সুপ্রভাত ডেস্ক »
সমাপ্ত অর্থবছরে দেশের ৬৪ জেলা মিলিয়ে আগের অর্থবছরের তুলনায় রেমিট্যান্স ১০.৬৬ শতাংশ বেড়ে প্রায় ২৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।
সদ্য শেষ হওয়া ২০২৪ অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসা জেলাগুলোর মধ্যে প্রবৃদ্ধিতে শীর্ষস্থান অর্জন করেছে চট্টগ্রাম জেলা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, রেমিট্যান্স আয়ে দ্বিতীয় স্থানে থাকা চট্টগ্রামের বাসিন্দারা ২০২৩ অর্থবছরের তুলনায় রেমিট্যান্স পাঠানো বাড়িয়েছে ৪৭ শতাংশ। ২০২৪ অর্থবছরে এই জেলা রেমিট্যান্স পেয়েছে ২.৩৭বিলিয়ন ডলার। এর আগের অর্থবছরে চট্টগ্রামের বাসিন্দারা ১.৬১ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিল। সে হিসাবে বিদায়ী অর্থবছরে রেমিট্যান্স বেশি এসেছে প্রায় ৭৫৭ মিলিয়ন ডলার।
এ অর্থবছরে দেশের ৬৪ জেলা মিলিয়ে আগের অর্থবছরের তুলনায় রেমিট্যান্স ১০.৬৬ শতাংশ বেড়ে প্রায় ২৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সাবেক অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, “জেলাভিত্তিক এসব পরিসংখ্যান নিয়ে আমাদের মাঝে প্রশ্ন আছে। বর্তমানে মার্কেট কাঠামো পরিবর্তন হয়েছে। ফলে, এসব ডেটা দেখে জেলার আসল চিত্র বোঝা যায় না।”
এদিকে, প্রথম স্থানে থাকা ঢাকা জেলায় ২০২৪ অর্থবছরে রেমিট্যান্স বেড়েছে ১৯ শতাংশ। এছাড়া, শীর্ষ ৬ জেলার বাকিগুলোতে রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি থাকলেও সেটি ১০ শতাংশের নিচে রয়েছে। বিশেষ করে, বিদেশে কর্মী পাঠানোর সংখ্যায় ২০২৩ অর্থবছরে শীর্ষস্থানে থাকা কুমিল্লা জেলায় রেমিট্যান্স বেড়েছে মাত্র ১ শতাংশের মতো।
জেলাভিত্তিক পরিসংখ্যানের মতোই বিভিন্ন দেশ থেকে আসা রেমিট্যান্সের তথ্যে কোনো কোনো দেশ অনেক ভালো পারফর্ম করেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আগের অর্থবছরের রেমিট্যান্স আয়ের শীর্ষ তালিকার তৃতীয় স্থান থেকে ২০২৪ অর্থবছরে প্রথম স্থানে উঠে এসেছে দুবাই এবং আবুধাবির মতো ৭টি আমিরাত নিয়ে গঠিত দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত।
দেশটি থেকে রেমিট্যান্স আয় ৫২ শতাংশ বেড়েছে। অবশ্য ২০২৩ অর্থবছরেও ৪৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছিল দেশটির রেমিটাররা। ২০২৩ অর্থবছরে দেশটিতে প্রায় ৭৭,০০০ কর্মী গিয়েছন। এছাড়া, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া থেকে আসা রেমিট্যান্স আয়েও ৪০ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
২০২৩ অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি, ৩.৯১ লাখ কর্মী যাওয়া সৌদি আরব থেকে সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে রেমিট্যান্স কমেছে প্রায় ১৯ শতাংশ।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য অনুসারে, সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে ১১.৯৬ লাখের রেকর্ড জনশক্তি রপ্তানি করেছে বাংলাদেশে— যা ২০২৩ অর্থবরের ১১.৩৭ লাখের রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে।
বেসরকারি একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বলেন, “আমাদের ধারণা পাচার হওয়া কিছু টাকা রেমিট্যান্স চ্যানেলে ব্যাংকে ঢুকছে। এর অন্যতম কারণ, ডলারের রেট বেড়ে যাওয়া।”
তিনি বলেন, “গত ২ বছর আগে টাকা পাচার করার ক্ষেত্রে ডলারের রেট পেয়েছিল ৮৭-৮৮ টাকা। টাকার অবমূল্যায়নের কারণে তারাই টাকা ফেরত নিয়ে আসলে সরকারি প্রণোদনাসহ ১২০-১২১ রেট পাচ্ছে। অর্থাৎ, পাচারের টাকা দেশে ফেরালে একদিকে রেমিট্যান্সের কারণে টাকাগুলো হোয়াইট (সাদা) হয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে ডলারের রেট বাড়ায় তারা লাভবানও হচ্ছে।”
অবশ্য পাচার হওয়া খুব বেশি টাকা রেমিট্যান্সের আকারে দেশে ঢুকছে না মন্তব্য করে আহসান এইচ মনসুর বলেন, “টাকা তখনই ফেরত আসে, যখন নতুন বিনিয়োগ করা হয়। ফলে কেউ যদি টাকা নিয়ে আসে, সে হয়তো কোথাও বিনিয়োগ করার জন্যই নিয়ে আসে। এখন এমন হওয়ার সম্ভাবনা কম।”
সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সিঙ্গাপুর থেকে রেমিট্যান্স কেন বাড়ছে— জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বড় রেমিট্যান্স হাউজগুলো এজেন্ট নিয়োগ করে থাকে। বিদেশের অনেক কর্মী সরাসরি দেশে রেমিট্যান্স না পাঠিয়ে এসব এজেন্টদের মাধ্যমে পাঠান। আর এজেন্টদের মাধ্যমে সংগ্রহ হওয়া ফরেন কারেন্সি বেশকিছু হাউজ দুবাই বা সিঙ্গাপুর থেকে একসঙ্গে রেমিট্যান্স হিসেবে পাঠায়। তাই, সংযুক্ত আরব আমিরাত বা সিঙ্গাপুর থেকে রেমিট্যান্সের গ্রোথ এতো বেশি দেখাচ্ছে।”
বেশ কয়েকটি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, যেসব রেমিট্যান্স হাউজ ছোট ছোট এজেন্টদের মাধ্যমে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করেন, তাদেরকে এগ্রিগেটর বলা হয়। এসব হাউজ ব্যাংকগুলোর কাছে রেমিট্যান্সের ডলার বিক্রির রেট নিয়ে দেনদরবার করে। যে ব্যাংক বেশি রেট অফার করে, এগ্রিগেটররা তাদের কাছে রেমিট্যান্সের ডলার বিক্রি করেন। এসব কারণে দুবাই মার্কেট থেকে সেসব রেমিট্যান্সের ডলার সংগ্রহে ব্যাংকগুলোকে বেশি খরচ করতে হয়।
সূত্র: টিবিএস