জাতীয় ক্রিকেট লীগ
সুপ্রভাত ক্রীড়া ডেস্ক :
শাহাদাত হোসেনের দারুণ সেঞ্চুরির পর বল হাতে আলো ছড়ালেন চট্টগ্রামের পেসাররা। রাজশাহীকে দেড়শ পেরুতেই থামিয়ে দিয়ে দলকে এনে দিলেন লিড। পরে অবশ্য দুর্দান্ত বোলিংয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে স্বাগতিকরাও। প্রথম ইনিংসের ব্যর্থতা ঝেড়ে ফেলতে পারেননি মুমিনুল হক। দ্বিতীয় ইনিংসে তার দল চট্টগ্রামকে অল্পতে থামিয়ে দেওয়ার আশা জাগিয়েছে রাজশাহী। খবর বিডিনিউজের।
রাজশাহীর শহীদ কামরুজ্জামান স্টেডিয়ামে এনসিএলের দ্বিতীয় স্তরের ম্যাচে দ্বিতীয় দিন চট্টগ্রামের প্রথম ইনিংস থামে ২৮৭ রানে। পরে তারা রাজশাহীকে গুটিয়ে দেয় ১৫২ রানে।
দিন শেষে সেই আনন্দ সঙ্গী হয়নি চট্টগ্রামের। প্রথম ইনিংসে ১৩৫ রানের লিড পেলেও তারা দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৩ রান তুলতেই হারিয়েছে ৫ উইকেট।
রাজশাহীতে গতকাল মঙ্গলবার দাপট দেখিয়েছেন দুই দলের পেসাররা। এদিন পড়া ১৮ উইকেটের ১৪টিই নিয়েছেন গতিময় বোলাররা।
চট্টগ্রামকে প্রথম ইনিংসে বড় সংগ্রহ এনে দেওয়ার মূল কারিগর শাহাদাত দীপু খেলেন ১০৮ রানের ইনিংস। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নেমেই তিন অঙ্কের দেখা পেলেন তরুণ এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান।
পরে রাজশাহীর ইনিংস গুঁড়িয়ে দিতে নোমান চৌধুরি ৪৭ রান দিয়ে নেন ৪ উইকেট আর মেহেদি হাসান রানা ২২ রান দিয়ে নেন ৩ উইকেট। ৭ উইকেটে ২৫৬ রান নিয়ে দিন শুরু করা চট্টগ্রাম দিনের ষষ্ঠ ওভারে হারিয়ে বসে মোহাম্মদ ইরফানের উইকেট। তাইজুল ইসলামের বলে এলবিডব্লিউ হন তিনি। রেজা দ্রুত ফিরিয়ে দেন হাসান মুরাদকে। এতে আগের দিনের অপরাজিত ব্যাটসম্যান শাহাদাতের সেঞ্চুরি হওয়ার পথ কঠিন হয়ে পড়ে। ওই ওভারের শেষ তিন বল কাটিয়ে দিয়ে শাহাদাতের সেঞ্চুরির আশা বাঁচিয়ে রাখেন নোমান। পরের ওভারের প্রথম বলেই শফিকুল ইসলামকে চার মেরে ২৫১ বলে শাহাদাত পৌঁছে যান তিন অঙ্কে। পরের বলেই ওড়ান ছক্কায়। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে রেজার বলে আউট হওয়ার আগে তিনি করেন ১১ চার ও ২ ছক্কায় ২৫৬ বলে ১০৮ রান।
রেজা ৪৪ রানে নেন ৪ উইকেট। দুটি করে উইকেট নেন আসাদুজ্জামান পায়েল ও তাইজুল ইসলাম।
ব্যাটিংয়ে নেমে রাজশাহী উইকেট হারাতে থাকে নিয়মিত বিরতিতে। দুই পেসার নোমান ও মেহেদি হাসান রানার বোলিংয়ের সামনে টিকতে পারেননি কেউ। ৩০ পার করতে পারেননি একজন। সর্বোচ্চ ২৭ রান আসে রেজার ব্যাট থেকে।
চতুর্থ ওভারে তানজিদ হাসান তামিমকে কট বিহাইন্ড করার পর নোমান পরের ওভারে এসে ফিরিয়ে দেন জুনায়েদ সিদ্দিকিকে। মাঝে জহুরুল ইসলামকে টিকতে দেননি মোহাম্মদ ইরফান। তৌহিদ হৃদয়ও ব্যর্থ ব্যাট হাতে। ৪৭ রানে ৪ উইকেট হারানো দলের হাল ধরার চেষ্টা করেন সাব্বির রহমান ও ফরহাদ হোসেন। কিন্তু মুরাদের বলে স্টাম্পিং হয়ে ফরহাদ ফেরেন ২৪ রান করে।
প্রিতম কুনেরকে (২১) ফিরিয়ে সাব্বিরের সঙ্গে তার ৪০ রানের জুটি ভাঙেন মুরাদ। পরে ৪টি চারে ২৪ করে সাব্বির কট বিহাইন্ড হন মেহেদি রানার বলে।
রেজা এক প্রান্তে লড়াই চালান। মুরাদের পরপর দুই ওভারে মারেন দুই ছক্কা। নোমান বোলিংয়ে এসে এক ওভারে তুলে নেন তাইজুল ও শফিকুলের উইকেট। পরে এই পেসারকে ওভারে তিন চার মারেন রেজা। পায়েলকে ফিরিয়ে রাজশাহীর ইনিংসের ইতি টেনে দেন মেহেদি রানা। রেজা আরেক প্রান্তে থেকে যান ৩ চার ও ২ ছক্কায় ৩১ বলে ২৭ রান করে। প্রথম ইনিংসে অলরাউন্ড নৈপুণ্যের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও বল হাতে সফল রেজা। এরই মধ্যে তুলে নিয়েছেন ৩ উইকেট। চট্টগ্রামের ব্যাটিং লাইন-আপে ধস নামানোর মূল কাজটিই করেছেন তিনি।
১৩৫ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামা চট্টগ্রামের শুরু হয় দুঃস্বপ্নের মতো। দলের শূন্য রানেই ফেরেন পিনাক ঘোষ। আরেক ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমনকেও রানের খাতা খুলতে দেননি রেজা।
মুমিনুল হককেও টিকতে দেননি রেজা। প্রথম ইনিংসে ৬ রান করা চট্টগ্রাম অধিনায়ক কট বিহাইন্ড হন ১৩ রান করে। বিপদে পড়া দলের হাল এবার আর ধরতে পারেননি ইয়াসির আলি চৌধুরি। তিনিও শিকার রেজার।
প্রথম ইনিংসে ফিফটি করা মেহেদি রানাকে শূন্য রানে ফিরিয়ে দেন তাইজুল। এক প্রান্ত আগলে রেখে লড়াই চালিয়ে যাওয়া মাহমুদুল হাসান অপরাজিত আছেন ২৬ রানে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
চট্টগ্রাম ১ম ইনিংস: (আগের দিন ২৫৬/৭) ১০১.২ ওভারে ২৮৭ (শাহাদাত দীপু ১০৮, মোহাম্মদ ইরফান ৮, হাসান মুরাদ ১, নোমান ০*; ফরহাদ ২৭.২-৯-৪৪-৪, শফিকুল ২০-৩-৬৪-১, পায়েল ২১-২-৬১-২, তাইজুল ২৪-৭-৬৩-২, হৃদয় ৯-১-৪৩-১)।
রাজশাহী ১ম ইনিংস: ৪৪.৩ ওভারে ১৫২ (তানজিদ ৫, জহুরুল ১২, জুনায়েদ ৬, ফরহাদ ২৪, হৃদয় ৯, সাব্বির ২৪, প্রিতম ২১, রেজা ২৭*, তাইজুল ২, শফিকুল ০, পায়েল ৪; মেহেদি রানা ১১.৩-১-২২-৩, নোমান ১২-৪-৪৭-৪, ইরফান ১১-২-৩৪-১, মুরাদ ১০-২-৩৫-২)।
চট্টগ্রাম ২য় ইনিংস: ১৯.৩ ওভারে ৪৩/৫ (পারভেজ ০, পিনাক ০, মাহমুদুল ২৬*, মুমিনুল ১৩, ইয়াসির ৪, মেহেদি রানা ০; রেজা ১০-২-১৮-১, শফিকুল ৫-২-১৪-১, তাইজুল ৪.৩-১-১১-১)।