সুপ্রভাত ক্রীড়া ডেস্ক »
রীতিমত অবিশ্বাস্য। নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে এতটা বাজে টেস্ট পারফরম্যান্স দেখায়নি ভারত। তাও ঘরের মাঠে। নিউজিল্যান্ডের সামনে এতটা অসহায় আত্মসমর্পন, টেস্ট ক্রিকেটে ভারতীয়রা আর কবে দেখেছে? পরিসংখ্যান ঘেঁটে জানা গেলো, এবারই প্রথম। শুধু নিউজিল্যান্ডই নয়, ঘরের মাঠে টেস্ট ক্রিকেটে এর চেয়ে বাজে পরিস্থিতিতে আর কখনও পড়েনি ভারতীয় ক্রিকেট। নিউজিল্যান্ডের কাছে বেঙ্গালুরু এবং পুনেতে হারের পর প্রথমবার ঘরের মাঠে সিরিজ হেরেছে ভারত। মুম্বাইর ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে আশা ছিল অন্তত হোয়াইটওয়াশ এড়াতে পারবে রোহিত শর্মার দল। ভারতীয় স্পিনার রবিন্দ্র জাদেজা এবং রবিচন্দ্রন অশ্বিনের ঘূর্ণিতে সে স্বপ্নও দেখেছিলো তারা। দারুণ সুযোগও তৈরি হয়েছিলো। দ্বিতীয় ইনিংসে জিততে হলে করতে হবে মাত্র ১৪৭ রান। ঘরের মাঠে, চেনা উইকেটে এই রান তো কোনো উইকেট না হারিয়েই তুলে ফেলার কথা ভারতীয়দেও, কিন্তু না, তারা অলআউট হয়ে গেলো মাত্র ১২১ রানে। ২৫ রানে হেরে লজ্জাজনকভাবে হোয়াইটওয়াশ হলো রোহিত শর্মা-বিরাট কোহলিরা। ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ের মধ্য দিয়ে অনেকগুলো রেকর্ড সৃষ্টি করেছে নিউজিল্যান্ড। এই প্রথম ভারত ঘরের মাঠে তিন কিংবা তারও বেশি ম্যাচের টেস্টে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হলো। এমন ঘটনা এর আগে ভারতের মাটিতে ঘটেনি। তবে এর আগে দু’বার ভারত হোয়াইটওয়াশ হয়েছিলো। সেগুলোর মধ্যে একবার ২ ম্যাচের টেস্ট সিরিজে, দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ২০০০ সালে এবং ইংল্যান্ডের কাছে ১ ম্যাচের টেস্ট সিরিজে, ১৯৮০ সালে। এছাড়া ১৯৮৩ সালের পর এই প্রথম ভারত ঘরের মাঠে একই সিরিজে তিনটি টেস্ট হেরেছে। ১৯৫৮ সাল থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত মোট ৫বার একই সিরিজে তিনটি করে ম্যাচ হেরেছিলো। এই প্রথম নিউজিল্যান্ড তাদের ক্রিকেট ইতিহাসে একই টেস্ট সিরিজে তিনটি ম্যাচ জয়ের রেকর্ড গড়েছে। ভারত ঘরের মাঠে চতুর্থ ইনিংসে এত কম রান টার্গেট পেয়ে জিততে পারেনি এই প্রথম। ২০০ বার তার কম টার্গেট পেয়ে আগের ৩১টি ম্যাচ জয় করেছে তারা। এবার ১৪৭ রান লক্ষ্য পেয়েছে মাত্র ১২১ রান করে হেরেছে রোহিত শর্মার দল। এর আগে সর্বনিম্ন লক্ষ্য তাড়া করতে পারেনি ২২১ রান। ১৯৮৭ সালে বেঙ্গালুরুতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে (হোম ও অ্যাওয়ে) দ্বিতীয় সর্বনিম্ন লক্ষ্য তাড়া করতে ব্যর্থ হলো ভারত। এর আগে ১৯৯৭ সালে ব্রিজটাউনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সবচেয়ে কম ১২০ রানের লক্ষ্য পেয়েছিলো ভারত। জবাব দিতে নেমে মাত্র ৮১ রানে অলআউট হয়ে যায় ভারতীয়রা। অন্যদিকে নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেট ইতিহাসেও এটা দ্বিতীয় সর্বনিম্ন টার্গেট ছুঁড়ে দেয়া, যেটাতে তারা জয় পেয়েছে। এর আগে ১৯৭৮ সালে ওয়েলিংটনে ইংল্যান্ডকে ১৩৭ রানের লক্ষ্য দিয়ে ৭২ রানে জিতেছিলো কিউইরা। ঘরের মাঠে ২০২৪ সালে মোট চারটি টেস্ট হেরেছে ভারত। এক বছরে ঘরের মাঠে এ নিয়ে দ্বিতীয়বার এতগুলো টেস্ট হেরেছে তারা। ১৯৬৯ সালেও একবার ঘরের মাঠে এক বছরে চারটি টেস্ট হেরেছিলো তারা। ঘরের মাঠে অধিনায়ক হিসেবে এ নিয়ে ৫টি টেস্ট হেরেছেন রোহিত শর্মা। তবে তিনি রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। তার আগে ঘরের মাঠে ৯টি টেস্ট হেরেছিলেন মনসুর আলি খান পতৌদি। এর মধ্যে ৪টি টেস্ট রয়েছে সেই ১৯৬৯ সালে। মুম্বাইর ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে এবার নিয়ে ২৫টি উইকেট পেয়েছেন অ্যাজাজ প্যাটেল। এই ভেন্যুতে তিনি খেলেছেন মাত্র দুটি টেস্ট। ভারতের মাটিতে তাদেরই বিপক্ষে নির্দিষ্ট কোনো এক ভেন্যুতে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী হলেন তিনি। এর আগে সর্বোচ্চ ২২ উইকেট নিয়েছিলেন ইয়ান বোথাম, তাও এই ওয়াংখেড়েতেই। ১৪৭ রানের লক্ষ্য টপকে রোববার যদি ভারত জিততে পারতো, তাহলে মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের ইতিহাসে এটি হতো রান তাড়ায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জয়। জেতা তো হলোই না। শেষ পর্যন্ত হেরে হোয়াইটওয়াশের লজ্জায় ডুবলো ভারত। ভারত ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় শুরুতেই। দলীয় ২৯ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে স্বাগতিকরা। এরপর ধ্বংস্তূপে দাঁড়িয়ে রিশাভ পান্ত (৫৭ বলে ৬৪) ফিফটি হাঁকালেও শেষ রক্ষা করতে পারেননি ভারতের। উইকেটরক্ষক ব্যাটারের লড়াইয়ের পরও শেষমেশ রোহিত শর্মার দল গুটিয়ে যায় ১২১ রানে। ম্যাচের চতুর্থ ইনিংসের তৃতীয় ওভারে প্রথম উইকেট হারায় ভারত। দলীয় ১৩ রানে আউট হন ওপেনার রোহিত শর্মা (১১ বলে ১১)। এরপর ১৬ রান যোগ করতেই আরও ৪ টপঅর্ডারকে হারায় ভারত। রোহিতের পেছনে আসা-যাওয়ার মিছিলে যোগ দেন শুভমান গিল (৪ বলে ১), বিরাট কোহলি (৭ বলে ১) যসস্বি জয়সওয়াল (১৬ বলে ৫) ও সরফরাজ খান (২ বলে ১)। ষষ্ঠ উইকেটে রবীন্দ্র জাদেজাকে নিয়ে ৪২ রানের জুটি গড়েন পান্ত। এই দুইজনের ব্যাটে কিছুটা আশা দেখছিল ভারতীয় সমর্থকরা।
২২ বলে ৬ রান করে জাদেজা আউট হয়ে গেলে ফের চাপে পড়ে ভারত। এরপর ওয়াশিংটন সুন্দরকে নিয়ে লড়াই করেন পান্ত। সপ্তম উইকেটের এই জুটিতে ৩৫ রান তোলেন তারা। অ্যাজাজ প্যাটেলের বলে উইকেটরক্ষক টম ব্লান্ডেলের হাতে পান্ত ক্যাচ হলে জুটি ভাঙে। শেষদিকে ৪ বলে ৩ উইকেট হারায় ভারত। ২৯তম ওভারের চতুর্থ ও পঞ্চম বলে রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও আকাশ দীপকে আউট করেন গ্লেন ফিলিপস। পরের ওভারের প্রথম বলে প্যাটেলে বলে ওয়াশিংটন সুন্দর আউট হলে শেষ হয় ভারতের ইনিংস। ভারতকে মূলত ধসিয়ে দেন নিউজিল্যান্ড স্পিনার অ্যাজাজ প্যাটেল। একাই ৬ উইকেট নেন এই বাঁহাতি। এছাড়া ৩ উইকেট শিকার করেন ফিলিপস ও ১ উইকেট নেন ম্যাট হেনরি।