নিজস্ব প্রতিবেদক :
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ের পথে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম চৌধুরী। গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত মোট ৭৩৫ কেন্দ্রের মধ্যে ঘোষিত ৬২২ ভোট কেন্দ্রে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা রেজাউল ২ লাখ ৭৯ হাজার ৫১২ ভোট পেয়েছেন। অন্যদিকে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন পেয়েছেন ৪২ হাজার ৫৯৪ ভোট। রেজাউল করিম চৌধুরী বিশাল ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন। নগরের নতুন মেয়র হচ্ছেন রেজাউল করিম চৌধুরী।
নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়ামে গতকাল রাতে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত ভোটের ফল ঘোষণা করেন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান।
এর আগে সকালে রেজাউল তার বাড়ির পাশের কেন্দ্র বহদ্দারহাটের এখলাছুর রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেন। এ সময় তিনি বলেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের জয়-পরাজয় যাই হোক তা মেনে নেবো। এক প্রশ্নে উত্তরে তিনি বলেন, ‘ভোট সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি রয়েছে।’
বিএনপির এজেন্টদের গ্রেফতার-হয়রানির অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিএনপি এখন অভিযোগের পার্টি। সাংগঠনিক অবস্থার কারণে তাদের লোক নেই। সে কারণে এজেন্ট দিতে পারেনি।’
সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে এবার প্রার্থী ছিলেন সাত জন। ৪১টি ওয়ার্ডের কেন্দ্র সংখ্যা ছিল ৭৩৫টি এবং বুথ সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ৮৮৬। মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৬৭৩জন এবং নারী ভোটার ৯ লাখ ৯২ হাজার ৩৩জন।
প্রথমবারের মতো ইভিএমে অনুষ্ঠিত হওয়া চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ গতকাল বুধবার সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে চলে বিকাল ৪টা পর্যন্ত।
মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান প্রশাসক ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজনসহ অনেকে মেয়র পদের প্রার্থীর জন্য মনোনয়ন চাইলেও দল থেকে মনোনয়ন পেয়ে চমক দেখিয়েছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরীকে। রেজাউল করিম চৌধুরী এর আগে বোয়ালখালী-চান্দগাঁও আসনের উপ-নির্বাচনেও সংসদ প্রার্থী হওয়ার জন্য দলের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে দল থেকে মনোনয়ন দেয়া হয় দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দীনকে।
এদিকে রেজাউল করিম চৌধুরীর মনোনয়নের পর সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারীদের মধ্যে ক্ষোভ ছিল। আর সেই ক্ষোভে মাঠে সকলে রেজাউল করিম চৌধুরীর জন্য কাজ করে কিনা তা নিয়ে সংশয়ও ছিল। কিন্তু নির্বাচনের দিন যতোই ঘনিয়ে আসে রেজাউল করিমের পক্ষে প্রচারণা ততোই সরগরম হয়ে উঠে। সকল সংশয় উপেক্ষা করে শেষ পর্যন্ত বিজয়ের হাসি হাসলেন রেজাউল করিম চৌধুরী।
২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আগের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দীন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী এম মনজুর আলমকে হারিয়েছিলেন এক লাখের বেশি ভোটে।
আ জ ম নাছির পেয়েছিলেন ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৩৬১ ভোট। সাবেক মেয়র মনজুর পান ৩ লাখ ৪৮ হাজার ৩৭ ভোট। সেবার ভোট শুরুর তিন ঘণ্টার মধ্যে ভোট ডাকাতির অভিযোগ এনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন মনজুর।
উল্লেখ্য, গত ২৯ মার্চ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনা মহামারি শুরু হয়ে যাওয়ায় স্থগিত করা হয়েছিল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। ফলে তৎকালীন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের মেয়াদ আগস্টে শেষ হওয়ার পর সরকার নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজনকে ছয় মাসের জন্য প্রশাসকের দায়িত্ব দেন। আর এসময়ের মধ্যে সিটি কর্পোরেশন সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় নির্বাচন কমিশন ২৭ জানুয়ারি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে এবং গত ৮ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছিল প্রচার-প্রচারণা।