সহজে টিকিট পাওয়া যাবে, সময়মতো ট্রেন ছাড়বে, স্টেশন আর ট্রেনগুলো থাকবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং নির্ধারিত সময়ে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে দেবে—বাংলাদেশ রেলওয়ের কাছ থেকে এ সেবাগুলোই তো চায় সাধারণ যাত্রীরা। কিন্তু স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরেও বাংলাদেশ রেলওয়ে এই চাহিদাটুকু পূরণ করতে পারেনি। যাত্রীদের বিড়ম্বনার শুরুটা হয় টিকিট সংগ্রহ থেকে। যেসব রুটে চাহিদা বেশি, সেসব রুটের টিকিটের একটি বড় অংশ থাকে কালোবাজারিদের কবজায়। ফলে অনেক যাত্রী টিকিট সংগ্রহ করতে পারে না, অনেকে অতিরিক্ত দাম দিয়ে টিকিট নিতে বাধ্য হয়। ট্রেনে ওঠার পর শুরু হয় নানা রকমের ভোগান্তি। রেলওয়ের নিয়ম হলো প্রতিটি আন্তঃনগর ট্রেনের যত আসন, তার ২৫ শতাংশ যাত্রীকে দেয়া হবে আসনবিহীন টিকিট। বেশির ভাগ ট্রেনে এ আসনবিহীন যাত্রী ছাড়াও টিকিটবিহীন থাকে অসংখ্য যাত্রী। যারা গাদাগাদি করে বগিতে বগিতে দাঁড়িয়ে থাকে। এই ‘স্ট্যান্ডিং’ যাত্রীদের কারণে অস্বস্তিকর হয়ে ওঠে সাধারণ যাত্রীদের ভ্রমণ। বেশির ভাগ ট্রেনের টয়লেট নোংরা এবং অস্বাস্থ্যকর থাকার অভিযোগ অনেক পুরনো। কোচ-বগিগুলোতে দেখা যায় অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্নতার ছাপ। যাত্রীদের ভোগান্তি আরো বাড়িয়ে দেয় ট্রেনের এলোমেলো সময়সূচি আর রক্ষণাবেক্ষণের ঘাটতির কারণে ঘটে যাওয়া ছোট-বড় দুর্ঘটনা। অথচ রেলওয়ে পরিচালনায় বর্তমানে বছরে ৪ হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ হচ্ছে সরকারের। পরিচালন ব্যয়ের একটি বড় অংশ যায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, অনবোর্ড পরিষেবা, ইঞ্জিন-কোচ মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ এবং যন্ত্রাংশ সংগ্রহের পেছনে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে পরিচালনায় বর্তমানে বছরে ৪ হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ হচ্ছে সরকারের। পরিচালন ব্যয়ের একটি বড় অংশ যায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, অনবোর্ড পরিষেবা, ইঞ্জিন-কোচ মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ এবং যন্ত্রাংশ সংগ্রহের পেছনে। ‘বিশেষ কার্যক্রম’ খাতের এ পরিচালন ব্যয়ের প্রধান উদ্দেশ্য যাত্রীসেবার মানোন্নয়ন। যদিও সংস্থাটির যাত্রীসেবার মান নিয়ে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ।
একটি দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও রেলের ‘নাজুক যাত্রীসেবায়’ তেমন কোনো উন্নতি হয়নি বলে মনে করেন অনেক নিয়মিত রেলযাত্রী। উল্টো ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রেলের আয় কমেছে। অবশ্য আয় কমে যাওয়ার পেছনে গত বছর জুলাইয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় ট্রেন চলাচল বিঘ্নিত হওয়াকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করছেন রেলের কর্মকর্তারা।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, কভিড মহামারীর পর প্রথমবার রেলের আয়ে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে। এ অর্থবছরে সংস্থাটি সব মিলিয়ে আয় করে ১ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকা, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তুলনায় ৪ দশমিক ১৫ শতাংশ কম। অন্যদিকে গত অর্থবছরে আয় কমলেও চলতি অর্থবছরে আবার তা বাড়তে শুরু করেছে বলে জানিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ৫৩২ কোটি টাকা আয় করেছে সংস্থাটি। তবে বাড়তে থাকা এ আয় রেলের লোকসান কমাতে যথেষ্ট নয়।
রেলকে আধুনিকায়ন করাটা যেমন জরুরি তেমনি জরুরি তার সেবার মান বৃদ্ধি করার পাশাপাশি দুর্নীতি আর অদক্ষতা দূর করার পদক্ষেপ নেওয়া।
এ মুহূর্তের সংবাদ



















































