সুপ্রভাত ডেস্ক :
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গোড়াতেই জানিয়েছিলেন, রাশিয়ার ভ্যাকসিন তাঁরা ছুঁয়েও দেখবেন না। আজ একটি মার্কিন সংবাদ সংস্থা দাবি করল, রুশ প্রশাসন তাদের কাছে জানিয়েছে, করোনা-আক্রান্ত আমেরিকার দিকে ‘যুগান্তকারী সহযোগিতার’ হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল তারা। কিন্তু বিশ্বাসযোগ্যতার প্রশ্ন তুলে ওয়াশিংটন সেই সাহায্য ফিরিয়ে দিয়েছে। শুধু আমেরিকা নয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-ও উল্লেখযোগ্য সম্ভাব্য প্রতিষেধকের তালিকায় রাশিয়ার ‘স্পুটনিক ভি’-কে রাখেনি। তারা জানাচ্ছে, রুশ ভ্যাকসিনটি সম্পর্কে যথেষ্ট তথ্য তাদের হাতে নেই।
রুশ প্রশাসনের এক কর্তা আজ ওই মার্কিন সংবাদ সংস্থাকে বলেন, ‘‘আমেরিকার দিক থেকে রাশিয়ার প্রতি সব সময়ই একটা অবিশ্বাস কাজ করে। এই অবিশ্বাস থেকেই আমাদের তৈরি ভ্যাকসিন, পরীক্ষা পদ্ধতি, চিকিৎসাকিছুই গ্রহণ করবে না আমেরিকা।’’ হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি কেলি ম্যাকেনানি জানান, রাশিয়ার নতুন ভ্যাকসিন নিয়ে প্রেসিডেন্টকে ব্রিফ করা হয়েছে। কিন্তু আমেরিকার যে সম্ভাব্য ভ্যাকসিন, তা আরও উচ্চমানের এবং সেটি তৈরিতে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা জোর গতিতে চলছে। তারা সে দিকেই তাকিয়ে। মার্কিন প্রশাসনের কয়েক জন কর্তা অবশ্য বেশ আক্রমণাত্মক সুরে বলেন, ‘‘আমেরিকার কাছে রুশ ভ্যাকসিন হল অর্ধেক রান্না করা খাবার। আমেরিকার ও নিয়ে কোনও আগ্রহ নেই। বিষয়টাকে গুরুত্বই দিচ্ছি না আমরা। মানুষ কেন, বাঁদরের উপরেও ওই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করার প্রশ্ন নেই।’’
গোটা বিশ্বে করোনা সংক্রমণ ২ কোটি ছাড়িয়েছে। মৃতের সংখ্যা ৭ লক্ষ ৫৮ হাজারেরও বেশি। তালিকার শীর্ষে আমেরিকা। ৫৪ লাখের উপরে আক্রান্ত। ১ লক্ষ ৭০ হাজারের বেশি মৃত। শুধু ক্যালিফর্নিয়াতেই আক্রান্তের সংখ্যা আজ ৬ লক্ষ ছাড়াল। দেশগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিলে সংক্রমণ-তালিকায় পাঁচে থাকবে ক্যালিফর্নিয়া। এ অবস্থায় প্রতিষেধকের সন্ধানে দ্রুত গতিতে পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে বহু দেশ। গত মঙ্গলবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দাবি করেন, তাঁদের গবেষণা সফল। ভ্যাকসিন ‘স্পুটনিক ভি’ তৈরি। তাঁর নিজের মেয়ের শরীরে প্রয়োগ করা হয়েছে সেটি। কিন্তু এর পরেই জানা যায়, ভ্যাকসিনটির ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের তৃতীয় ধাপ শুরু হয়নি। তার আগেই ভ্যাকসিন প্রয়োগে অনুমতি দিয়ে দিচ্ছে রাশিয়া।
বিতর্ক শুরু হতে দেরি হয়নি। ব্রিটেন থেকে জার্মানি, আমেরিকা, বিশ্বের প্রায় সব প্রান্তের বিজ্ঞানীরা রুশ ভ্যাকসিনের ছাড়পত্র পাওয়াকে ‘অনৈতিক’ জানিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। গতকাল খোদ রুশ স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এক কর্তা ভ্লাদিমির বন্দারেভ ভ্যাকসিনটি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। তিনি জানান, ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সিদের মধ্যে শুধু টিকার পরীক্ষা হয়েছে। শিশু কিংবা বৃদ্ধদের ওই ভ্যাকসিন দেওয়া যাবে না। আজ আবার শোনা গিয়েছে, নিয়ম ভেঙে ভ্যাকসিন তৈরির প্রতিবাদে রুশ স্বাস্থ্য মন্ত্রক থেকে পদত্যাগ করেছেন সে দেশের এক প্রথম সারির চিকিৎসক, অলেকজান্ডার চুচালিন। এ-ও শোনা যাচ্ছে, ভ্যাকসিনটি ব্যবহার নিরাপদ নয় জানিয়ে বারবার সতর্ক করেছিলেন ওই পালমোনোলজিস্ট। পদত্যাগের পরে চুচালিন বলেন, ‘‘চিকিৎসা বিজ্ঞানের নৈতিক শর্ত ভাঙা হয়েছে।’’