সুপ্রভাত ডেস্ক »
চীনের সহায়তায় তিস্তা নদী নিয়ে যে প্রকল্পের কথা কয়েক বছর ধরে আলোচনায় আছে, সেটির কাজ এগিয়ে নিতে বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে প্রস্তাব পাওয়ার অপেক্ষায় আছে চীন।
রোববার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে তার কার্যালয়ে বৈঠকের পর ঢাকায় চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন সাংবাদিকদের বলেন, ‘তিস্তা নদী প্রকল্পের বিষয়ে চীন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ‘বাংলাদেশের দিক থেকে প্রকল্প প্রস্তাব পেলে চীন তা বিবেচনা করবে এবং সহযোগিতা দেবে। এ বিষয়ে আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পৃক্ততা অব্যাহত রাখব।’
বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদের বরাতে বছর দুয়েক আগে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৯ সালের জুলাই মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেইজিং সফরের সময় রোহিঙ্গাদের বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি আরও কয়েকটি বিষয়ে চীনের সহায়তা চেয়েছিলেন। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ডেল্টা প্ল্যান ২১০০, ক্লাইমেট অ্যাডাপটেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা এবং তিস্তা রিভার কমপ্রিহেনসিভ ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রেস্টোরেশন প্রজেক্ট। খবর বিডিনিউজ।
তিস্তা প্রকল্পে নদীটির উপকূল ব্যবস্থাপনায় অবকাঠামো নির্মাণ ছাড়াও বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং গ্রীষ্মকালে পানি সংকট দূর করতে বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে বলে সেই প্রতিবেদনে জানিয়েছিল বিবিসি।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ২০২২ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি রংপুরে এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ‘তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী খুব সিরিয়াস। আন্তর্জাতিক একটা ছোট ঝামেলা আছে, এ কারণে বিলম্ব হচ্ছে। তবে এটা হলে নদীর দুই পাড়ে বিশাল অর্থনৈতিক জোন গড়ে তোলা সম্ভব হবে।’
‘এ জন্য আমাদের একটু অপেক্ষা করতে হবে। সব কিছু ব্যালেন্স করেই এটা করা হবে। কারণ প্রধানমন্ত্রী নিজেই চাইছেন তিস্তা মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন হোক।’
প্রকল্পের কাজ আটকে থাকার মধ্যে গত ডিসেম্বরে এক অনুষ্ঠানে চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেছিলেন, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন তারা। নির্বাচনের পর তা শুরুর আশা প্রকাশ করেন তিনি।
চীন রাষ্ট্রদূতের ওই বক্তব্য এবং এ প্রকল্প নিয়ে ভারতের আপত্তির প্রসঙ্গ তুলে এক প্রশ্নে ওই সময় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরীন বলেছিলেন, ‘এ রকম অনুমাননির্ভর প্রশ্নের উত্তর দেওয়াটা সহজ নয়। এ রকম কোনো প্রস্তাব যদি থাকে, তখন ভূরাজনৈতিক বিবেচনায় এগোতে হবে।’
রাখাইনে আবারও যুদ্ধবিরতির আশায় চীনা রাষ্ট্রদূত
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হওয়ার কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রদূত ইয়াও বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আরেকটি যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টা চালাচ্ছে চীন। তার মাধ্যমে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর আশা করছেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমরা জানি এখন আমরা কিছু জটিলতা মোকাবেলা করছি। তবে বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও চীনের যৌথ প্রচেষ্টায় প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে আমরা যে বেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছি, সে বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী থাকতে হবে।
‘মিয়ানমারের সঙ্গে কাজ করছে চীন। আশা করি, রাখাইনে আরেকটি যুদ্ধবিরতি পাব আমরা। আপনারা জানেন, চীনের মধ্যস্থতায় ইতোমধ্যে সশস্ত্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর সঙ্গে মিয়ানমারের একটি যুদ্ধবিরতি হয়েছে। সুতরাং আমরা আশা করি, রাখাইনে আরেকটি যুদ্ধবিরতি হবে। যার ফলে আমরা প্রত্যাবাসন খুব শিগগির শুরু করতে পারব।’
বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমরা বলেছি, রোহিঙ্গাদের পূর্ণ অধিকারসহ নিজ দেশ মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনই একমাত্র সমাধান। চীন এ বিষয়ে কাজ করছে এবং প্রত্যাবাসন যাতে শুরু হয় সে লক্ষ্যে কাজ করতে একমত হয়েছে। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বৈরী পরিবেশ নিয়েও আলোচনা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘চীন আমাদের গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন সহযোগী। চীন থেকে আমরা বেশি আমদানি করি, কম রপ্তানি করি। আমাদের রপ্তানি বৃদ্ধির আলোচনায় চীন বাংলাদেশ থেকে পাট, চামড়া, মাংস, সি-ফুড, মাছ এবং আম আমদানিতে আগ্রহ ব্যক্ত করেছে। জুলাই বা অগাস্ট মাসে আমরা আম রপ্তানি শুরু করতে পারি। চীন একটি বড় বাজার। সেখানে আমাদের পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার নিয়ে আলোচনা করেছি।’