রাস্তা ছাড়াই সোয়া ৪ কোটি টাকার ব্রিজ নির্মাণ!

বান্দরবান

নিজস্ব প্রতিবেদক, বান্দরবান »
রুমা উপজেলার দুর্গম পলিকা পাড়ায় পাহাড়ের পাদদেশে রাস্তা ছাড়া সোয়া ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ করেছে বান্দরবান স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।
রুমা সদর থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে পলিকা পাড়ায় গালেংঙ্গা ইউনিয়নে যাওয়ার জন্য ব্রিজটি নির্মাণ করা হলেও ব্রিজের অপর পাশে রয়েছে বিশাল পাহাড়। নেই চলাচলের জন্য কোন রাস্তা, তাই ব্রিজটি এলাকাবাসীর কোন কাজে আসছে না। পাহাড়ের পাদদেশে নির্মিত ব্রিজটি স্থানীয়দের কাছে এখন বিনোদনের জায়গা হিসেবে পরিচিত।
জানা গেছে, ২০১৭ সালে পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৪ কোটি ১৪ লাখ ১৫ হাজার ২শ ৪১ টাকা ব্যয়ে ৬৮ মিটার দীর্ঘ গার্ডার ব্রিজটির নির্মাণ কার্যাদেশ পায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ইউনুচ অ্যান্ড ব্রাদার্স। ২০১৯ সালে কাজটি সমাপ্ত করার কথা থাকলেও চলতি বছরের শুরুতে কাজটি শেষ করে এলজিইডিকে বুঝিয়ে দেয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। তবে ব্রিজটি নির্মিত হলেও রাস্তা না থাকায় এলাকাবাসীর কোন কাজেই আসছে না এ ব্রিজ।
স্থানীয় বাসিন্দা নুমং জানায়, সরকার এত টাকা খরচ করে ব্রিজ নির্মাণ করেছে কিন্তু ব্রিজ পার হয়ে যাবে কিভাবে সেখানে কোন রাস্তা নেই। আর অপর পাশে বিশাল পাহাড়। এত বড় পাহাড় কেটে রাস্তা তৈরি করাটাও অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। রাস্তার কথা না ভেবে এত টাকা খরচ করে ব্রিজ নির্মাণের কোন যৌক্তিকতা নেই।
একই এলাকার বাসিন্দা হ্লাচিং বলেন, গালেংঙ্গা ইউনিয়নে যাওয়ার জন্য এত টাকা খরচ করে ব্রিজ নির্মাণ করেছে কিন্তু ব্রিজের পরে কোন রাস্তাই নেই তারা ব্রিজ নির্মাণের পাশাপাশি রাস্তার কাজ করত তাহলে মানুষ ব্রিজ দিয়ে চলাচল করতে পারত। এছাড়াও দুর্গম এলাকা এখানে ঠিক মত কেউ দেখাশোনাও করতে পারেনি ব্রিজের নির্মাণ কাজ ঠিক মত করেছে কিনা শেষে দেখা যাবে রাস্তা হতে হতে ব্রিজটিই ভেঙ্গে পড়বে। আর ব্রিজের অন্য প্রান্তে বিশাল পাহাড় এ পাহাড় কেটে রাস্তা করলে সেটা পরিবেশেরও ক্ষতি করবে।
তবে স্থানীয়দের কেউ কেউ অভিযোগ করছেন, সরকারী অর্থ আত্মসাতের জন্যই নির্জন এলাকার সুউচ্চ পাহাড়ের পাদদেশে করা হয়েছে এ গার্ডার ব্রিজটি।
তবে এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের রুমা উপজেলা প্রকৌশলী তোফায়েল আহাম্মেদ বলেন, গালেংঙ্গা ইউনিয়নে যাওয়ার জন্য পলিকা পাড়ার উপর গার্ডার ব্রিজটির কাজ চলতি বছর সম্পন্ন করে ঠিকাদার বুঝিয়ে দিয়েছে। ব্রিজ শেষ হওয়ার পর রাস্তা নির্মাণের কাজ ধরব। পাহাড়ি এলাকায় ব্রিজ কালভার্ট এগুলো আগে নির্মাণ করে তারপরই রাস্তা তৈরি করতে হয়। ব্রিজ নির্মাণ না করলে ওই পাড়ের রাস্তা তৈরি করার জিনিসপত্র নিবো কিভাবে? এছাড়া রাস্তা নির্মাণের জন্য পাহাড় কাটার প্রয়োজন হবে না। কারণ ব্রিজটি ৯০ ডিগ্রি এ্যাঙ্গেলে বাঁকা করে তৈরি করেছি। পাহাড়ের কোল ঘেঁষে নদীর পাড় দিয়ে রাস্তা নিয়ে যাবো। ব্রিজের অপর পাশে রাস্তা নির্মাণ করা হবে এটি আমাদের প্রকল্পে অনুমোদন রয়েছে। রাস্তা নির্মাণের জন্য পাহাড় কাটতে হবে না।
তবে গালেংঙ্গ্যা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শৈউসাই মার্মা জানান, ব্রিজ নির্মাণের বিষয়ে কিছু জানি না। শুধু পাড়ায় যাওয়ার সময় দেখেছি পাহাড়ের পাদদেশে ব্রিজ নির্মিত হয়েছে। পাহাড় কাটা ছাড়া রাস্তা কিভাবে নির্মাণ করবে সেটাও জানি না। তবে গালেংঙ্গ্যা যাওয়ার জন্য আমাদের একটি রাস্তা রয়েছে যে ব্রিজটি করা হয়েছে সেটি না করে যদি আগের রাস্তাটা কাজ করে দিত তাহলে এলাকার জন্য অনেক ভাল হত।
বান্দরবান স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এর নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুস শাদাত মো. জিল্লুর রহমান জানান, ভূপ্রকৃতিগতভাবে বান্দরবান এমন একটি জায়গা এখানে উন্নয়ন কাজ করতে হলে পাহাড় কাটতে হবে। পাহাড় কাটা ছাড়া এখানে উন্নয়ন কাজ করা সম্ভব নয়। রুমার রাস্তাটি এমনভাবে ডিজাইন করেছি পাহাড় কাটতে হবে না। পাহাড়ের পাশ দিয়ে সামান্য কেটে রাস্তাটা নয়ে যাব এজন্য ব্রিজটা বাঁকা করে তৈরি করেছি যাতে পাহাড় বেশি কাটতে না হয়।