রাকিবুল হাসান রাকিব :
রিতুর একটা পোষা কুকুর আছে। বয়স প্রায় দু-তিন বছর হবে। কুকুরটির নাম মিটু। মিটু বলে ডাক দিলে দৌড়ে এসে লেজ নাড়া দিয়ে সাড়া দেয়। রিতু কুকুরটার খুব যতœ নেয়। আদরে লালন-পালন করে। প্রতিদিন তিনবেলা খাবার দেয়।
রিতু যেদিকে যায়, মিটুও সেদিকে চলে যেতো। এমন একটা সম্পর্ক হলো তাদের মধ্যে। রিতু স্কুলে গেলে সে স্কুল পর্যন্ত গিয়ে আবার চলে আসত। তার গলায় একটা কালো বেল্ট ছিল। কুকুরটিকে পরিষ্কার পানি দিয়ে গোসল করিয়ে দিতো রিতু। কুকুরটিও ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে পছন্দ করতো।
একদিন রিতুর আম্মু বাড়ি ছিলেন না। তা ছাড়া বাড়িতে অন্য কেউই ছিল না। রিতুর খুব খিদে পেয়েছিল। সে বাগানে গিয়ে মন খারাপ করে বসে আছে। মিটু তাকে খুঁজতে-খুঁজতে বাগানের দিকে চলে এলো। সেখানে রিতুকে দেখে লেজ নেড়ে ‘আও’ ‘আও’ করলো কিছুক্ষণ। রিতু কোনো সাড়া দিল না।
তারপর মিটু রিতুর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো। হয়তো এতটুকু বুঝেছে পারছে, রিতুর আজ মন খারাপ। মিটু চলে যায়। কোথা থেকে একটা রুটির প্যাকেট নিয়ে আসে। রিতুর সামনে রাখে। প্যাকেটটা রাখতে না রাখতে চলে এলো দোকানদার। ঠেঙা নিয়ে প্রহার করার জন্য আসতে দেখে কুকুরটি ভয় পেয়ে দৌড়ে চলে গিয়ে দূর থেকে ঘেউ-ঘেউ করতে লাগলো। দোকানদার রিতুকে রুটি চুরির কথা বললে। দোকানদারকে রিতু কি যেন বুঝিয়ে বলে। দোকানদার বিস্মিত হয়। রিতু কুকুরটিকে আদর করে ডাকলে সে কাছে আসে। লেজ নেড়ে সাড়া দেয়। এরপর একটু আদর করে, তার গুণের সুনাম করলে পরম শ্রদ্ধা জানায়। তারপর দোকানদারের দিকে তাকিয়ে ‘আও’ ‘আও’ করতে থাকে। দোকানদার রিতুর দিকে তাকিয়ে তার কথা বুঝতে চাইল। রিতু বুঝিয়ে দিলে দোকানদার মিটুর প্রশংসা করে।
এরপর রিতু চোখের কোণে জমা জল মুছলো যেন মিটু টের না পায়। তারপর রুটির প্যাকেট নিয়ে অর্ধেক রেখে বাকিটুকু মিটুকে দিয়ে দেয়। রিতু এক গেলাস জল নিয়ে রুটি খেয়ে মিটুর সাথে খেলা করতে থাকে। রিতু হাসিমুখে কথা বলে আর মিটু লাফিয়ে লাফিয়ে খেলে।
রিতুর আম্মু এলেন। রিতু সব কথা খুলে বলে তাকে। তারপর থেকে যতœআত্তি আরও বেড়ে গেল মিটুর। রিতুকে তার মা বলেন, দেখো রিতু, কুকুরের মধ্যেও মায়া-মমতা আছে। বিবেক আছে। ওরা কখনো মানুষের ক্ষতি করে না।