে ২-০ গোলে হেরে যায় তার ক্লাব। একই সঙ্গে রোনালদো নিজেও ভালো খেলেননি। শুধু তাই নয়, উল্টা-পাল্টা ঘটনার জন্ম দিয়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। হেড করে গোল করতে না পেরে প্রতিপক্ষের ফুটবলারকে গলা ঝাপটে ধরার জন্য লাল কার্ড দেখতে বসেছিলেন। ম্যাচ শেষে সাইডলাইনে সাজিয়ে রাখা পানির বোতলে লাথি মেরেছেন। জাগোনিউজের।
এ যাত্রায় বেঁচে গেলেও মাঠ ছাড়ার সময় দর্শকদের কাছ থেকে ‘মেসি মেসি’ ধুয়ো ধ্বনি শোনার পর নিজের পুরুষাঙ্গ ধরে যে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করেছেন তিনি, সে ঘটনা গড়াতে পারে অনেক দুর। সৌদি আরবের অধিকাংশ মানুষই এখন মনে করছেন, এ ঘটনায় তাদের দেশ ছাড়তে হতে পারে রোনালদোকে।
যদিও রোনালদোর ক্লাব আল নাসর তার পাশেই দাঁড়িয়েছে। তারা জানিয়েছে কেন রোনাল্ডো ওই অঙ্গভঙ্গি করেছিলেন। তাদের দাবি, রোনালদোর কুঁচকিতে চোট রয়েছে। সে কারণেই ওই জায়গায় হাত দিয়েছিলেন তিনি। আল নাসের বলছে, ‘রোনালদোর চোট রয়েছে এটাই সত্যি। কোনও সমর্থক অন্য কিছু ভাবতে চাইলে ভাবতে পারে।’
ম্যাচের পর খেলোয়াড়রা যখন ড্রেসিংরুমে ফিরছিলেন, তখন গ্যালারিতে দর্শকরা রোনালদোর উদ্দেশে ‘মেসি, মেসি’ বলে স্লোগান তুলেছিল। ঠিক সে সময় গ্যালারির দিকে না তাকিয়েই রোনালদো অশোভন ভঙ্গিটি করেন।
সৌদি আরবের মতো রক্ষণশীল দেশে রোনালদোর এমন আচরণ নিয়ে এরমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বহু মানুষ দাবি করেছেন, রোনালদোকে দেশ থেকে বের করে দিতে। এ বছরের শুরুতে ম্যানইউ ছেড়ে সৌদির ক্লাব আল নাসরে যোগ দেন সিআর সেভেন।
সৌদি আরবের একজন আইনজীবী নউফ বিন আহমেদ টুইটারে লিখেছেন, তিনি সৌদি আরবের পাবলিক প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে রোনালদোর বিরুদ্ধে এ ব্যাপারে অভিযোগ দাখিল করবেন। নউফ মনে করেন, রোনালদো সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রকাশ্যে অশালীন আচরণ করেছেন, যেটি বড় অপরাধ।
নউফ লিখেছেন, ‘আমি রোনালদোর এ আচরণকে প্রকাশ্যে সাধারণ মানুষের সঙ্গে অশালীন আচরণের অপরাধ হিসেবে দেখছি। তিনি এ আচরণের মধ্য দিয়ে মানুষকে অসম্মান করেছেন। এটা এমন একটি অপরাধ, যাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একজন অপরাধীকে গ্রেপ্তার করতে পারে। কোনো বিদেশি নাগরিক যদি এমনটা করে থাকেন, তাহলে তাকে দেশে ফেরত পাঠানো যেতে পারে।’
আল-হিলালের বিপক্ষে ম্যাচের পর রোনালদোর বাজে আচরণ সৌদি টেলিভিশনে প্রচারিত সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রীড়াবিষয়ক অনুষ্ঠান ‘অ্যাকশন ইয়া দাওরি’তে দেখানো হয়েছে দীর্ঘ সময় ধরে। তবে আল-নাসর কর্তৃপক্ষ অ্যাকশন ইয়া দাওরির সাংবাদিককে রোনালদোর আচরণের একটি ব্যাখ্যাও দিয়েছে। ক্লাবটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘রোনালদোর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, সেটি সত্য নয়। তিনি যা করেছেন, সেটি কোনোভাবেই ইচ্ছাকৃত কিছু নয়।’
তবে আল-নাসরের এ ব্যাখ্যা মেনে নিচ্ছেন না সৌদি আরবের অন্যতম শীর্ষ ক্রীড়া সাংবাদিক ওসমান আবু বকর। তিনি বলছেন, ‘রোনালদো যে কা- করেছেন, সেটি জনসাধারণকে অসম্মান করার অপরাধ। এটা অনৈতিক এবং অভদ্র আচরণ। সৌদি ফুটবল ফেডারেশনের উচিত রোনালদোর চুক্তি বাতিলে ব্যবস্থা নেওয়া।’
মজার ব্যাপার, রোনালদো বিতর্ক ছড়ালেন আল-হিলাল ক্লাবের বিপক্ষে ম্যাচেই। গুঞ্জন আছে, এই আল-হিলালই আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক লিওনেল মেসিকে বিশাল অঙ্কের প্রস্তাব দিয়েছে।